অবতক খবর,২৪ ফেব্রুয়ারি: প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক অভিযানের কথা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেছে যুদ্ধ। ইউক্রেনের (Ukraine) একাধিক শহরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শুরু করেছে রুশরা। রাজধানী কিয়েভ, খারকিভ-সহ একাধিক শহরে শোনা যাচ্ছে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ। এদিকে পাল্টা জবাবের দাবি করেছে ইউক্রেন। তাদের বক্তব্য, ৫টি রুশ সেনাবিমান ও একটি হেলিকপ্টার গুলি করে নামানো হয়েছে। রাশিয়ার (Russia) পাল্টা দাবি, ইউক্রেনের বিমান ঘাঁটি ধ্বংস করার পাশাপাশি সে দেশের বায়ুসেনার যাবতীয় প্রতিরোধ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে আজ ভোরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বলে সামরিক অভিযানের ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। ইউক্রেন নিয়ে কোনও বিদেশি শক্তি নাক গলালে তার ফল ভুগতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে কেন ? একনজরে দেখে নেওয়া যাক কারণগুলি…

রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে ইউক্রেনের পদক্ষেপকে ঠেকিয়ে আসছে। গত বছর জানুয়ারি মাসে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে আবেদন জানান, ইউক্রেনকে যেন NATO-তে যোগ দিতে দেওয়া হয়। এই বিষয়টি ক্ষুব্ধ করে তোলে রাশিয়াকে। তারা গত বছর আচমকা “প্রশিক্ষণ মহড়ার” নামে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে সৈন্য পাঠানো শুরু করে এবং পরবর্তী সময়ে তা আরও বাড়ানো হয়। এরপর ডিসেম্বর নাগাদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সৈন্য মোতায়েনের ওপর প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া দাবি করে যে, পশ্চিমের তরফে আইনত এই গ্যারান্টি দেওয়া হোক যে, ন্যাটো পূর্ব ইউরোপ এবং ইউক্রেনে কোনও সামরিক ক্রিয়াকলাপ করবে না। পাশাপাশি পুতিন দাবি করেন, ইউক্রেন হল, পশ্চিমের ‘পুতুল’ এবং কখনোই সঠিক রাষ্ট্র ছিল না।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা এই প্রথম নয়। এর আগেও উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।  ওই বছরেই রাষ্ট্রপতি পুতিনের সমর্থিত বিদ্রোহীরা পূর্ব ইউক্রেনের বিশাল অংশ দখল করে নেয়। তখন থেকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। সে সময় রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। পূর্ব দিকের যুদ্ধে তখন ১৪ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। অথচ, সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র হিসাবে ইউক্রেনের রাশিয়ার সাথে গভীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়ানরা সেখানে ব্যাপকভাবে কথা বলে, কিন্তু ২০১৪ সালে রাশিয়া আক্রমণ করার পর থেকে এই সম্পর্ক ভেঙে যায়।

এরপর রাশিয়া ও ইউক্রেন ডনবাস অঞ্চলসহ পূর্ব ইউক্রেনে সশস্ত্র সংঘাত থামাতে মিনস্ক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু সংঘাত অব্যাহত থাকায় রাশিয়া বলতে শুরু করে, যে অঞ্চলে সংঘাত চলছে সেখানে তারা ‘শান্তিরক্ষী’ পাঠাচ্ছে। যদিও পশ্চিমাদের দেশগুলি তা মানেনি। পুতিন পশ্চিমের শক্তিধর দেশগুলি ও ইউক্রেনের কাছ থেকে এই মর্মে গ্যারান্টি দাবি করেন যে, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে না(৩০ টি দেশের একটি প্রতিরক্ষামূলক জোট) এবং ইউক্রেনকে অসামরিকীকরণ এবং একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে। উত্তেজনার এই আবহে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাক্রন মস্কো গিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন। যদি যুদ্ধ এড়ানো যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু, তাতেও কাজ হয়নি। শেষমেশ আজ সামরিক অভিযানের ঘোষণা করে রাশিয়া। দুই দেশের যুদ্ধের আবহে প্রচুর নিরীহ প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।