আগমনী সুর নাকি বাজছে!আমি নাকি হৃদয়কঠিন অসুর! আমি নাকি শুনতে পাই না এসব সুর! বাজছে তো ভোটের সুর। সবাই যখন শুনতে পায়,তখন কি আমি বধির?
তবে যাইহোক
মায়ের নামে কলম ধরি, ছুড়ে দিই শব্দতীর।

মা আসছে
তমাল সাহা

তোমরা শারদ বেলার প্রাক-মুহূর্তে নর-নারীরা দুর্দান্ত আলোকচিত্র-গ্রাহক হয়ে ওঠো
একের পর এক ফেসবুক ওয়ালে পোস্টাতে থাকো অনুপম সব ছবি—
দোলায়মান সাদা কাশফুলের শুভেচ্ছা
সাদা মেঘের উড়ে যাওয়া চিঠি
নীল আকাশের বিশাল আমন্ত্রণ
শরতের সকাল দুপুর বিকেল সন্ধ্যা এবং রাত্রিকে তোমরা ক্রমাগত ভালবাসতে থাকো
রৌদ্রাক্ত আকাশ, জ্যোৎস্নার ভেতর মায়ের ডাক শুনতে পাও
অথচ অন্ধকার পেটে নিয়ে বসে থাকে বসুন্ধরা।
বন্ধ কল-কারখানার গেট, ধোঁয়াহীন চিমনি—
শ্রমিকমহল্লা স্তব্ধ অভিমান নিয়ে চোখের জল ফেলে, বসে থাকে গঙ্গা নদীর অববাহিকায়
তবুও কারখানার ধ্বংসস্তূপে ফুটতে থাকে কাশফুল
তুমি তখন রেললাইনের ধারে কাশফুলের স্তাবকতা নিয়ে ক্যামেরায় লিখে ফেলো
মোহময় ছবির কবিতা।

মা আসছে!

মা তো আসবেই—
মায়ের মৃত্যু নেই, নারী সৌন্দর্যের মৃত্যু হয় না কখনো।
তার শারীরিক ও হৃদয়ের সম্পদে পিতা ও প্রজন্ম ঐশ্বর্যবান।

কৈলাসে করোনার কোনো আবহ নেই।
মা বাপের বাড়ি নিশ্চিন্তে চলে আসে।
তবে এবার মায়ের হৃদয়ে হয়তো ষড়রিপুর একটি রিপু বাসা বেঁধেছে!
মেয়েরা একটু হিংসুটে হয় মেয়েদের প্রতি। এটা স্বভাবজাত—
এ কথা মেয়েরাই বলে থাকে।
শ্রী দুর্গা দশকর্মা ভান্ডার– এই নামের দোকানে অববাহিকার গাঁ-গঞ্জ পূর্ণ হয়ে গেলেও
নিজের মেয়ের নামে লক্ষ্মী ভান্ডার হওয়ায় ও সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ায় মা একটু হীনমন্য হয়ে পড়ে।
তবে এতে নারীদের সম্মান না অপমান বেড়ে যায় মা বুঝতে পারে না।

অর্ধ ধর্ষিতা, পূর্ণ ধর্ষিতা, কিশোরী ধর্ষিতা, তরুণী ধর্ষিতার পণ্য মূল্য ধার্য হয়ে গেছে সেই কবে
তারা সকলেই যথাযথ সাম্মানিক মূল্য হাতে পেয়েছে কিনা তা মা জানতে চায়।
লক্ষ্মী ভান্ডারের নামে মায়ের লক্ষ্মী মেয়েরা নিজেদের বেচে দিচ্ছে সরকারি মূল্যে,
সরকার কিভাবে মেয়েদের কিনে নেয় সে দৃশ্য দেখতে মা আসছে বাপের বাড়ি দুয়ারে দুয়ারে।

পুরুষতন্ত্রের মুখে থাপ্পড় কষিয়ে নারীরাও এখন ডোমের মর্যাদা পায় কত হাজার টাকায়
তাতে মা হয়তো বা খুশি হয়নি!
মা যাবে ফরেনসিক তদন্তে
ডোমনারীর কর্মস্থলে সেই লাশকাটা ঘরে।

ক্লাব সংগঠনগুলির আয়োজনে দুর্গাপুজোয় সরকারি পঞ্চাশ হাজার টাকার অনুদানের বিষয়টিতে কাটমানি আছে কিনা
সব অর্থই তার পুজোয় ব্যয়িত হচ্ছে কি না
তা জানতে মা দৌড়বে মণ্ডপে মণ্ডপে,
সে সংবাদ পৌঁছে গেছে অববাহিকায়।

মায়ের মাত্র তিন দিনের সফর সূচি—
অতি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে।
ভালোবাসা কাকে বলে মা প্রতি বছরই শিখিয়ে দিয়ে যায়
নবমী নিশিতে মেনকার সব কান্নাকাটি উমার ভালোবাসার কাছে হেরে যায়।
এতো স্বামী অনুরক্ত কন্যা আছে দুনিয়ায়,
এ মেয়ে তিনদিনেই যেন
ছাইভস্মমাখা শিবকে চোখে হারায়!
তিন দিন পরেই অনিবার্যভাবে ফিরে যায় উমা পর্বত শিখরে, অদেখার আকুতিতে
শিবকে তীব্র আলিঙ্গনে জড়ায়।

ভালোবাসার ঘনিষ্ঠ আয়োজন শুধু নারীরাই জানে।
শিব এক দুর্লভ প্রেমিক
তাই আজও নারীরা তার শারীরিক দৌরাত্ম্যের শিহরিত আঘাত না পেয়ে কাতর হয়ে পড়ে
কলসি কলসি দুধ ঢেলে দেয় শিবলিঙ্গের উদ্ধত প্রদেশে।
প্রকৃত প্রেমিক পুরুষ শিব আশ্চর্য বিভঙ্গে মাতৃস্তন্য পান করে নীলকন্ঠ হয়ে যায়
নারীরা চায় সেই অনুভব— মাতৃমূর্তি তখন আশ্লেষে মূর্ত হয়ে ওঠে রূপময়ী মহিমায়!

মা আসছে
ভালোবাসার সুসংবাদ পৌঁছে যায় আমলকি বনের হাওয়ায় হাওয়ায়
শিউলির গন্ধ ছড়াতে থাকে,ছড়িয়ে পড়ে, ছড়ায়…