অন্যদুর্গা —— তিন

দুর্গা কি বলি চায় ? বলি অর্থ কি? হত্যা না উৎসর্গ? কারা কেন সাদা পাঁঠা বলি দিয়েছিল, শুনুন

সাদা পাঁঠা বলি
তমাল সাহা

মানুষের জীবন দারিদ্র্য রেখার দুর্গতিতে দাঁড়িয়ে আছে। পরাধীন ভারতবর্ষ। সেই দুর্গতি নাশ করবার জন্য চাই অন্য চেতনা।

শ্রেণী সংগ্রাম। দুর্গতিনাশিনী দুর্গা তাই শুধু দশভুজা নয়, দশপ্রহরণী। আসুরিক শক্তির বিনাশ চাই। তাই দুর্গাকে অস্ত্র সংগ্রহ করতে হয়। দুটির বদলে দরকার হয় তার দশটি হাতের। মহিষাসুরমর্দিনী রূপেন সংস্থিতা। অস্ত্রই সেই শক্তি।

১৯১৫-১৬ সাল। গরাদের ভেতর বিপ্লবী ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত। যিনি লিখেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের উল্লেখযোগ্য বই ‘বিপ্লবের পদচিহ্ন’।

রাজশাহী জেল। তিনি তখন বিনা বিচারে বন্দী। স্টিভেনসন-এর কাছে দরবার করলেন বিপ্লবীরা। বাংলা গভর্নমেন্টের মুখ্য সচিব হিউজ স্টিভেনসন। পুজো চাই। দুর্গতিনাশিনীর পুজো।

মঞ্জুর হলো আবেদন। স্টিভেনসন কিছু টাকাও মঞ্জুর করলেন। জেল কর্মচারীরা রাজবন্দীদের সঙ্গে একসঙ্গে মিশে গেলেন।

জেল গেট লাগোয়া বাইরের দিকে তৈরি হলো পুজোমন্ডপ। অষ্টমীর দিন বারোশো কয়েদী বসলো একসঙ্গে। বিপ্লবীরা খাওয়ালো লুচি, আলুর দম আর মেঠাই।

বিপ্লবীরা দুর্গাপুজো নিয়ে যে কত কান্ড করে গিয়েছে তা আজকের মহা বিপ্লবীরা জানলে বা শুনলে তাদের চোখ ছানাবড়া যাবে।

১৯১৮ সালের মে মাস। এবারও পুজো হলো। তখন তার দায়িত্ব নিলেন আরেক বিপ্লবী যোগেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। তিনিও লৌহ কপাটের অন্তরালে। সেবার দুর্গাপুজোয় বলি হলো। কী বলি হলো? সাদা পাঁঠা।

সাদা পাঁঠা কেন?
ইংরেজরা ছিল সাদা মানুষ। তাই বলির পাঁঠাও নির্বাচন করা হলো সাদা।

এতই ছিল বিপ্লবীদের শ্রেণী ঘৃণা। এই শ্রেণী ঘৃণা ছিল বলেই তো ভারতবর্ষের মানুষের মুক্তির পক্ষে মাস্টারদাকে আমরা পেয়েছি।
পেয়েছি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে, পেয়েছি কল্পনা দত্তকে। পেয়েছি বাঘাযতীনকে, অম্বিকা চক্রবর্তীকে, গণেশ ঘোষকে।

উল্লেখ্য অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত সিং, গণেশ ঘোষ কাঁচরাপাড়ায়ও এসেছিলেন।
কাঁচরাপাড়া হয়েই তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার দেশ নারকেলবেড়িয়া গিয়েছিলেন।

কাঁচরাপাড়া রেলস্টেশনের বাইরে সংলগ্ন অঞ্চলে তাদের গণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। সেটা ছিল ১৯৪৬ সাল। রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে তারা সেবার কারামুক্ত হন। কারা সংবর্ধনা দিয়েছিল? কমিউনিস্ট পার্টি।কে কে ছিলেন তখন? অমূল্য উকিল,কুঞ্জ বসু,ননী সেন ও অন্যান্য কমরেডরা। উপস্থিত ছিলেন নগরের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব তুলসী দত্ত, মুক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

বিপ্লবীরা এই যে দুর্গাপুজো করেছিল তাতে কি তাদের জাত খোয়া গিয়েছিল? দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছিল?