শব্দে সাজাই ধর্ষিতার আর্তনাদ
তমাল সাহা

তারপর–এই শব্দটি সৃষ্টি হয়েছিল কেন?
তারপরও কিছু থেকে যায়! কি থাকে?
আগুন ও উল্লাসের পর উত্তেজনার জোশ আরো বাড়ে।
তখন তো আর দুটি কাজ শুধু থাকে বাকি। ধর্ষণ ও হত্যায় কেঁপে ওঠে এই উপত্যকার মাটি।

নগ্নতার সৌন্দর্য ভেঙে ফেলে ভারতবর্ষ তখন কুশ্রী কদর্য উলঙ্গ।
বাতাস বলে ন্যুডি আর ন্যাকেডের তফাৎ কোথায় তোমাকে শেখাই, এসো তুমি শেখো।

ভারতবর্ষ তখন দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত। গাছের আড়াল রেখে বিস্তীর্ণ মাঠে হাত পা ছড়িয়ে পড়ে থাকে।
দেখে দাঁড়িয়ে আছে তিন জোড়া ভাই
দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষায় চাচা ভাইপো।
ছোট ভাই না বড় ভাই কে আগে?
চাচা আগে না ভাইপো আগে বা কে পরে?
কারা আছড়ে পড়বে যৌন আক্রোশে পরপর….
ক্রমাগত ধর্ষিতা ভারতবর্ষের উপর।

ধর্ষণের ধর্ম নেই, ধর্ষণই তখন শুধু ধর্ম। ‌
তখন অন্ত্যজ দলিত উচ্চবর্ণের কোনো ফারাক নেই।
তখন কে ক্ষৌরকার কে ব্রাহ্মণ কোনো তফাৎ নেই।
তখন স্পর্শ ছোঁয়াছুঁয়ির কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। ‌
শুধু তোমার ধর্মত্বের পরাক্রম প্রদর্শন করো
সংখ্যালঘু ধর্মের নারীর দেহে নিজের দেহ বলপূর্বক অনুপ্রবিষ্ট করো।

বিলকিস বলেছিল, ধর্ষকদের সে চেনে। তারই পড়শি তারা। দাহোড়ের সিংভাদ গাঁয়ে থাকে। সে তো মোষের দুধ বিক্রি করত তাদের ঘরে ঘরে।
কাউকে চাচা,কাউকে দাদা বলে ডাকে।
হিংস্রতায় দেহ ভোগে কি আর পরিচয় ও স্নেহের সম্পর্ক থাকে?

বিলকিস বলেছিল, পাঁচ মাসের প্রজন্ম আমার পেটে।
বাছা আমার মরে যাবে,
পরপর এগারো জনের দাপটে–
বারবার জানিয়েছি তাদের।

তাতে কি আসে যায়! ভাইপোর সামনে চাচা উল্লাসে মাতে।
ছোট ভাইয়ের সামনে দাদা নারী মাংস খুবলে খায়
কে লজ্জা পাবে, কেন লজ্জা পাবে,
তবে যে বলাৎকারের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। ‌
এও পরপর মুখিয়ে আছে, কার হবে কতক্ষণে শেষ
পালা করে ধর্ষণ চলে হায়!

শোনো, ভারতবর্ষ!

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অমৃত উৎসব পালন করেছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র বলেছে নারী শক্তি জাগরণের কথা। হায়! ভারতবর্ষ। বিলকিসের ধর্ষকেরা ছিল ১১ জন। তার মধ্যে নরেশ মোধিয়া ও প্রদীপ মোধিয়া,শৈলেশ ভাট ও নীতেশ ভাট,কেয়ারভাই ভোহানিয়া ও বাকাভাই ভোহানিয়া– এরা ছিল পরস্পর ছয় ভাই। যশবন্ত নাই ও গোবিন্দ নাই– এই ধর্ষকেরা ছিল পরস্পর চাচা-ভাতিজা। বাকি ধর্ষকদের কেউ ছিল শিক্ষক কেউ ছিল আইনজীবী, কেউ ছিল স্বঘোষিত সমাজকর্মী, কেউ ছিল স্বঘোষিত ডাক্তার। তখন কে নাপিত,কে বামুন,কে দাদা, কে ভাই ,কে চাচা, কে ভাতিজা– তার কোনো পরিচয় নেই। পরিচয় শুধু তারা ধর্ষক। ‌তখন শুধু তারা হিন্দু ধর্ষক আর ধর্ষিতা একজন পাঁচ মাসের পোয়াতি মুসলিম নারী।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ধর্ষকরা ছাড়া পেয়ে গিয়েছে স্বাধীনতার অমৃত উৎসবকালে। তারা সংবর্ধিত হয়েছে তিলকে ও মালায়। ভারতবর্ষ, হে জননী আমার! দ্বিখণ্ডিত হও। আমি নরকে যাবো।