রাষ্ট্রের হালখাতা নেই
তমাল সাহা

আমরা আঁচাভুয়ো গরিবগুর্বো মানুষ।
দেনা কর্জে আমাদের দিন কাটে। পেটে আমাদের অমাবস্যা। সারা দেহটাই আমাদের কাছে বিষময় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই লাগে। যত গরিবই হই না কেন ন্যাংটো থাকা তো আর সাজেনা!
তাই দেহটা ঢাকতে ঢুকতে কিছু জামাকাপড় কিনতেই লাগে।
আমাদের হাতে তো তেমন টাকা পয়সা নেই। ধার বাকিতেই দিন চলে। খেরোর খাতায় দোকানি সব হিসেব লিখে রাখে।

হালখাতার দিন আসে। লোকে নববর্ষ বলে। সেদিন আমরা দোকানদারের কাছে হাসিমুখে যাই। দোকানিরও খুব হাসি হাসি মুখ। আরে বসুন! ধূমপান চলবে? কী দিদিভাই কেমন আছেন?
‘কেমন আছেন’ বাক্যটি প্রশ্নবোধক অথবা বিস্ময়কর কী হলে ভালো হয় আমার সামনে বিদ্যাসাগরের ব্যাকরণ কৌমুদী ভেসে ওঠে।
কিছু দেনা শোধ করে মিষ্টির প্যাকেট পাই, বকেয়া থেকেই যায়। দোকানি ধারের জোর টেনেই চলে। আমৃত্যু এই দেনা, আমৃত্যু এই হালখাতা। ‌

রাষ্ট্রের কোনো হালখাতা নেই।
কারণ সে তো কেনে না সব বেচে দেয়। সে ধার বাকিতে কোনো কাজ করে না।
খনি জল জঙ্গল পাহাড় পর্বত ব্যাংক বীমা কলকারখানা সব বেচে দেয়। বেচে আসল কত আর কাট মানি কত পায় তারও কোন হিসেব নেই‌।
গরু কয়লা বালি পাচার থেকে কত কামাই তারও কোনো হিসেব মেলেনা।
মিড ডে মিল, আবাসন যোজনা থেকেও প্রচুর কামাই।
প্রজন্মদের চাকরিও বেচে দেয়। লজ্জা শরম বলে কিছু নেই।
কামাই ছড়িয়ে পড়ে চালে ডালে মিলেমিশে গোলমেলে হয়ে যায়। বাছাইয়ে ইডি, সিবিআই হামলে পড়লেও হিমশিম খেয়ে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে।
এ এমন হিসেব কেউ তো আর সহজে বোঝা যাবে বলে খেরোর খাতায় তুলে লাল দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে না!

নববর্ষে আসে।
হালখাতার দিন নতুন হিসেবের খাতা খোলা হয়। একে জাবেদা খাতাও বলে।
খেরোর খাতার প্রথম পাতায় সিঁদুর লাগিয়ে মুদ্রার ছাপ পড়ে, পড়ে হলুদ চন্দনের ফোঁটা।পুরুত মশাই খাতার উপরে লাল কালিতে সিদ্ধিদাতা গণেশায় নমঃ লেখেন। তারপর মেটে সিঁদুরে স্বস্তিকার চিহ্ন আঁকেন।
আমাদের নাম লেখা হয়। বাকি হিসেবের জের টানা হয়। আমাদের দেনাদার নামটি ঘোচেনা।

রাষ্ট্রের দেনা কর্জ, ধার বাকি নেই,তার শুধু কামাই আছে। রাষ্ট্রের হালখাতা নেই।