অবতক খবর, রেজাউল করিম, সংবাদদাতা ::-লড়াই করে বেঁচে থাকার নামই জীবন। আর এই লড়াই ১৩ বছরের এক তরুণের। বাবা অসুস্থ, শয্যাশায়ী একরকম। ৩ ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মা। কারণ, উপার্জনের আর কোনও পথ নেই। এদিকে লকডাউনের পর চলছে আনলক ওয়ান। আর করুণ দশা ওই পরিবারের। এই অবস্থায় উপার্জনের রাস্তায় নেমে পড়েছে ওই তরুণ দীপঙ্কর সাহা। সাইকেলে আইসক্রীমের বাক্স বেঁধে বিক্রি করে বেড়াচ্ছে এই গ্রাম, ওই গ্রামে।

একরত্তি ছেলেটি এই কয়েকদিনেই যেন বড় হয়ে গেছে। দিনের শেষে ছেলে যখন তার উপার্জন মা লতা সাহার তুলে দেন, মার গাল বেয়ে গড়িয়ে আসে অশ্রু। কষ্টের নয়, আনন্দাশ্রু। একরত্তি ছেলেটিই যে এখন ওই পরিবারের ভরসা। মালদা জেলার বৈষ্ণবনগর থানার কুম্ভিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের শুকপাড়া এলাকায় বাড়ি দীপঙ্করের। বাবা সঞ্জয় সাহা(৫০) কয়েকমাস ধরে অসুস্থ। কথা বলতে পারেন না, বিছানা ছেড়ে উঠে আসতে পারেন না তিনি। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় নি। ৩ ভাইয়ের মধ্যে দীপঙ্কর বড়। সে জৈনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। পড়াশোনাতেও সে মেধাবী। স্কুলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র সে। মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে রেয়েছে ছোট্ট একখানা ঘর। দুঃস্থ, অসহায় পরিবারটির একমাত্র অবলম্বন দীপঙ্কর। তাই
জীবন যুদ্ধে একাই লড়াই করে চলেছে।

সম্বল বলতে ওই এক বাবার সাইকেল। তার উপর ভর করেই সকাল-সকাল বেরিয়ে যায় পেপসি, আইসক্রিম বিক্রি করতে। ছুটে বেরায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, যৎসামান্য যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই সংসার বহন করে নিয়ে চলেছে দীপঙ্কর। বিশ্রাম বলতে বাড়ি ফিরে পড়াশোনার করার পরে রাতে ঘুম। এই বয়সে সংসার সাথে পড়াশোনাতেও থেমে নেই দীপঙ্কর হাসি মুখে বেশ পড়াশোনা দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে।

সেই সকাল থেকে শুরু হয় সংসার চালানোর লড়াই, আইসক্রীম বিক্রি করা। পাশে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষক জয়দেব সরকার। তিনি বলেন, ‘‌আমি টানা ৩ বছর পড়িয়েছি। দু:‌স্থ পরিবারের ছেলে বলে কোনও পয়সা নিতাম না। এর মধ্যে চাল, ডাল, আলু পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’‌ ছোট্ট দীপঙ্কর বলে,‘‌আমি উপার্জন করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। পড়াশোনা ছাড়া যাবে না।’‌