ভাটপাড়ায় চেয়ারম্যান মনোনয়ন নিয়ে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে নাজেহাল তৃণমূল দলঃ আলোচনায় বসলেন দীনেশ ত্রিবেদী

বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর ::- ভাটপাড়ার চেয়ারম্যান কে হবে এ নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী কলহ প্রায় সামনে চলে এসেছে। একদিকে নান্টু ঘোষের লবি রয়েছে, অন্যদিকে পার্থ ভৌমিকের লবি। আমরা প্রথমেই বলেছিলাম চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে আগে ছিলেন ভাটপাড়ার দাপুটে নেতা সোমনাথ সোম কিন্তু পরের দিকে তিনি দলের নেতৃত্বের জন্য স্বেচ্ছায় পেছনে চলে যান কিন্তু তারপরেই চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য হিমাংশু সরকার দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেন। বর্তমানে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যে তৃণমূল কাউন্সিলর নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিজেপিকে সমর্থন করতে পারে এমন অবস্থা বুঝে চেয়ারম্যান পদের জন্য বর্তমান নির্বাচিত চেয়ারম্যান সৌরভ সিং পুনরায় এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

19 জন তৃণমূলের পক্ষে থাকলেও চেয়ারম্যান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে 19 জন কাউন্সিলর তিন দলে বিভক্ত হয়ে গেছেন। একদল কাউন্সিলর তৃণমূলের পর্যবেক্ষক নান্টু ঘোষের পক্ষে রয়েছেন, অন্যদিকে রয়েছেন বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের লবি।

ভাটপাড়া এলাকা অর্জুন সিং- এর দাপট থেকে উদ্ধার করতে পার্থ ভৌমিকের ভূমিকা অতুলনীয় কিন্তু নান্টু ঘটকের সঙ্গে নিয়ে ভাটপাড়া বিধানসভার দলীয় চেয়ারম্যান ধরমপাল গুপ্তা অর্জুনকে টক্কর দিতে মাঠে নেমেছিলেন। ধরমপাল গুপ্তা অর্জুনের বিজেপিতে যোগদানের পর নান্টু ঘোষ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরে তৃণমূলে যোগদান করেন এবং অর্জুনের শক্ত ঘাঁটিতে কোনরকম মাটি তৈরি করার চেষ্টায় নামেন।

বর্তমানে ভাটপাড়ার নান্টু ঘোষ বনাম পার্থ ভৌমিকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে। পার্থ ভৌমিক পন্থী 12 জন কাউন্সিলর নান্টু প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে বেঁকে বসেন। প্রথমে ঠিক হয়েছিল গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব দেখে জেলা নেতৃত্ব ও রাজ্য নেতৃত্ব যাকে বেছে নেবে তাকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া হবে পার্থ ভৌমিক এই বার্তা পেয়ে পিছু হটতে গেছিলেন। তিনি নিজের প্রার্থী হিসেবে কাউকে মনোনীত করা থেকে বিরত থাকেন কিন্তু শেষের দিকে নান্টু ঘোষ নিজের প্রার্থী মনোনীত করার জন্য মাঠে নেমে পড়েন।

নান্টু ঘোষ যারা প্রথম থেকে তৃণমূলের থেকে গেছে বা তৃণমূল হয়ে লড়াই করেছে তাদেরকে চেয়ারম্যান প্রার্থী করার পক্ষে, যারা পরের দিকে যারা অন্য দল থেকে এসেছে বা বিজেপি গিয়ে ফের তৃণমূলে ফিরে এসেছে তাদেরকে চেয়ারম্যান করার পক্ষে তিনি কিছুতেই রাজি নন। তৃণমূলের পুরনো পুরনো কর্মীরাও এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাই নান্টু ঘোষ প্রথম থেকে লড়াই করে আসা মার খেয়েও দল না ছেরে দলে টিকে থাকা তৃণমূল কাউন্সিলর সত্যেন রায়ের পক্ষে তিনি দাঁড়িয়েছেন।

তবে সত্যেন্দ্রর পক্ষে দাঁড়ালেও নান্টু ঘোষ চালে ভুল করে বসেন। তিনি দলীয় বৈঠক না করেই সত্যেন্দ্রর হয়ে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে সমর্থন আদায় করতে মাঠে নেমে পড়েন আর এই খানেই চালে মার খেয়ে যান নান্টু ঘোষ। সত্যেনের পক্ষে বেঁকে বসেন অনেকে।

অন্যদিকে এভাবে প্রকাশ্যে চেয়ারম্যানের জন্য সমর্থন হাসিল করতে মাঠে নান্টু ঘোষ পন্থীদের মাঠের দেখে ফের সংগঠিত হতে শুরু করে পার্থ পন্থী কাউন্সিলররা। কাউন্সিলররা দফায় দফায় পার্থ ভৌমিকের সাথে বৈঠক করেন।

অন্যদিকে এই খবর প্রকাশ্যে চলে আসার পর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে জেলা নেতাদের ও বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে জেলা তৃণমূল অফিসে বৈঠক করেন দীনেশ ত্রিবেদী। বৈঠকে ডাকা হয় ভাটপাড়া সমস্ত দলীয় কাউন্সিলরদেরও।

দলীয় বৈঠকে ও কাউন্সিলরদের বৈঠকে চেয়ারম্যান প্রার্থী লড়াকু নেতা অর্জুন এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বারেবারে আক্রান্ত হওয়া তৃণমূল 23 নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সত্যেন্দ্র পরিষ্কার জানিয়ে দেন দলীয় নেতৃত্ব ঠিক করবে যাকে তারা তাকে চেয়ারম্যান হিসাবে মেনে নেবেন, সেটাই ফাইনাল ডিসিশন নেবেন তারা। অন্য কাউন্সিলররি একই কথা জানায়। এক সুরে সকলে বলেন দীনেশ ত্রিবেদী যা করবেন তারা সকলে মিলে এককভাবে সেই ফয়সলা গ্রহণ করবেন।

কাউন্সিলরদের সাথে বৈঠকের পর আলাদা করে বৈঠকে বসেন পার্থ ভৌমিক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নান্টু ঘোষ পরেশ দত্ত সুবোধ অধিকারী সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। বলা হয় যে এই মুহূর্তে 25 নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অরুণ ব্যানার্জি অনিদাকে চেয়ারম্যান করা হবে ও চেয়ারম্যান প্রার্থী সরকারকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হতে পারে।

এই প্রকারে কোনোভাবে এখন গোষ্ঠী কলহ মেটানো সম্ভব হলেও স্থানীয় নেতৃত্ব মনে করছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাস্তবে মিটে যায়নি এখনো সময় আছে অনেকে বেঁকে বসতে পারেন। আপাতত যে সিদ্ধান্ত নেওয়ি নেওয়া হয়েছে সেটি ফাইনাল করার জন্য সুব্রত বক্সির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোদ্দা কথা, সুব্রত বক্সীর কাছে দরবার করে যে তার নাম পাকাপোক্ত করতে পারবে সেই চেয়ারম্যান হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

অন্যদিকে কাউন্সিলরদের গোষ্ঠী ও তাদের যোগ্যতা বা প্রশাসনের সঙ্গে তাল রেখে চলার ক্ষেত্রে একটাই নাম উঠে আসছে তিনি হচ্ছেন সোমনাথ সেন । তবে সোমনাথ পন্থী বলে পরিচিত একজন জানান, সোমনাথ বাবু একজন দক্ষ নেতৃত্ব, পৌর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছের মানুষ। তাছাড়া আদালতে সমস্যা বা প্রশাসনিক সংস্থার ব্যাপারে দক্ষ বলে পরিচিত । তাই ভাটপাড়ার সব সমস্যার কথা মাথায় রেখে সোমনাথ শ্যামের নামে শেষ মোহর লাগতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ।এক কথায় ভাটপাড়া পৌরসভা চেয়ারম্যান নিয়ে শেষ চমক এখনো বাকি রয়েছে এটাই বলা বাহুল্য।