সরস্বতী ও কুলগাছ
তমাল সাহা

শীতের শারীরিক আকুতিকে ঘনিষ্ঠ করে তার সর্বাঙ্গে উষ্ণতা ছড়িয়ে বঙ্গোপসাগর উপকূলে আকাশের গায়ে উঠে পড়ে সূর্য শ্রীপঞ্চমীর ভোরে।
কুমারীত্ব কেটে গেলে সরস্বতী লাবণ্যে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে …

কুলতো টক জাতীয় ফল।
নুন সহযোগে এর আসল স্বাদ শুধু নারীরাই জানে।
কুলের আচার গর্ভাধানকালে রুচি আনে
পিতামহী প্রপিতামহীরা কুলের আচারকে সৃজনের অনুষঙ্গ বলে মানে।

কুল না খেয়েও যারা পাশ করে বসে আছে অবস্থানে কলকাতার ময়দানে
দেখি দেবী সরস্বতী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে।
সরস্বতীকে তুড়ি মেরে তারা খুঁজে পায় অন্য এক নারী যদিও সে বৃদ্ধা তবুও সে তো মাতঙ্গিনী।
বাহনহীন সরস্বতীর হাতে নেই কোনো এসরাজ কলম বা বই‌।
সরস্বতী বলে, তোরা আমায় ছেড়ে গেলি বুঝি! এটাই হওয়া উচিত ছিল,
যা হবার কথা ছিল তা তো আমি হতে পারিনি।

রাষ্ট্রীয় পুলিশ পড়ুয়াদের টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে গেল কালো গাড়ির ভিতরে
রাষ্ট্রীয় বারান্দায় বেঁধে যায় বিশাল হইচই।
কী শীত নেমেছে উপত্যকায়! আমরা তো হতাশ। বিপ্লবী নেতারা সব গেল কই?

বিদ্যাং দেহি! মন্ত্রটি উবে গেছে।
পড়ুয়া বলে, লাগ বিদ্যা মোর কন্ঠে লাগ—
এসব ফালতু শ্লোক উচ্ছন্নে যাক।
কুল খেয়ে সাদা খাতা জমা দিলেও পরীক্ষায় করা যায় পাশ।
মুদ্রার জোরই আসল জিত। এই রাষ্ট্র প্রজাকল্যাণকর নাকি, এতো অর্থ পিচাশ!

তোর পুজো পণ্য এখন,পুজোয়ও টেন্ডার– কামাইবাজির কাহিনী।
প্রজন্ম তোকে ভুলে যাবে রে মা!
শ্রী পঞ্চমী– শুভ্র বসনা শ্বেতহংস বাহন তোর, তুই কি বিদ্যাদায়িনী?
ধেত্তরি, তুই সুদর্শনা দেবী!
গাঙ্গেয় প্রদেশে সরস্বত্যৈ নমঃ ভরাডুবি।

শিক্ষা ধর্ষিত শিক্ষার্থী ধর্ষিত। ধর্ষক কে?
সে তো শাসক-অসুর‌!
এই শীতের প্রহরে সবাই কি ঘুমিয়ে আছে, সবাই কি নিদ্রায় আতুর?
নেই কোনো রুদ্র বিভঙ্গে নৃত্য, আবহে বাজে না ভৈরবী সুর!

কন্টকাকীর্ণ শাখা প্রশাখায় সমস্ত ডালে টোপাকুলগুলি স্থির হয়ে ঝুলে আছে।
পড়ুয়ারা করেছে শপথ তারা আর কোনোদিন স্পর্শ করবে না এই স্বাদু ফল—
প্রণাম প্রকৃতি তোর কাছে।