লাশ গায়েব / তমাল সাহা

লোকটার মৃত্যুদিন আর বিবেকানন্দের জন্মদিন অদ্ভুতভাবে একই তারিখ হয়ে যায়।আজ ৮৬:বছর হলো একটি মহান লাশ গায়েব হয়ে গিয়েছে। আমরা কি মনে রাখি বা রেখেছি তাকে? শুনুন

লাশ গায়েব
তমাল সাহা

একটা লোকের লাশ
গায়েব হয়ে গিয়েছে।

একটা লোককে
জেলের ভেতর অকথ্য
অত্যাচার করা হয়েছিল।
তার হাড়গোড় ভেঙে
দেওয়া হয়েছিল।

একটি বিপ্লবের জন্য
কত দাঁত ও নখ উপড়ানোর
প্রয়োজন আমি জানি না,
তাঁর কুড়িটি নখ ও বত্রিশটি
দাঁত উপড়ে নিয়েছিল রাষ্ট্র
যাতে বিপ্লব শব্দটি
উচ্চারণ না করতে পারে
যাতে রাইফেল না ধরতে পারে।

একটা লোককে গারদেই
খুন করা হয়েছিল।
একটা লোকের
মৃতদেহ ফাঁসিকাঠে
ঝোলানো হয়েছিল।

পৃথিবীর এটি
আশ্চর্যতম ঘটনা।
একটা লোককে
শহিদের মৃত্যু থেকে
বঞ্চিত করা হয়েছিল।

লোকটার শরীর তৈরি হয়েছিল
বোমার স্প্লিন্টারে
আর গান মেটাল দিয়ে।
লোকটার মনে ছিল
বারুদের মতো
বিস্ফোরণের আকাঙ্ক্ষা।

লোকটা প্রীতি ও কল্পনাকে
তৈরি করেছিল।
লোকটা কী করেছিল?
প্রীতি ও কল্পনা কী করেছিল?
সে তো দুনিয়ার আশ্চর্যতম,
দুর্ধর্ষতম ঘটনা।
পরতে পরতে
সাহসিকতার বিস্ময়!
তা এত বিশাল এই মুহূর্তে
বিশদে বলা যাবে না।

দুনিয়ার এই একটি মানুষ
যার সমস্ত জীবন চলমান ও
মৃত্যুর ঘটনাও আলোড়ন
সৃষ্টিকারী।

লোকটার মৃতদেহ ছিল
হিমালয়ের চেয়েও ভারী
এবং বিধ্বংসী বিস্ফোরক।
তাই তার মৃতদেহ
স্বদেশ, স্বজনের হাতে
তুলে দেওয়া হয় নি।
যদি আরেকটি
বৃহত্তম বিস্ফোরণ ঘটে যায়!

তাঁর মৃতদেহটি গোপনে
রাতের অন্ধকারে,
লোহার খাঁচায় পুরে বঙ্গোপসাগরে
ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

লোকটির নাম কি? কালু।
কালো অন্ধকার ছিন্নভিন্ন করবে বলে
তাঁর নাম হয়ে উঠলো সূর্য– সূর্য সেন।

আজ এতো দীর্ঘ বছর হলো
তাঁর লাশ
শনাক্ত করা যায় নি।
কারণ সেটি গায়েব
হয়ে গিয়েছে।

মিথ্যে কথা!
রোজ বঙ্গোপসাগরের
চলমান স্রোত ভেঙে
প্রথমে বালার্ক পরে সূর্য হয়ে
সে পূর্ব আকাশে উঠে আসে।