এইসব কবিরা একদিন বঙ্গোপসাগরীয় উপত্যকায় দাপটের সঙ্গে হেঁটেছিল

কবিতায় রেখে গিয়েছে স্পর্ধা ও দাগ
নিহিত ছিল পংক্তিমালায় রাগ ও অনুরাগ।

শক্তি বিষয়ক
তমাল সাহা

শক্তি! তুই বেঘোরে মদ খেতিস
অরণ্য ভালো লাগতো তোর
চাইবাসা নামটি তুই ছড়িয়ে দিয়েছিলি।
মদ খাওয়ার বিষয়টি তুই নিজেই স্বীকার করেছিলি–
পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে
রাস্তা হাঁটছে পা রয়েছে স্থির
খুব অস্থির হয়ে সোনার মাছি খুন করেছিলি।

আনন্দ বাজারে বাজারি পত্রিকায় তুই ছিলি
তুই ছিলি বুর্জোয়াদের দেশে।
সবাই লিখতে পারেনা কবিতা,
তুই বলেছিলি অবশেষে।

তা যাই হোক
তুই হেমন্তের অরণ্যে পোস্টম্যান হতে চেয়েছিলি।
পুরনো হলুদ হয়ে যাওয়া চিঠির কথা বলেছিলি
কিন্তু নতুন কোন সংবাদ দিতে পারিস নি তুই।
আমাদের আরো ভালোবাসা
আরো চুম্বনের প্রয়োজন আছে
একথা তুই শুনিয়েছিলি।

তোর কথা তবুও প্রবাদ হয়ে গেছে।
মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও–
এই মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও,
এই মানুষ হওয়ার বিষয়টা কিন্তু তুই
তেমন করে জানাস নি।
আর তুমি বলে ছেড়ে দিয়েছিলি।
তুই নিজে দাঁড়াবি কিনা বলিস নি
নাকি ওই তুমির মধ্যে তুইও লুকিয়ে ছিলি?

কখন যে কী বলিস তুই
মাথামুণ্ডু বুঝিনা কিছুই—
ভাত নেই পাথর রয়েছে….
ঐতিহ্যমণ্ডিত দেশের পাথর যদি ছেদরে রায়, বিদেশ কী কবে?
এর মধ্যে আবার বারুদ কি করে আসে!
তুই লিখিস,
মানুষ বারুদ খুবই ভালোবাসে, ধূপগন্ধ যেন।

ভালোবাসা পেলে সব লণ্ডভণ্ড করে চলে যাবো–
যাবি তো যা! তোকে ভালোবাসা দিতে লোকের বড় বয়েই গেছে! এতো ইচ্ছে কেন তোর? কবি ও কাঙাল দুই-ই হতে চাস?
এমন কি কোন অঙ্গ আগে, কোন অঙ্গ পরে পুড়বে তাও বলে যাস!

তুই তো মরে গিয়েছিস
তবুও তোর কথা ঘুরে ফিরে আসে।
তোর কত পংক্তি মাথায় ঘোরাফেরা করে–
ধর্মে আছো জিরাফে আছো, এর মধ্যে কোন বৈপরীত্য লুকিয়ে আছে তুই খোলসা করিস নি।
অবনী বাড়ি আছো?
অবনী কে, তুইও তার ডাক শুনেছিলি
কিন্তু অবনী বলতে কী বোঝায়
সেই রহস্য কেন রেখে গেলি?

কোন আশ্চর্য উচ্চারণে
তুই বলেছিলি, প্রভু নষ্ট হয়ে যাই!
এই প্রভু কে, কোথায় থাকে, নষ্ট বলতে কি বোঝায়—
স্পষ্ট করে বলিস নি তুই
তবে তুই নষ্ট হতে চেয়েছিলি, এইটুকু বুঝেছি।

কি দেখে বলিছিলি তুই
তুমি গেছো,স্পর্ধা গেছে, বিনয় এসেছে–
স্পর্ধা গিয়ে এই বিনয় যে কোনোমতেই ভালো নয়
এতো সহজে কি করে বলিস তুই,
আমার যেন কেমন ঘোর লেগে যায়!

তুই তো নিজেই দেখেছিলি
যুবকের লাশ পড়ে আছে নর্দমায়।
ওরা শুধু বিপ্লব চেয়ে মরে গেল–
রেখে গেল অধ্যায়।
এর জন্য তুই খুব কষ্ট পেয়েছিলি
এবং অনেকেও পেয়েছিল বোধহয়।
তোর এই পদ্যটি কবিতা হয়ে অনেক পাঠ্যবইয়ে ছাপা হয়।

তবে তুই বলেছিলি,
যেতে পারি কিন্তু কেন যাব
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমু খাব—
এটা যে তোর আশা ছিল অল্প হলেও
আমি বুঝতে পেরেছিলাম।
তোর এই কথার জোর অনেক অনেক বেশি
আমাকে কেন সবাইকে ভাবায়
জল নেমে আসে চোখের পাতায়।

তবে খুব দুঃখ হয় কেন জানিস
অদ্য মদ্য অনেকেই খায়।
তোর মতো পদ্য আর লেখে কি কেউ?
জানিনা, তবে জানি
তোর চেনাজানা কবিদের কেউ কেউ
হয়ে গেছে শাসকের ফেউ!