মহা বারুণী স্নান যাত্রা থেকেই শুরু হলো গ্রাম বাংলার প্রধান উৎসব চড়কের প্রস্তুতি

অবতক খবর,৩১ মার্চ,মলয় দে,নদীয়া:-পূর্ণব্রহ্ম পূর্ণাবতার শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব তিথির শুভক্ষণ হিসেবেই শুরু হয় চড়ক পুজোর প্রস্তুতি । বারূণীর স্নান যাত্রা শেরে শিবের উপাসকরা শুরু করেন সন্ন্যাসীব্রত।
গ্রামীণ বাঙালির একটি অন্যতম ধর্মীয় উৎসব চড়ক। এটি চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। শিবের গাজন আর নীলপুজোর মধ্য দিয়ে চড়কের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তবে গাজন আর নীলের মধ্যেই এর আনুষ্ঠানিকতা সীমাবদ্ধ নয়।

এই দুইটি স্তুতিমূলক গীতের বাইরেও চড়কের রয়েছে বহু ক্রিয়া-কৃত্য। চড়ক মূলত শিব পূজোর উৎসব। চৈত্র সংক্রন্তির ১৫ দিন বা ৭ দিন আগ থেকে শুরু হয় চড়কের প্রস্তুতি। দিন পনের আগ থেকেই এই উৎসবের আমেজ শুরু হয় গ্রামের বারোয়ারি তলায়, গ্রাম দেবতার থানে বা গ্রামের শ্মশানে। কখনো কখনো গৃহস্থ বাড়ির আঙিনা এর প্রস্তুতি লক্ষ করা যায়। যেখানে আর যে ভাবে এটি উপস্থাপিত হোক না কেন এর মূল আবহ জুড়ে থাকে বাঙালির কৃষি দেবতা শিবের আবাহন। শিব এই উৎসবের মুখ্য তাই তাকে সন্তুষ্ট করাই পূজারীদের লক্ষ্য।

বর্তমানে এই উৎসব বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এক কালে এটি বৌদ্ধ উৎসব হিসেবে পরিগণিত হতো। এই উৎসবের সঙ্গে এক কালে বাঙালি মুসলমানের অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হতো। ধারণা করা হয় এই উৎসবের উৎস বৌদ্ধ ধর্ম ঠাকুরের পুজো। সমকালে শিব বা নীল পূজার মধ্য দিয়ে যে উৎসব অনুষ্ঠিত হয় তা মূলত বৌদ্ধ ধর্ম ঠাকুরের পুজোর বিবর্তিত রূপ। ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের উত্থানের পর্বে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত বৌদ্ধ সম্প্রদায় আত্মগোপন শুরু করে।

এই সময় তারা নির্জন, অরণ্য, প্রান্তীয় অঞ্চলে বসবাস করতে থাকে। ধর্মীয়ভাবে নিজেদের স্বতন্ত্র বজায় রাখার স্বার্থে নির্ভৃতে নির্জনে নিজেদের ধর্মাদর্শকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। কখনো বা আধিপত্যবাদী ধর্ম তথা ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মের ক্রিয়া-কৃত্য-দেবকল্পনার সঙ্গে নিজেদের সংহতি প্রকাশ করে। কখনো মাটির ঢিবি, কাঠ, পাথরের অমশ্রিন প্রতিকৃতি, গাছ ইত্যাদির মধ্যে স্বদেবতার কল্পনা করতে থাকে।

এরই ফলশ্রতি হলো চড়ক উৎসব। যা শিবের আদলে মূলত ধর্ম ঠাকুরেরই পুজো। আধিপত্যবাদী ধর্ম ও দেবতার নিছক নিজেদের পরাজয় মেনে নিয়েছে। পরবর্তীতে পরাজিত বৌদ্ধেরা সুযোগ মতো আবার নিজস্ব দেতার অধিষ্ঠান ঘটিয়েছে। যেমন চড়কের ঠিক এক মাস পর ধর্মদেল নামে হুবহু আর একটি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। যা চড়কের ক্রিয়া-কৃত্যের সমগোত্রীয়।

এ কারণে ধারণা করা হয় আজকের চড়ক উদযাপন করা জনগোষ্ঠী বৌদ্ধ সম্প্রদায়েরই অশেষ। পরবর্তীতে এরাই আবার ইসলামী সংস্কৃতায়নের ফলে মুসলমান হয়েছে। এ কারণে অর্ধশতাব্দী আগেও পূর্বের বিশ্বাস আর আচরণের ধারাবাহিকতায় মুসলান সম্প্রদায়ও চড়কের আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া সম্পাদন করতো। যারা চৈত্র সংক্রান্তির পূর্বে গ্রামে গ্রামে চড়কের আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া হিসেবে বালা গান আর অষ্টক গান পরিবেশন করে থাকে।