রাষ্ট্রদ্রোহিতা -তমাল সাহা

যে রাষ্ট্র নরহত‍্যায় মাতে,যে রাষ্ট্র ধর্মীয়-দলিত খুনে উল্লাস করে,যে রাষ্ট্রে ৫০ লক্ষ কৃষক
আত্মহত্যা করে, লক্ষ লক্ষ কারখানা বন্ধ, সেই রাষ্ট্রকে গ্রেপ্তার করবে কে? মানুষের স্বার্থে লড়াকু মানবাধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কলমের কথা

রাষ্ট্রদ্রোহিতা
-তমাল সাহা

রাষ্ট্র বানায় কে?
আমরা।
রাষ্ট্র কাদের?
আমাদের।
রাষ্ট্র আমরা কিভাবে বানাই?
রোদে পুড়ে,জলে ভিজে,
ঠাঁয় লাইনে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা রীতিমতো শ্রম দিয়ে।

রাষ্ট্র আমরা বানাই কেন?
রাষ্ট্র আমাদের পেটের দানাপানি দেবে
মাথা গোঁজার ঠাঁই দেবে।
আর কী দেবে?
কাজ দেবে
কথা বলার স্বাধীনতা দেবে
বাঁচার অধিকার দেবে।

রাষ্ট্র চালায় কারা?
যাদের পয়সা আছে তারা।
রাষ্ট্রচালকদের পয়সা বাড়ে না কমে?
বাড়ে।
তবে আমাদের কমে কেন?
এদিক ওদিক তাকাবে না,
স্পষ্ট সোজাসুজি বল।

এই কারখানা, মজুতঘর,
জলবাঁধ,শস্যক্ষেত কার?
রাষ্ট্রের।
রাষ্ট্রের মানে তো আমাদের।
হ্যাঁ, নিশ্চিত আমাদের।

রাষ্ট্র আমাদের,
কিন্তু রাষ্ট্র যদি আমাদের
রুটি না দেয়
পানি না দেয়
মকান না দেয়
নোকরি না দেয়
বাতচিতের আজাদি না দেয়
তবে আমরা কি করব?

রাষ্ট্র যদি অরণ্যে উপত্যকায়
আমার মায়ের ইজ্জত লুট করে
বুটের শব্দ তোলে
জল জঙ্গল জমি কেড়ে নেয়
তবে আমরা কি করব?
রাষ্ট্র যদি আমার মাকে
পণ্য বানিয়ে বেচে দেয়
তবে আমরা কি করব?
এদিক ওদিক তাকাবে না,
সোজাসুজি স্পষ্ট উত্তর
দাও।

রাষ্ট্রকে আমরা বানাই,
রাষ্ট্রকে আমরা ভেঙে দেব।
আমাদের রাষ্ট্র—
আমরা ইচ্ছেমত ভাঙব,
ইচ্ছেমত গড়ব।

এই রাইফেল ফ্যাক্টরি,বারুদ ঘর,
অস্ত্রাগার কার?
রাষ্ট্রের।
রাষ্ট্র এগুলো বানিয়েছে কেন?
প্রতিরক্ষার জন্য, আত্মরক্ষার জন্য।
কাদের প্রতিরক্ষা? কাদের আত্মরক্ষা?
দেশের, জনগণের।

এই অস্ত্রাগার,
রাষ্ট্রের মানে তো আমাদের?
হ্যাঁ, নিশ্চিত আমাদের।
আমাদের কামগার ভাইয়েরা
কত ঘাম ঝরিয়ে,
কত নিখুঁতভাবে নিজের হাতে
এগুলো বানিয়েছে।
এগুলো ব্যবহারের অধিকার
আমাদের আছে তো,
নাকি?
অস্ত্রগুলো তো আমরা নিজেরাই
ব্যবহার করতে পারি?
এদিক ওদিক তাকাচ্ছো কেন?
সোজাসুজি স্পষ্ট উত্তর দাও।

হ্যাঁ, আমাদেরই তো
এগুলো ব্যবহার করা উচিত এবং কর্তব্য।
এই উচিত এবং কর্তব্যকে কি বলে?
দ্রুত,অতি দ্রুত উত্তর দাও?

রাষ্ট্রদ্রোহিতা।