অবতক খবর,১৪ এপ্রিল,মালদা,সানু ইসলাম,১৪এপ্রিল: দশ দিন আগে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল বাবার।অভাবের পরিবারের চার মেয়ে এক ছেলে।এখনো হয়নি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান।স্বজন হারা শোকে কাতর পরিবার।পাশে দাঁড়িয়েছিল গোটা গ্রামবাসী।আর এই দুর্ঘটনার জন্য যে বা যারা দায়ী তাদের গ্রেপ্তারির দাবিতে যখন বিক্ষোভ দেখিয়েছিল পরিবারের লোক তখন তাদের পাশে দাড়ানো এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করলো পুলিশ। শুক্রবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে এলাকাবাসীর মামলার খরচ যোগাতে সাহায্য তুলছে মৃতের ছেলে-মেয়েরা।অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে মামলা করা হচ্ছে।এর থেকে ভালো ছিল ব্রিটিশ শাসন বিস্ফোরক অভিযোগ মৃতের মেয়ের।

মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেন্দ্রপুর গ্রামের ঘটনা।গত ৩রা এপ্রিল মহেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা আশুতোষ দাস শ্রাদ্ধানুষ্ঠান থেকে ভালুকাগামী রাজ্য সড়ক দিয়ে ফেরার সময় উল্টো দিক থেকে আসা একটি বাইকের ধাক্কায় মারা যান।ঘাতক বাইক আরোহী শামীম আক্তার ওরফে রিক্কিকে পুলিশের হেফাজতে তুলে দেয় এলাকাবাসী। কিন্তু পুলিশ হেফাজত থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়ায় পরের দিন ৪ই এপ্রিল মহেন্দ্রপুর বাস স্ট্যান্ডে আশুতোষ দাসের মৃতদেহ রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ দেখায় পরিবারের লোকেরা।সেই বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল গোটা গ্রাম।পরিবারের লোকের অভিযোগ ছিল এটা দুর্ঘটনা নয় পরিকল্পনা মাফিক খুন।স্থানীয় শাসকদলের নেতারাও বিক্ষোভে সামিল হয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছিল।এবার সেই ঘটনায় বিক্ষোভাকারী ২০০ জনের বিরুদ্ধে স্বতপ্রনোদিত মামলা রুজু করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।পুলিশের এই কান্ডে তাজ্জব হয়ে গেছে হরিচন্দ্রপুরের সাধারণ মানুষ। এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জামিনের অর্থে জোগাড় করার জন্য চাঁদা তুলছে পরিবারের লোকেরা।কারণ পরিবারের লোকের মতে যারা তাদের পাশে দাড়াতে গিয়ে কেস খেলো তাদের জামিনের অর্থ তারা চাঁদা তুলে দেবে। তৃণমূলের ছাত্র ১ নম্বর ব্লক সভাপতি বিমান ঝা, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জেলা সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ মহালদার সহ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মোজাহিদের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে পুলিশ।

মৃত আশুতোষ দাসের মেয়ে দেবাদৃতা দাস বলেন, আমার মনে হয় ব্রিটিশ শাসন এর থেকে ভালো ছিল। যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তাদের বিরুদ্ধে না নিয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করল পুলিশ। আমাদের এলাকার লোকেরা আমাদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে কেস খেলো। তাই তাদের জামিনের অর্থ যোগাড় করার জন্য আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলছি। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। এরকম হলে তো মানুষ আর মানুষের পাশে দাঁড়াবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা কল্পনা দাস বলেন, আমাদের কাছে এসেছিল সাহায্য নিতে।কেসের খরচের জন্য।আমরা সাহায্য করেছি।মানুষটা খুব ভালো ছিল।এই ভাবে মারা গেলো।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ মহালদার বলেন, পুলিশের এই ভূমিকা ঠিক নয়।মমতা ব্যানার্জী একটা শান্তির বাতাবরণ তৈরী করেছে রাজ্য জুড়ে।সেখানে এই ঘটনা খুব নিন্দনীয়।তবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যত মামলা হয় হোক।

উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সম্পাদক রুপেশ আগরওয়াল বলেন, পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ প্রশাসন স্বৈরাচারী শাসন চালাচ্ছে। এই ঘটনা খুব নিন্দনীয়। শাসকদলের যে নেতারা ছিলেন তাদেরও নাম আছে।তবে আমার মনে হয় পুলিশের পেছনে নেতাদের একাংশেরও মদত আছে।

কার্যত হরিশ্চন্দ্রপুরের মানুষ এই ধরনের ঘটনা আগে কখনো দেখেনি।প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা।সর্বস্তরের মানুষ সরব নিন্দায়।প্রশ্ন উঠছে গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদ দেখানো কি অপরাধ।একদিকে ঘাতক বাইক আরোহী কে ছেড়ে দিল পুলিশ।আর যারা তার গ্রেফতারের দাবীতে প্রতিবাদ করল তাদের বিরুদ্ধে হলো মামলা। এ যেন উল্টো রাজার উল্টো দেশ।