অবতক খবর, বীরভূমঃ  শান্তিনিকেতনের বিদেশী পড়ুয়ারা সাইকেল নিয়ে ভ্রমণে বের হলেন ।  ৮  শিক্ষক অর্পণ মুখার্জ্জির তত্ত্বাবধানে বৃস্পতিবার সকাল ৬:৩০মিনিটে শান্তিনিকেতন থেকে তারা বাই সাইকেল নিয়ে পাড়ি দেয় বিভিন্ন জায়গায়। প্রথমে তারা মোহাম্মদ বাজার থানার অন্তর্গত ডামরা গ্রামের শিব পাহাড়ী মন্দিরে পরিদর্শন করেন , তার পরেই চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গ লাগুয়া ঝাড়খণ্ড মুলুটি গ্রামে এবং পরে তারা যাবেন ম্যাসাঞ্জোর থেকে লোকপুরে কাছে ময়না ডাল । তারা মুলুটি গ্রামটির সমস্ত মন্দির ভালো ভাবে দেখেন । এই মুলুটি গ্রামটিতে শুধু মন্দির গুলো নিয়েই নয় গ্রাম সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য লুকিয়ে রয়েছে , আমরা জেনে নিব একটু মুলুটি সম্পর্কে!

মুলুটি একটি মন্দিরময় না দেখা গ্রাম, রামপুরহাট থেকে ১৫ কিমি দূরে সুরিচুয়া মোড় বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানায়। যে রাস্তায় রামপুরহাট থেকে বিহারের দুমকা বাসে যাওয়া যায়। সুরিচুয়া মোড় থেকেই হিন্দি সাইনবোর্ডের ছড়াছড়ি। এই মোড় থেকে বাঁদিকে ১০ কিমি দূরে এক আদিবাসী জনপদ এলাকা মুলুটি গ্রাম। শান্ত, স্নিগ্ধ গ্রামীণ পরিবেশ। পূর্বে নাম ছিল মল্লহাটি।  যোগাযোগহীন ও লোকচক্ষুর অন্তরালে, বহুদূরে।

সুরিচুয়া মোড় থেকে মুলুটি আসতে গেলে কোনো গরুর গাড়ি, সাইকেল ভ্যান, অটো, ট্রেকার বা বাস পাওয়া যায় না। মুলুটি আসতে গেলে স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসতে হয়। দূরে একটি সরু পাকা রাস্তা দেখা যায়। এই স্থানে বহু বছর আগে এয়ারপোর্ট এলাকা ছিল। কিছুটা গিয়েই মা মৌলীক্ষার মন্দির।

শ্রী শ্রী মাতা মৌলীক্ষার মন্দির।  ASI  দ্বারা সংরক্ষিত ও পরিচালিত। মৌলীক্ষা তারাপীঠের তারামায়ের সহোদরা ছিলেন বলে কথিত আছে। মৌলীক্ষা কথাটির উৎপত্তি দুটি শব্দ থেকে, মৌলী (মাথা) ও ইক্ষক্স (দৃশ্যমান)। মৌলাক্ষী মায়ের কোনো শরীর নেই, শুধু একটি লাল রঙের মাথা ল্যাটেরাইট পাথর দিয়ে তৈরি মন্দির গৃহের মেঝেতে শায়িত আছে। এখানে ভক্তরা পুজো দেয়। মন্দির প্রাঙ্গণে একটি শিবমন্দির, একটি বামাখ্যাপার সাদা মূর্তি বসানো মন্দির ও আর একটি মন্দির আছে। এই প্রধান মন্দিরের আশেপাশে সমগ্র মুলুটি গ্রামে ১০৮টি শিবমন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, এক মাইল এলাকা জুড়ে। বর্তমানে ৭২টি মন্দির অবশিষ্ট আছে।

মুলুটি গ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে ১৫ শতকের গৌড়ের অধিপতি আলাউদ্দিন হুসেন শাহ-এর নাম বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে। একবার গৌড়ের সুলতানের পোষা বাজপাখি হারিয়ে যায়। এই অঞ্চলের বসন্ত নামে এক যুবক সুলতানের সেই হারিয়ে যাওয়া পোষা বাজপাখিকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতিদান স্বরূপ সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ মুলুটি গ্রাম বসন্তকে দান করেন। তখন থেকে সেই যুবক বসন্ত ‘বাজ বসন্ত’ নামে পরিচিত হন। বসন্তের উত্তরাধিকারীগণ পরে নিজেদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে নেয় এবং নিজ নিজ সাধ্যমতো গুচ্ছ গুচ্ছ মন্দির নির্মাণ করতে থাকে। এখন ৭২টি মন্দিরের অবশিষ্টাংশই দেখতে পাওয়া যায়। মন্দিরগুলির গায়ে টেরাকোটার ছাঁচের কাজ রয়েছে। সেখানে রামায়ণের কাহিনীর বিভিন্ন মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে, রয়েছে দেবী দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী ও ছিন্নমস্তার মূর্তির চিত্রও।

আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামে অন্য ধর্মাবলম্বীদের বসবাস নেই বললেই চলে। তবে এখানে বাংলা ও হিন্দি যৌথ ভাষার মানুষ বসবাস করে। কার্তিক মাসের কালী পুজোর সময় বহু ভক্তের আগমন ঘটে। গ্রামের বসবাসকারী যারা কাজের জন্য বাইরে থাকে তারা ফিরে আসে এই সময় উৎসবের আনন্দ নিতে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িই মাটির তবে টিনের চাল দেওয়া। ইতিহাসের কোলে হারিয়ে যেতে বসা এই মৌলীক্ষার মন্দিরগুলি দেখলে মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।