অবতক খবর,১৭ জুলাইঃ বারাকপুর শিল্পাঞ্চল শ্রমিক অধ্যুষিত জনপদ। সমগ্র ভারতবর্ষের শ্রমজীবী মানুষদের মিলনকেন্দ্রৎএই অঞ্চল। শ্রমিকের শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই। এই বাক্যবন্ধটিকে কর্জ নিয়ে এখন বাতাস বলে যায় শ্রমিকের লাশ ছাড়া আর কিছু নেই।

ব্যারাকপুর মহকুমার অন্তর্গত কাঁকিনাড়া,জগদ্দল, ভাটপাড়া অঞ্চল এখন বারুদ ঘরে পরিণত হয়েছে। চলছে বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ লুটপাট,পড়ে থাকছে মানুষের লাশ। পাওয়া যাচ্ছে ঐশ্বর্যশালী আগ্নেয়াস্ত্রের সম্ভার।

তেরো দিনে তিনটি লাশ

তমাল সাহা

এরপর তিনি আর থাকতে পারলেন না, বেরিয়ে পড়লেন রাস্তায়।

এটা তাঁর চেনা মহল্লা। চেনা বললে ভুল হবে, প্রতিটি লেন বাইলেন তাঁর নখ দর্পণে। তিনি হাঁটতে লাগলেন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন– রুস্তম ঘুমটি,পুরানী বাজার,আটচালা বাগান। চটকল, কুলি লাইন, বদলি, ভাগওয়ালা– এমন শব্দগুলি তার মনে পড়ে গেল। এই শব্দগুলির সঙ্গে তার নিজের জীবনও সম্পৃক্ত ছিল।

১৩ দিনে ৩টি খুন? এতো বারুদ! এতো আগ্নেয়াস্ত্র! এখানে কি বিপ্লবীরা ঘাঁটি গেড়েছে? আর নিহতদের মধ্যে রয়েছে শ্রমিক।

তিনি জানতে পারলেন প্রশাসনিক বাতাসেরও পরিবর্তন হয়েছে। মনোজ বাতাস ছুটে গিয়েছে উত্তর অভিমুখে কলকাতার দিকে। এখানে এখন পরিবর্তিত বাতাস। এসেছে প্রশাসনিক নতুন অজয় বাতাস। তিনি ভাবলেন মনে মনে জন্ম হয় যার সেই তো মনোজ। অজয় মানে কি? এ বাতাস কি তাহলে অজেয়? বাতাসেরও এমন সব নাম হয়? তাহলে

এরই মধ্যে তিনটি খুন কেন? ২ জুলাই ১২ নম্বর গলিতে প খুন হয়ে গিয়েছে মহম্মদ সালাউদ্দিন, ৩ জুলাই ২৬ নম্বর রেলগেটে পড়েছিল রোহিত দাসের মৃতদেহ, ১৫ জুলাই রুস্তম গুমটিতে গুপড়ে রইল রিজানুর আলির লাশ!

শ্রমিক খুন হতে যাবে কেন? হতে পারে তাদের দাবি রয়েছে, রয়েছে হকের মাঙ্। রাষ্ট্রীয় লড়াইয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়। কিন্তু এ তো দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত এক লাশ পড়ে রয়েছে। এ তো শ্রমিক মহল্লা, এখানে এ পাড়ায় এত বোমা বারুদ মজুত কেন? এতো পিস্তল এত আগুন ঠিকরোনো যন্ত্রপাতি!

তিনি জগদ্দল উপাখ্যানটি খুলে দেখলেন। সেখানে তো শুধু জীবন যুদ্ধের ছবি।

তিনি দেখলেন সেই একই অবস্থা বজায় রয়েছে। শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে এখনো তেমন কোনো মানুষ নেই।

তিনি শুধু তাকিয়ে রইলেন উদ্ধার হওয়া বারুদের স্তূপের দিকে,আর ১৩ দিনে ৩টি লাশের মুখের দিকে। ভাগীরথী উপকূলে রক্তস্রোতের সঙ্গে সূর্যের প্রতিফলিত আলো মিশে রয়েছে।