অবতক খবর,১৯ জুলাইঃ পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করেছে মূর্তি। মঙ্গল পান্ডের জন্মদিনে মালাই পড়লো না পৌর কর্তৃপক্ষের থেকে। কাঁচরাপাড়া পৌরসভা শতাব্দী প্রাচীন। এই শহরে মূর্তি দেখভাল করার দায়িত্ব তাদের কোন কালেই ছিল না এখনো বোধ করি নেই। স্বাধীনতার পরবর্তীকাল থেকে ডান,বাম বহু রাজনৈতিক দলের দ্বারা কাঁচরাপাড়া পৌরসভা গঠিত হয়েছে কিন্তু কোনকালেই আঞ্চলিকভাবে ঐতিহ্য রক্ষার জন্য কোনো হেরিটেজ কমিটি গঠিতই হয়নি।

ফলত,এই অঞ্চলে যে মনীষীরা এসেছেন যাদের মূর্তি স্থাপিত হয়েছে,তারা পৌর প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কাল থেকে আজ পর্যন্ত অবমানিত, অপমানিত অবহেলিত হয়ে চলেছেন। কাঁচরাপাড়া পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে মনীষীদের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।

যাই হোক, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে শহীদ মঙ্গল পান্ডে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। ১৯ জুলাই ১৮২৭ সালে তাঁর জন্ম এবং ৮ এপ্রিল ১৮৫৭ সালে তিনি ফাঁসিতে শহীদের মৃত্যুবরণ করেন।

সিপাহী বিদ্রোহের নায়ক ছিলেন তিনি। আমাদের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ব্যারাকপুর সেনা ছাউনির বেঙ্গল নেটিভ ইনফ্যান্টির সেপাই মঙ্গল পান্ডে প্রথম সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা করেন। পরে তামাম ভারতবর্ষে তা ছড়িয়ে পড়ে। ‌সিপাহী বিদ্রোহের আরেকজন সৈনিক যিনি মৃত্যুবরণ করেন তিনি হালিশহরের রাজীবলোচন রায়, বহরমপুর জেলে যে তিনি শহীদের মৃত্যুবরণ করেছিলেন তা পরবর্তীকালে প্রমাণ পাওয়া যায়।

মঙ্গল পান্ডে এমন দুঃসাহসী সিপাহী ছিলেন যে, তিনি সরাসরি জেনারেল বোর্গকে আঘাত করেন, গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় ঘোড়সওয়ার বোর্গের ঘোড়াটি জখম হয়। ফলে বোর্গ মাটিতে পড়ে যান। পরবর্তীতে তরবারি হাতে নিয়ে জেনারেল বোর্গ আক্রমণের জন্য মঙ্গল পান্ডের কাছাকাছি এলে মঙ্গল পান্ডের তরবারিতেই তিনি নিহত হন। এই ঘটনার আগেই মঙ্গল পান্ডে সিপাহীদের সংহত নকরেছিলেন।

মঙ্গল পান্ডের একটি আবক্ষ মূর্তি কাঁচরাপাড়া পৌর অঞ্চলে মহাত্মা গান্ধী রোডস্থিত রেল ব্রিজের কাছে স্থাপন করা হয়। উল্লেখযোগ্য এই মূর্তিটি স্থাপন করা হলেও সেখানে কোন ফলক নেই। সেখানে মঙ্গল পান্ডের কর্মজীবন দেশপ্রেম এমনকি তাঁর জন্ম-মৃত্যুদিনের কোনো উল্লেখ নেই। বোধ হয় মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিনই তিনি একবার মাত্র মালা পেয়েছিলেন।

 

পরবর্তীতে তাঁর গলায় আর মালা জোটেনি। প্রতিদিনই অনাদরে অবহেলায় রেল ব্রিজের কাছে পড়ে থাকে এই মূর্তি।

এ বছর তাঁর ১৯৬ তম জন্মদিন। আজও দেখা গেল সকাল সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে সম্মান জানানো হয়নি।

আজ কাঁচরাপাড়ার শ্রমজীবী মানুষ সিটু ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মঙ্গলপান্ডের মূর্তিটি সাফসুতরো করা হয়।তাতে নেতৃত্ব দেন মানস চক্রবর্তী ও রাকেশ দাস। তাঁর আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান সিটু নেতা শম্ভু চ্যাটার্জী, অঞ্জন বোস হাবলি সরকার স্বপন সিংহ রায় নিখিল দাস এবং অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষ।

মূর্তিস্থলে মঙ্গল পান্ডের জীবন ও কর্মকাণ্ড নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন শম্ভু চ্যাটার্জী।