অবতক খবর,২৫ এপ্রিল: সর্বহারার শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর আর কিছুই নেই। ‌আছে জয় করার জন্য সমগ্র দুনিয়া। মহামতি দার্শনিক কার্ল মার্কস একথা বলেছিলেন। তিনি কোন পার্টিবাজি বা দলবাজির জন্য এ কথা বলেননি। ‌ এটা হচ্ছে মার্কসিজম,এটা একটা দর্শন। এই সমস্ত সাইনবোর্ড মার্কা দলেরা একে একটা দলবাজি স্লোগানে পরিণত করেছে। ‌

নির্বাচনের সপ্তম দফা আসন্ন। অষ্টম দফায় নির্বাচন শেষ। ‌ষষ্ঠ দফার নির্বাচন হয়ে যাবার মুখে বন্ধ হয়ে গেল জুট মিল।এই জুট মিলে কাজ করতেন ৪ হাজার শ্রমিক। যে জুটমিলটি বন্ধ হলো গঙ্গার তীরবর্তী উপকূলে ভাটপাড়া রিলায়েন্স জুট মিল। ৪ হাজার শ্রমিক তাদের নোকরি হারালো। তার সঙ্গে পথে বসে গেলেন আরো তিনগুণ, অর্থাৎ পরিবারের সংখ্যা তিনজন করে ধরা হলে প্রায় ১২ হাজার মানুষ হাভাতে হয়ে গেল, তাদের মুখের অন্ন জোগানের ব্যবস্থা রইল না।

এই জুটমিলে যারা কাজ করেন তারা সাধারণত ভাগওয়ালা বা বদলি শ্রমিক, দিনমজুর বা সাপ্তাহিক মজুর। এই প্যানডেমিক অবস্থায়,এই অতিমারি কালে এরা এখন শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বিবেকানন্দের ভাষায় এরা হয়ে যাবে পওহারী- বায়ুভুক বাবা।তাও হবে কি করে জানি না। কারণ এই বায়ুমন্ডলে এখন নাকি করোনার জীবাণু ভাসমান। করোনার এই সঙ্কটকালে তারা আরো একটি বিপর্যয়কর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। ‌

শ্রমিক যেখানে পেটের সংগ্রাম পেটের দানাপানির লড়াই, স্বাভাবিক তারা ক্ষুব্ধ, উত্তেজিত। ভাঙচুর হয়েছে সমস্ত শ্রমিক ইউনিয়নের দপ্তরগুলি।

ভাটপাড়া রিলায়েন্স জুট মিল অঞ্চলটি ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী। শ্রমিকের নিরাপত্তা দেওয়ার সময়, শ্রমিকদের রুটি-রুজি নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রের কোনো রকম উদ্বেগ, চিন্তা দেখা দেয়নি। কিন্তু মালিকের নিরাপত্তার কারণে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু ঘটনা ঘটে যাবার পর সরকারি যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, তার কিন্তু শ্রমিকের পেটের জন্য তাদের রুটির জন্য, তাদের রুজির জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই তৎপরতা তখন দেখা যায়নি।

এমনকি আগুন জ্বালিয়ে ছাড়খার করে দিয়েছে তারা তথাকথিত শ্রমিক ইউনিয়নকে। অর্থাৎ তারা বোঝাতে চাইছে তাদের পক্ষে লড়াইয়ের কোন শ্রমিক নেতা নেই সবাই অদৃশ্য বা লোক দেখানো নেতা আর এই দপ্তরগুলি নেতা এবং মালিকের যোগসাজশে আড্ডায় পরিণত হয়েছে। ‌ কি হবে এদের? এর কৈফিয়ৎ দেবে কে? কোন রাজ্য? কোন ভারতীয় রাষ্ট্র?

আজকের সংবাদপত্রে এই সমস্ত শ্রমিকের যে দুরবস্থা তার কোন উল্লেখ নেই। মিডিয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে প্রায় ৬৮টি জুটমিল। ভাগীরথীর উপকূল বিখ্যাত উপকূল। শ্রমিক নেতাদের অসংখ্য যাতায়াত। ‌ মহিলা শ্রমিক নেতা থেকে আরম্ভ করে সাধারণ শ্রমিক নেতা এখানে রাজনীতি করেছেন। এটা শ্রমিক রাজনীতির আঁতুড়ঘর। এখানে এসেছেন মহান শ্রমিক নেতা বঙ্কিম মুখার্জী, জ্যোতি বসু, মহঃ ইসমাইল, মহঃ আমিন,সুধারায়,সরস্বতী দেবী, মৈত্রেয়ী বসু, অণিমা চক্রবর্তীর মতো নেতৃবৃন্দ

শ্রমিকেরা মাঙ্ পুরা করো– দাবীতে সংহতি জানিয়ে কাজী নজরুল সভা করে গিয়েছেন এই অঞ্চলে।
এই শ্রমিক অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন একদিন জুট মিলের শ্রমিক সমরেশ বসু– শিকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে, লিখেছেন জগদ্দলের মতো উপন্যাস, লিখেছেন বিটি রোডের ধারে। সেই শ্রমিকরা আজ পথের ভিখিরি। তাদের দেখবার কেউ নেই।

ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ১৭টি জুটমিল বন্ধ হয়ে গেছে। হায় শ্রমিক! হায় দু’মুঠো অন্ন! এখন ক্রন্দন ভাসছে বাতাসে।

কবে শ্রমিকরা হাতের শৃঙ্খল মোচন করে লড়াইয়ে নামবে, কবে জ্বলে উঠবে দাবানল, সেই অপেক্ষায় রয়েছে ভাগীরথী উপকূল।