বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর, কোলকাতা, ২৬শে আগস্ট :: এবার রাজ্যে 2021 এর নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে। এ লড়াইতে যেমন প্রথমে রয়েছে তৃণমূল ও দ্বিতীয় রয়েছে বিজেপি। এই দুটি দলই তাদের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঘোষণা করে নির্বাচন এ লড়াইয়ে নামতে চলেছে। তবে এবার নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য পিছিয়ে থাকছে না কংগ্রেস ও বামপন্থীদের জোট। এই দুই শিবিরে নির্বাচনী মুখ কে হবে এখনো কোন স্থির হয়নি। শুধু তাই নয়, এই জোট বিধানসভা নির্বাচনে বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। চরিত্র অনুযায়ী কংগ্রেস ও বামপন্থী দুই দল আগে থেকে কোন নেতা বা মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঘোষণা করে নির্বাচনে যায় না। তবে এই প্রথম বাংলায় এই জোট তাদের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থীকে সামনে রেখে নির্বাচনে যাবে বলে জানা গেছে।

একুশে নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এগুচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বাংলায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলকে নির্বাচনের আগে আরো শক্তিশালী করে তুলতে জোরকদমে চলছে জেলায় জেলায় প্রস্তুতি। দলকে শক্তিশালী করতে পিকে নিজেও তৃণমূলকে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছেন, দলকে নতুন করে সাজাচ্ছেন নেত্রী বলে দলে বার্তা দেওয়া হচ্ছে কর্মী নেতাদের মধ্যে। তৃণমূল যুব সংগঠনকে চাঙ্গা করতে সমস্ত দায়িত্ব যুব সভাপতি ও যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া দলে নতুন নেতৃত্বের প্রাণ সঞ্চার করতে 40 এর উর্দ্ধে নেতাদের যুব তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সরিয়ে নতুন নতুন নেতাদের এগিয়ে আনা হচ্ছে।

অন্যদিকে মাদার তৃণমূলেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে সমস্ত বড় মাঝারি নেতাদের অন্যান্য জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের নিজের নিজের কেন্দ্রে শক্তিশালী করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে‌। জেলা নেতাদের যার যেমন ক্ষমতা যার যেমন গ্রহণযোগ্যতা তেমন দায়িত্ব তাদের কাঁধে তুলে দিচ্ছে দল। এর ফলে জেলার নেতা নেত্রীদের গুরুত্ব দলে অনেক বেশি বেড়েছে। তারা মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নিজের নিজের এলাকার নির্বাচনে সিট সুরক্ষিত রাখতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

তবে দলের ভেতরে কিছু কিছু নেতারা অন্তর্কলহের ফলে এক অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু করেছেন। তারা একেঅপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রশ্ন তুলে বিরোধীদের চাঙ্গা করে তুলছেন। দলের ভেতরে গোষ্ঠী কলহ ও নেতা-মন্ত্রীদের বেফাঁস মন্তব্য তৃণমূলকে অনেকটাই ক্ষতি করছে। তারা এতটাই উদ্ধত হয়ে উঠেছেন যে দলও তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। তাই আগামী নির্বাচনের রাস্তা আরও কঠিন হয়ে উঠছে তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন নেত্রী নিজেও।

ঠিক অন্যদিকে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে দুই থেকে ১৮ টি সিট জয় করে বিজেপি অনেকটাই চাঙ্গা। তারা এখন জেলায় জেলায় গ্রামে গ্রামে ব্লকে ব্লকে তৃণমূলকে চোখে চোখে রেখে টক্কর দিচ্ছেন। তাই বিজেপি এখন শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে জেলা, জেলা থেকে ব্লক সমস্ত জায়গায় সংগঠন তৈরি করে লড়াই দিতে এগোচ্ছে। বিজেপির ওপরতলার নেতারা মনে করছেন যে রাজ্যে ৪২ সিটের মধ্যে ১৮ টিতে তারা তেমন কোনো প্রস্তুতি না নিয়ে জয় যুক্ত হয়েছেন। তাহলে ভালো করে প্রস্তুতি নিলে এ রাজ্য থেকে তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করা তাদের জন্য কোন ব্যাপারই নয়।

তাই বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এতটাই আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন যে তিনি, প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিচ্ছেন যে এবার রাজ্যের তারা ক্ষমতায় আসবেন। তিনি বিজেপির অপর গোষ্ঠীকে ঘরে বসে থাকার কথা বলতেও দ্বিধা করছেন না। তবে যত নির্বাচন এগিয়ে আসছে বিজেপিতে ভাঙ্গন ততটাই বাড়ছে। একদিকে দিলীপ ঘোষ ও অন্যদিকে মুকুল রায়ের মধ্যে বিবাদ চরম মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে।

একদিকে দিলীপ ঘোষ দলকে চাঙ্গা করতে ভোকাল টনিক দিয়ে নির্বাচন পার করে যাবেন বলে আশাবাদী। অন্যদিকে মুকুল নির্বাচনের আগে দলকে সংগঠিত করতে কর্মসূচি, রণনীতি, কূটনীতির পাশাপাশি রাজনীতিক অংকের কথা বলছেন। তবে দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে জেলায় জেলায় বিভ্রান্ত হয়ে দলে দলে দলত্যাগ করছেন বহু বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। তাই এখন রাজ্যের মুখ হিসাবে এক তৃতীয় নেতৃত্বকে আনতে চলেছে বিজেপি বলে জানা যাচ্ছে।

সূত্র জানাচ্ছে যে গোড়া থেকে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত কোন নেতাকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঠিক করে নির্বাচনে যেতে চায় দল। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বিজেপির মুখ করা হতে পারে বিজেপির প্রবীণ নেতা ও একজন প্রাক্তন রাজ্যপালকে।

সূত্রের খবর ও পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে যে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তথাগত রায়কে মুখ্যমন্ত্রী মুখ করে নির্বাচনে যেতে চলেছে বিজেপি। তাই রাজ্যপালের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে এবার রাজ্যে আনার প্রস্তুতি চলছে। রাজ্যপাল তথাগত রায় ইতিমধ্যে একটি টুইট করে জানিয়েছেন যে তিনি রাজ্যপালের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত রাজ্যপালের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে তিনি সরাসরি বঙ্গ রাজনীতিতে আবার সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।

২০২১ এর সংগ্রামে তৃণমূল ও বিজেপি সরাসরি লড়াইয়ের মাঝেও তৃতীয় শক্তি হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করতে তৈরি হচ্ছে কংগ্রেস ও বামপন্থীদের জোট। ইতিমধ্যে কংগ্রেস ও বামপন্থীদের জোট একসঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। তবে এই প্রথম দুই দলই চিরাচরিত প্রথা থেকে একটু সরে এসে প্রথম নতুন রণকৌশল নিয়ে নামতে চলেছে নির্বাচনে।

মনে করা হচ্ছে এই নির্বাচনে তারা প্রথমবার তাদের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবেও একজনকে বেছে নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার কথা ভাবছে । তবে কে সেই মানুষটি জানাবো আগামী পর্বে। নজর রাখুন অবতক খবরে :-