সব মৃত্যুই দুঃখজনক
তমাল সাহা

ছন্দ তাল মাত্রার কবিতা আমি এখনো আয়ত্ত করতে পারিনি।
আমি দখলে আনতে পারিনি অমিত্রাক্ষর চতুর্দশপদী।
আমি করায়ত্ত করতে পারিনি পয়ার মাত্রাবৃত্ত এবং অনুপ্রাস উৎপ্রেক্ষা সমাসোক্তি।
তাহলে কী বাংলা কবিতার কিছুই শিখিনি?
শিখেছি ধ্রুবপদ নয়, হত্যাকাণ্ডের সাধারণ পংক্তিমালা ।

লোকটার জাত বর্ণ কী জানিনা, সে যা হোক শুনি পিছিয়েপড়া বর্গের মানুষ ছিল। মানুষটাকে মাথায় ছুরি মুগুর কাঠ দিয়ে আঘাত করে খুন করা হলো। মানুষটাকে পেটাই করতে করতে নাকি পাঁচটা বাঁশ ভেঙে গিয়েছিল। বাড়ির অদূরে দুটো পুলিশ ক্যাম্প ছিল। শুনি, মানুষটার বউ পুলিশ ছাউনিতে গিয়েছিল। হাতে পায়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে পুলিশকে বলেছিল, স্যার আমার স্বামীকে বাঁচান! বাঁচান!
পুলিশ নাকি বলেছিল, আমরা তোদের গোলাম নাকি তোরা বললেই যেতে হবে?
আমি সত্যি বলছি, এসবই আমার শোনা কথা। মানুষটার মেয়েটা ধরা গলায় মিডিয়ায় সবার সামনে এ কথা বলছিল।

অসহায় মানুষটাকে নির্মমভাবে খুন করা হলো।
মানুষটার ছেলে মুখ দেখিয়ে মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিতে ভয় পাচ্ছে।

নেতারা বলেছে যে কোন মৃত্যুই দুঃখজনক।

তোমরা বড় বড় কবি এই নরহত্যা কড় গুণে শব্দগুণে চতুর্দশপদীতে লেখো!

কেলেঘারি নদী ময়নার বাকচা গাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যায়।
উলঙ্গিনী নদী উন্মাদিনীর মতন আলুথালু জল ছড়িয়ে বলে,
আর কত মৃত্যু হলে দুঃখজনক শব্দটি হরিচরণ বাড়ুজ্যের শব্দকোষ থেকে উঠে যাবে রে?