অবতক খবর,২৫ এপ্রিল: মলয় ঘোষ,এই নামটি এখন বীজপুরের প্রায় ছোট বড় সকলেই জানে।‌ কথা দিয়ে কথা রাখেন তিনি। যেমনটা শোনা গিয়েছিল এই লকডাউন পিরিয়ডে ২৪ এপ্রিল থেকে তিনি কাঁচরাপাড়া শহরের সকল দুঃস্থ অসহায়দের মুখে খাবার তুলে দেবেন তিনি। যেমন কথা তেমন কাজ।‌ গতকাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে তার নিরলস সেই প্রচেষ্টা। লকডাউনের শুরুতে প্রচুর মানুষকে দেখা গেছে দুঃস্থ অসহায়দের সাহায্য করতে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সকলেই প্রায় হাত গুটিয়ে নিয়েছেন।

লকডাউনের সময়সীমা বাড়তেই কমতে থাকে সহযোগিতার হাত। তবে হাল ছাড়েননি সমাজকর্মী মলয় ঘোষ। লকডাউন শুরুর প্রথম থেকেই দুঃস্থ অসহায়দের পাশে ছিলেন তিনি। কিন্তু মাঝে তার নজরে আসে যে,জ্বালানি এবং মশলাপাতির অভাবে ধুঁকছে দরিদ্র অসহায়রা। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে,এই সমস্যা সমাধানের একটিই উপায়। আর তা হল রান্না করা খাবার। সেইমত তিনি কাজ শুরু করলেন।

প্রথমে তিনি জানান যে, তিনি ২৪ তারিখ থেকে শহরে প্রতিদিন প্রায় ১২০০ মানুষের খাবার দেবেন। কিন্তু খাবার বিতরণের সময় দেখা গেল সেই সংখ্যাটা ১৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। এই সংবাদ পেয়েই সেখানে গিয়ে পৌঁছান আমাদের সংবাদ প্রতিনিধি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়,১৪০০ মানুষের খাবার তৈরি হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।

অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে তৈরি হচ্ছে খাবার। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হতেই পারে এ যেন বিয়ে বাড়ির আয়োজন। ২৪ তারিখ খাবারে ছিল ডিম,ভাত। আর আজ অর্থাৎ ২৫শে এপ্রিল খাবারে ছিল এঁচোড়ের তরকারি এবং ভাত। এরপর খাবার যেখানে প্যাকেট হচ্ছে সেখানে আমাদের প্রতিনিধি যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায় মুখে মাস্ক এবং হাতে গ্লাভস্‌ পরিহিত কিছু মানুষ সেই রান্না করা খাবার প্যাকেট করছে। আর ঠিক তার পাশেই দেখা গেল, আগামীকাল কি রান্না হবে তার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এরপর মলয় বাবু আমাদের নিয়ে যান গোডাউনে। যেখানে চাল,ডাল,শাক সবজি যাবতীয় মজুত রয়েছে।‌ উল্লেখ্য,মলয় বাবুর এই আয়োজনের কথা শুনে অনেকেই বলেছিলেন যে, তিনি হয়তো রেশনের চাল মানুষকে খাওয়াবেন। কিন্তু গোডাউনে গিয়ে দেখা যায় যে, বস্তার পর বস্তা মিনিকেট চাল রয়েছে সেখানে। তিনি বলেন,’২৪ তারিখ থেকে আমি এই কাজ শুরু করেছি। আর যতদিন পারব,যতটা আমি মানুষের সেবা করব। তবে ব্যবসায়ীরা যদি সহযোগিতার হাত বাড়ান তবে আমি আরও ভালোভাবে এগোতে পারব।’ এরপর মলয়বাবু আমাদের নিয়ে যান সেখানে যেখানে খাবার হওয়ার পর খাবারের গুণগত মান যাচাই হচ্ছে। সেখানে মলয়বাবুর কাছের কিছু মানুষ ছিলেন যারা এই তৈরি করা খাবার টেস্ট করছেন। তারা দেখছেন খাবারে নুন,ঝাল সবকিছু ঠিক আছে কিনা।

এরই মাঝে সেখানে চলে আসেন স্থানীয় কিছু নেতারা। তাদেরকে প্রশ্ন করা হয়, সবকিছু কি ঠিকমত চলছে? ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কি মানুষ ঠিকঠাক খাবার পাচ্ছেন? এর উত্তরে তারা বলেন,’ঠিক যেমন পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সবকিছু পরিকল্পনা মাফিকই চলছে। এখানে খাবার তৈরি এবং প্যাকেট হচ্ছে। এরপর তা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলে যাচ্ছে। সেখানে থেকে কাউন্সিলরদের দ্বারা সেই খাবার চলে যাচ্ছে মানুষের মধ্যে। আর সেই খাবারের গুণগত মানও যথেষ্ট ভালো। একদম বাড়ির খাবারের মত। এত মানুষের খাবার এক জায়গায় তৈরি হচ্ছে, তবুও কোথাও এতটুকু অভিযোগের জায়গা নেই। এরপর আমাদের প্রতিনিধি ঠিক করেন যে,এই সমস্ত আয়োজন যাতে সাধারণ মানুষ দেখতে পান সেই ব্যবস্থা করতে।

কিন্তু এখানে বাধা দেন মলয় বাবু। তিনি বলেন,”আমি প্রচার বিরোধী। মানুষের সেবা করাটাই আমার মূল উদ্দেশ্য। আমি প্রচার পাওয়ার জন্য বা অন্য কোন স্বার্থে এই কাজ করছি না। এই দুঃসময়ে আমি মানুষের একবেলা পেটে ভাত দিতে পারছি এটাই যথেষ্ট। আমার নাম,যশ,খ্যাতি কোনকিছুরই প্রয়োজন নেই। মানুষ সবটা জানেন এবং আমাকে ভালোবাসেন। যারা এই খাবার মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে আমি তাদের এটাই কথা বলছি যে,যথা সময়ে মানুষের কাছে তোমরা খাবার পৌঁছে দাও। কে দিল,কিভাবে দিল সেসব কোনকিছু বলার দরকার নেই। কারণ এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষের পেট ভরানো। প্রথম দিন খাইয়েছি ১২০০ মানুষকে। কিন্তু দেখা গেল কিছু মানুষ রয়ে যাচ্ছেন। আজকে সেই সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়ে ১৪০০ হল। এটাই আমার ভালো লাগল। এটাই আমার পাওয়া। মানুষের প্রয়োজন বুঝেই আমি সমস্ত ওয়ার্ডে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি।‌ মানুষ আমাকে ভালোবাসছেন আর্শীবাদ করছেন। আর তাদের আর্শীবাদ এবং ঈশ্বরের কৃপায় আমি যেন এইভাবেই মানুষের সেবা করতে যেতে পারি।”