রবীন্দ্রনাথ ও কুস্তিগির/তমাল সাহা

দিল্লির যন্তর মন্তরে কুস্তিগীরদের অবস্থানঃ অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন

রবীন্দ্রনাথ ও কুস্তিগির
তমাল সাহা

কুস্তিগির বিষয়ে আমি খুব বেশি জানি না। ডাঙাপাড়ায় কুস্তির আখড়া দেখেছি। দেখেছি তেলমাখা মেটে সিন্দুরে চকচক করছে পেটানো পেশি ফোলানো ঢেউ নিয়ে বজরংবলীর পেটানো শরীর, বুকে মাংসের উঁচু ঢিবি, হাতে মুগুর। পাশে একটি ঝুরিমূলনামা বটগাছ। তাতে লাল ল্যাংগোটও ঝুলতে দেখেছি।

আখড়ায় কুস্তিগিরদের মল্লযুদ্ধ কসরত মানে প্র্যাকটিস করতে দেখেছি, দেখেছি তাদের মুগুর ভাজতে।
নারীরাও কুস্তিগির হতে পারে সেসময় আমি জানতাম না। বোধ করি রবীন্দ্রনাথেরও এ কথা জানা ছিল না। জানা থাকলেও মহিলা মল্লবীর নিয়ে তার কোন লেখা আমি পড়িনি।
তবে কুস্তিগিরদের সম্বন্ধে তিনি বিশদ জানতেন। লোকহিত প্রবন্ধে দেখতে পাই কুস্তিগির বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণ শক্তি কত গভীর ও তীব্র ছিল। আর তিনি তো মল্লবীরদের সম্বন্ধে জানবেনই, তিনি তো বীরভূমেই তার স্বপ্নের ভুবন শান্তিনিকেতন গড়ে তুলেছিলেন।

তিনি লিখেছেন, ‘কুস্তির সময় কুস্তিগিরদের গায়ে পরস্পরের পা ঠেকে, তাহার হিসাব কেহ জমাইয়া রাখে না; কিন্তু সামাজিকতার স্থলে কথায় কথায় কারো গায়ে পা ঠেকাইতে থাকিলে তাহা ভোলা শক্ত হয়।’
লোকহিত প্রসঙ্গে তিনি একথা বলেছিলেন।

এটি বর্তমান সময়ে কুস্তিগিরদের যৌনহেনস্তা সম্পর্কেও প্রযোজ্য বলে মনে হয়।
শোনো রবীন্দ্রনাথ! বৈশাখের এই নিদাঘে পঁচিশে বৈশাখের মাত্র কদিন আগে তেসরা মে,২০২৩ তোমার ভারততীর্থে নারী কুস্তিগিরদের শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে। বোধ করি তুমি এসব কোনদিনই ভাবতে পারোনি ভারতীয় নারীরা কোনদিন মল্লবীর হবে, তোমার ভাষায় কুস্তিগির হবে এবং বিদেশ থেকে মল্লযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে পদক পুরস্কার নিয়ে আসবে, দেশের সম্মান মর্যাদা বাড়াবে।

তোমার কথায় ‘কারো গায়ে পা ঠেকাইতে থাকিলে তা ভোলা শক্ত হয়’ কিন্তু সংবাদ সূত্রে প্রকাশ এক্ষেত্রে নারী কুস্তিগিরদের বিভিন্ন অজুহাতে কাছে ডেকে নিয়ে তাদের বক্ষে ঘাড়ে উরুতে নিগ্রহ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আমি লাভবান হয়েছি। এ ঘটনার পরই তোমার নারী বিষয়ক কয়েকটি কবিতা এবং প্রবন্ধ পাঠে মগ্ন হয়েছি।

একটি লেখাও মাথায় হুলিয়া জারি করেছে!

গালভরা কথা ক্রীড়ানৈপুণ্য সম্মান পুরস্কার কুস্তিগির!
সে কী তোমাদের রক্ষা করতে পারল
বজরংবলী নাকি তোমাদের গুরু মহাবীর?

নির্বিবাদে চলল হামলা, নারী তো কী!
সহযোদ্ধা ছুঁলে কি চলে যায় জাত?
তারপর বুধবার, সেই দুঃসহ রাত
গায়ে পড়ল সুরক্ষা পুরুষ পুলিশের হাত।

কী দেখলে?
তোমাদের পক্ষে আছে কী রাষ্ট্র আদালত!
সহিষ্ণু এই দেশ, কী করবে তোমরা?
খুব বেশি হলে তেজ দেখিয়ে ফিরিয়ে দেবে পুরস্কার ও পদক!