অবতক খবর,২৬ সেপ্টেম্বর,নদীয়া,শান্তিপুর:- বনেদি বাড়ির দূর্গাপুজো বলতে গেলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য মন্ডিত শান্তিপুর জজ পন্ডিত বাড়ির প্রতিমার ছবি। ঠাকুর দালানের পঞ্চমুন্ডির আসন, আলপনা, ঢাকের আওয়াজ, টগরের আওয়াজ, আলোকসজ্জা ও পুরনো স্মৃতিচারণে ফানুসের ঝাড়বাতি,মা দূর্গার টানা টানা চোখ, একচালা ঠাকুরের মৃন্ময়ী রূপ দর্শন। জানা গেছে এই চট্টোপাধ্যায় পরিবার আদতে চৈতল মাহেশের বংশ।

গয়ার যদুয়া গ্রামে এনাদের জমিদারি ছিল বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যা সঞ্চারী চ্যাটার্জি। সঞ্চারী এও জানান জমিদারি বংশের ত্রয়োদশ পুরুষ স্বর্গীয় পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায় ব্রিটিশ আমলে তর্কবাদের উপাধি পান। সেই থেকেই জজবাড়ীর রাস্তার নাম হয় তর্কবাগীশ লেন। যা বর্তমানে তর্কবাগীশ লেনে জজ বাড়ি নামে পরিচিত। স্বর্গীয় পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায়, গিরিশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মহিমা রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, হাজারী লাল চট্টোপাধ্যায় সঞ্চারীর ঠাকুরদা গত হওয়ার পর বর্তমানে তাঁদের বংশধর এবং উত্তরসূরীরা এখন সেই বহু বছরের স্মৃতি বিজড়িত শক্তির আরাধ্য দেবী মা দুর্গার একনিষ্ঠ ভাবে পূজার্চনা করে আসছেন।

সঞ্চারী এও জানান, দেবী পুরান মতে বা কালিকাপুরাণ মতে পঞ্চমুন্ডির ওপর অতি নিষ্ঠার সাথে এই পুজো, আমরা ধারাবাহিকভাবে আজও করে আসছি। সপ্তমীর দিন মাকে আমরা নিরামিষ ভোগ দিয়ে থাকি। অষ্টমীর দিন ইলিশ মাছ সহ আরো অন্যান্য ভোগ আমরা দিয়ে থাকি। নবমীর দিন কচুর শাকসহ ১৭ আসল রকমের ভোগ দেওয়া হয়। এবং বিগত দিনে এই নবমীর দিন জমিদারি আমলে 108 টা মোয বলি ও ২৮ টি পাঁঠা বলি হত।

তবে এখন আর এই চল নেই। তার পরিবর্তে এখন কুমড়ো বলি হয় এবং বিগত কয়েক বছর আগে এই নবমীর দিন কর্দমাক্ত উৎসব পালন করা হত। বাইরে থেকে প্রচুর ছেলেরা বাজনা বাজিয়ে আসতেন গায়ে কাদা এবং জল মেখে। দুর্গাপুজোর যে মন্দির আছে নাট মন্দিরের মাঠে তারা এই কর্দমাক্ত উৎসব পালন করতেন, এবং তারা প্রচুর উপহার পেতেন যা বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ আছে। দেবী দুর্গা দশমীর দিন পান্তা ভাত খেয়েই কিন্তু কৈলাসে যান। আমাদের এই দেবী দুর্গা বিগত কয়েক যুগ ধরে তৈরি করে আসছেন অজিত কুমার পালের বংশধর। অতীত থেকেই মায়ের সাজসজ্জা আসে কাটোয়া থেকে।

এছাড়াও আমরা মাকে সোনা রুপোর গয়না দিয়ে সুসজ্জিত করে থাকি। সঞ্চারী আমাদের এও জানান যে একটা কথা না বললেই নয় যে পাটের নিচে পঞ্চমুন্ডির আসনটি আছে তা সম্পূর্ণ মাটির তৈরি। যেখানে আমি অতি নিষ্ঠার সঙ্গে উপবাস করে আলপনা দিয়ে থাকি। অতীতে ইতিহাস সাক্ষী জমিদার বংশের অনেকেই এটাকে মার্বেল দিয়ে বাধাবার চেষ্টা করে ছিলেন কিন্তু শ্রমিকেরা কোন দৈবশক্তির ভয়ে কাজটি সম্পন্ন করতে পারেননি। এই বেদীর তলায় অনেক সম্পদ আছে বাড়ির অনেক পূর্বপুরুষ এই সম্পদ তুলতে গিয়ে প্রাণ হারান।

জমিদারি আমলে যে আড়ম্বর ছিল সেই আড়ম্বর এখন কিছুটা হলেও ম্লান। সেই কথা বলতে গিয়ে বিষাদের সুরে সঞ্চারী বলে যে প্রতিবারের ন্যায় এবারে ও পুজো হবে মা দুর্গতিনাশিনী পরিবারের ন্যায় এবারেও আসছেন সবার দুঃখ বিনাশ করতে। তবে জমিদারি আমলে যে আড়ম্বরটা ছিল সেটা কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। তবে আমাদের ভক্তি নিষ্ঠা আর ঐতিহ্যের যে পরম্পরা তা আজও অমলিন হয়ে আছে। তাই জনমানষে এই পুজোর আকর্ষণ কমেনি এতটুকু ও। মানুষের ঢল নামে আজও এই পুজো দেখতে এবং আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে এই পুরোটা চালিয়ে আসছি।