অবতক খবর,২২ নভেম্বর,নদীয়া :- শান্তিপুরে বেশ কয়েকটি শিশুদের কিন্ডার গার্ডেন বিদ্যালয় থাকলেও, বহু পুরনো শিশু কাকলি বিদ্যালয়ের প্রতি ঝোঁক খুদে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের মধ্যে। তবে তবেই অতি উৎসাহ, এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইঁদুর দৌড়ে এগিয়ে রাখার প্রবণতা, আগ কলকাতা এবং বিভিন্ন শহরতলীতে দেখা গেলেও, শান্তিপুরে এই প্রবণতা তৈরি হয়েছে কয়েক বছর যাবৎ।

এবছর 2022 সালের শিক্ষাবর্ষে আগামীকাল অর্থাৎ নভেম্বর মঙ্গলবার নার্সারিতে ১০০ টি এবং কেজি ওয়ান এ ১০ জন ভর্তির বিজ্ঞপ্তি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করে আজ সকাল ১২ টায়। আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই দুপুর আড়াইটা থেকে, স্কুলের গেটের সামনে লাইন পড়া শুরু হয়, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যায় সেই সংখ্যা পৌঁছাঢয় প্রায় ৩০ জনের কাছাকাছি, রাত দশটার সময় অনেকেই এসে ফিরে যাচ্ছেন কারণ ইতিমধ্যেই আসন সংখ্যার থেকেও বেশি মানুষ রয়েছেন লাইনে। সেই লাইনে মহিলা বৃদ্ধ যেমন আছেন তেমন, বেশ কিছু অসুস্থ মানুষও আছেন। তারা অবশ্য কেউই বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষকে এর জন্য দায়ী করছেন না। তবে বাস্তব পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রাত্রিবাস কেও মেনে নিতে পারছে না।

শান্তিপুর ঘোড়ালিয়ার বাসিন্দা সত্তোর ঊর্ধ্ব সুরেশ শর্মা দুপুর আড়াইটায় এসেছেন নাতি ছেলেকে ভর্তি করানোর ফর্ম তুলতে, তবে তিনিই লাইনের প্রথম। তিনি বলেন, এই বিকেলের সুনাম আছে তার উপর তাদের বসবাস এলাকায় বিদ্যালয়ের গাড়ি পৌঁছায়, যার ফলে ঝোঁক এই বিদ্যালয়ের প্রতি।

শান্তিপুর বেরপাড়া থেকে আগত গৃহবধূ সঞ্চিতা সাহা শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই, স্কুলের গেটে রাত্রি বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন, তিনি বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একদিন আগে থেকে দাঁড়াতে না বললেও , অভিভাবকদের অতি উৎসাহে এ পরিস্থিতি। তবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই যদি উনারা নাম লেখানোর ব্যবস্থা করতেন তাহলে হয়তো কিছুটা সুরাহা হতো সাধারণ মানুষের।

বক্তার ঘাট থেকে আগত বিশ্বনাথ কুন্ডু পরিবারের নতুন পরওয়ার জন্য ফর্ম প্রকাশের সময় একবার এসেছিলেন বিদ্যালয়ে তবে, তিনি আন্দাজ করতে পারেননি রাত্রী দশটার মধ্যে সমস্ত পূরণ হয়ে যাবে। তাই ১২২ নাম্বার সিরিয়ালে নাম লিখিয়ে, অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তবে অভিভাবকদের মধ্যে নাম লেখালে কে উপস্থিত আছেন আর কে নাম লিখে বাড়ি গেছেন তা বোঝা দুঃসাধ্য তাই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে, নাম নথিভুক্ত করণ করলে সুবিধা হতো বলেই জানান তিনি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিহির সাহা, বলেন, বিদ্যালয়ের যথেষ্ট সুখ্যাতির জন্যই এ পরিস্থিতি, এর জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাউকে যাত্রী বাস করার কথা বলেননি, নিজেদের ভর্তি নিশ্চিত করতে উনারা উৎসাহিত হয়ে লাইন তৈরি করেছেন। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যদি আজ, বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পর নাম নথিভুক্ত করতো সেক্ষেত্রেও সমস্যা হতো, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে তা জানানো হয়নি কেনো! কেনইবা তড়িঘড়ি নাম লেখানো শুরু হয়েছে, দূর দূরান্ত মানুষকে জানানোর অবকাশ না রেখেই।

যদিও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীরাও নিজেদের পরিবারের খুদে সদস্যদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে ফর্ম নেওয়ার জন্য সারারাত প্রতীক্ষায় থাকছেন অন্যদের সাথেই। ভর্তি সংক্রান্ত স্বচ্ছতা থাকলেও, প্রশ্ন উঠছে নানাবিধ। তাহলে কি যথেষ্ট বিদ্যালয়ে নেই শান্তিপুরে! নাকি অন্য বিদ্যালয়ের প্রতি অভিভাবকদের গ্রহণযোগ্যতা নেই? সরকারি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রগুলির থেকেও কি এ ধরনের বিদ্যালয় এর শিক্ষার মান উন্নত হতে পারে?

প্রশ্ন অনেক হলেও, দুশ্চিন্তা একটাই বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতির নিরিখে বাবা-মা অভিভাবকদের কষ্টের এই অনুভূতি কি বড় হয়ে মনে রাখবে শিশুরা?