শব্দগুলি ফুলকি হয়ে যাবে
তমাল সাহা

আমি মুখ খুললে
কিছুতেই তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবো না
তোমার গালের তিলটি কতটা উঁচুতে থাকলে ভালো হতো আমি বলবো না
আমি তোমার ওষ্ঠে এতো ঘন ঘন ভাঁজ কেন সে কথা বলবো না
তোমার স্তনের গায়ে কোনো মদির ঘ্রাণ আছে কিনা আমি সে কথা বলবো না
বুকের উপত্যকা কতদূর চলে গেছে
সেখানে কোনো জলপ্রপাত আছে কিনা সে কথা আমি বলবো না
নীরব কথার অনেক গভীরতা থাকে সে আমি শুনেছি
তার অতলান্ত কোথায় আমি জানি না

আমি মুখ খুললে বলবো
প্রচণ্ড শীতে কাবু হয়ে পড়েছে বস্তির মানুষগুলি
সেখানে লেপ চাদর কম্বল যতটা পারো পাঠাও
আমি মুখ খুললে বলবো
ঝড় আসছে যাদের বাড়িঘর বাঁশের বেড়া আর টালির চালা তা উড়ে যাবেই
আর ওদের তো এমন জামা কাপড় নেই যে বাইরে শুকোতে দিয়েছে ছাদ থেকে নামিয়ে আনতে বলবো
শেষ পর্যন্ত কজন মানুষ মারা যাবে আমি তো জানি না
আমি সেখানে সফর বাতিল করে ত্রাণ পৌঁছে দেবার কথা বলবো
আমি মুখ খুললে বলবো
অনাহার হুমড়ি খেয়ে পড়েছে রামসীতা পাড়ায়
সেখানে অন্ততপক্ষে লঙ্গরখানা খুলে দাও
আমি মুখ খুললে বলবো
বেআইনি ফ্লাট ভেঙে পড়লো
চাপাপড়া মানুষগুলো তো মরেই গেছে ওদের কথা ভেবে আর লাভ নেই
যারা তাদের মারলো তারা তো খুনি
খুনের বদলা তোমাকে নিতেই হবে
কখন কিভাবে নেবে সেটা তোমার বিষয়

আমি মুখ খুললে বলবো
নীল সাদা আলোয় ভেসে যাচ্ছে রাস্তাঘাট

যারা খদ্দের কিনছে বুকের আঁচল সরিয়ে
তাদের পেটের খবর আমি জানি
তাদের পেটের নিচে নয়
পেটের ভেতরে আগুন জ্বলছে

আমি মুখ খুললে বলবো
শরীরের সব অঙ্গ-উপাঙ্গের নাম আমি জানি
কিন্তু তাদের নাম আমি প্রকাশ্যে বলবো না
রাজা বুক উঁচিয়ে ন্যাংটো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়
বড় কবি সভ্য ভাষায় তাকে উলঙ্গ বলেছিল

আমি মুখ খুললে বলবো
পৃথিবীর তিনভাগ জল এক ভাগ স্থল
জলের কথা তোমাকে ভাবতে হবে না
তুমি আগুন জ্বালানোর কথা ভাবো
আমি বলবো
বারুদ নিয়ে মুখিয়ে থাকা দেশলাই কাঠিগুলির কথা ভাবো

শিউলি গাছ থেকে শিউলি ফুল, বকুল গাছ থেকে বকুল ফুল, পলাশ গাছ থেকে পলাশ ফুলই ঝরে পড়বে
আমি মুখ খুললে ফুল ঝরে না পড়ুক শব্দগুলি বুকে ফুলকি নিয়ে ছড়িয়ে পড়বে…