যিশুর জন্মদিন এবং কে সি নাগ অঙ্কে ফেল
তমাল সাহা

কাল উদোম গায়ে যে শিশুটিকে দেখি
আজ কেকের দোকানের শেডের নিচে ফুটপাতের পাশে সে শুয়ে আছে।
কাল রাতে সে দেখেছে কত রকমের সাইজের কেক!
তার চোখ দুটো স্থির হয়েছিল গোল লম্বা চৌকো প্যাকেটে বসানো খোলা প্যাকেটের দিকে।
একেক রকম কেক দেখে তার ভালো লাগছিল। একেকটা কেকের ভিন্ন ভিন্ন গন্ধ আসছিল তার নাকে।

পৃথিবীতে এত সুগন্ধ আছে! এত সুগন্ধ কোথায় থাকে? তারা তো পচা খালপারে ওই নীল সাদা পলিথিন মাথায় বস্তিতে কোনমতে টিকে থাকে।
কাল কেকের গন্ধে সে ফুটপাতের পাশেই শুয়ে পড়েছে।

সে সান্তাক্লস দেখেছে,
দেখেছে ফার গাছ, তাতে টুনি লাইটের আলো, কত রকম রাংতা কাগজ ঝলমল করছে।
আরও দেখেছে রঙ বেরঙের গরম পোশাকপরা শিশুরা বাবার হাত ধরে এসে বড়দিনের সাজসরঞ্জাম কিনছে।
সে শুনেছে তার বাবা রিক্সা চালাতো। ভরপেট চোলাই মদ খেতে। মরে গেছে। মা বাড়ি বাড়ি বাসন মাজে।বাবা তার নাম রেখেছিল বিষু। ‘আমি তো বিষ খেয়ে তোকে জন্ম দিয়েছি, তাই তোর নাম বিষু’। পণ্ডিত লোকেরা এই নামের মর্ম বুঝলো না। তারা বলে, বিষু আবার নাম হয় নাকি? ওটা হবে বিশু—
বিশ্বনাথ থেকে এসেছে।
বস্তির মানুষেরা বলে, হায়রে, বিশুর মা! এতো তাড়াতাড়ি বিধবা হয়ে গেল….
এখন হঠাৎ মনে পড়ে গেল বিশুর তার বাবার কথা ও বিধবা শব্দটি।

সে ভাবে, সান্তা অমন সাদা লাল জ্যাকেটের পোশাকে মাথায় লাল টুপিতে সেজে থাকে কেন! ওই ছোট্ট থলে থেকে বের করে দস্তানায় পুরে যেসব চকোলেট শিশুদের বিলি করে দেয় তাদের সকলের গায়ে কি অমন শীতপোশাক আছে? আর ওইটুকু থলেতে কত চকলেট বিস্কিট ধরে?
আর একদিন দিলেই কি সব হয়ে যায়!
রোজের খিদে কি একদিনে মেটে?

ধেত্তরি তোর বড়দিন!
যিশু আর জন্মদিনের দিন খুঁজে পেল না?
দিন যত বড় হয় বেলা বড় হতে থাকে আর আমাদের খিদে বাড়ে।
আমাদের চাই ছোট দিন বড় রাত।
ছোট দিন হলে কম সময়ের জন্য খিদে পায় আর রাত তাড়াতাড়ি নামে–
সারাদিনের ক্লান্তিতে আমাদের ঘুম চলে আসে।
আমরা খিদে ভুলে যাই,
বড় ঘুম দিয়ে শুয়ে থাকি।
দিন বড় হলে খিদে বেশি।

বড়দিন ও খিদের সমানুপাতী সম্পর্ক।
সমানুপাত অঙ্কের উত্তর পাটীগণিত বইয়ের পেছনে উত্তরমালায় দেওয়া আছে।

দিন বড় হলে খিদে বাড়ে এই সমানুপাতের অঙ্কের উত্তর পাটীগণিত বইতে নেই। কারণ খিদে তো বাড়তেই থাকে!

যিশুর জন্মদিনে কে সি নাগ অঙ্কে ফেল করে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর দিকে তাকিয়ে থাকে
তখনো যিশুর পেরেকবিদ্ধ হাত-পা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে…