অবতক খবর,১৬ জানুয়ারি,নদীয়া: কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের মাজদিয়া গ্রামের বাসিন্দা দিলিপ মোদক। পেশায় মাজদিয়া স্টেশন সংলগ্ন একটি ছোট্ট রুটি ঘুগনির দোকান। পারিবারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন বলতে গেলে তার এই ছোট্ট দোকান। পরিবারে তারা তিনজন। দিলীপ মোদক, স্ত্রী কৃষ্ণা মোদক ও একমাত্র ছেলে দীপঙ্কর মোদক ঔষধের রিপ্রেজেন্টেটিভ কে নিয়ে সুখের সংসার ।

ভাগ্যের পরিহাসে গত 1 এক বছর আগে তাদের একমাত্র পুত্র দীপঙ্করের কিডনির অসুবিধার কারণে অকাল মৃত্যু হয়। পরিবারের একমাত্র ছেলে মারা যাওয়ায় মা-বাবার কান্নার আর শেষ থাকে না। এরপর থেকে ছেলের স্মৃতিকে আগলে রাখার জন্য দিলীপ মোদক ও তার স্ত্রী একটা জিনিস ভেবে নিয়েছেন যে ছেলের মঙ্গল কামনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা করবেন ।এই মানসিকতা নিয়ে প্রতিদিন সকালে উঠে কৃষ্ণা দেবী নীজের হাতে করে রান্না করে দেন স্বামীর হাতে ।

তার ছেলে দীপঙ্কর যে সমস্ত খাবার খেতে ভালো বাসতো সেই ধরনের খাবার করেন ।আর রান্নার সময় কৃষ্ণা দেবীর চোখের কোনে অশ্রুবিন্দু ঝড়ে । আবার কোন সময় আছিলায় শোনা যায় দীপঙ্কর খেয়েযা ,।সাড়া নাপেতেই কৃষ্ণা দেবীর চোখের কোনে অশ্রুবিন্দু ঝড়ে পড়ে আর বলতে। শোনা যায় তাইতো আমারী ভুল তুইতো অভিমান করে চলে গেছিস ,আরতো ফিরবি না । তবে যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস ।

রান্না করা খাবার টিফিন বক্স ভর্তি করে স্বামীর হাতে তুলে দেন ।আর স্বামী দিলীপ মোদক ছেলের ফটো জরিয়ে ধরে আদর করে দোকানের উদ্দেশ্য সাইকেল চালিয়ে যান ।সেই খাবার প্রত্যেকদিন তার দোকানের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরে ,অন্ধ, অসহায়, যারা দিনের পর দিন খেতে পায়না তাদের প্রত্যেককে সেই খাবার নিজের বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে খাওয়ান । শুধু খাবার খাইয়েই তৃপ্তি হন না ।

যাদের হাতে তুলে খাওয়ার খমতা নেই তাদের নীজে হাতে করে খাইয়ে দেন । আর যারা একটু নিজে হাতে করে খেতে পারেন তাদের মুখেও অন্ন তুলে দেন। কারণ তিনি এটাই মনে করেন যে এই ভবঘুরে পাগল লোকদের খাওয়ালে তাদের একমাত্র ছেলের আত্মার শান্তি পাবে ।এই ভাবে ভবঘুরেদের খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে তিনি তার নীজের ছেলেকে দেখতে পান বলে জানালেন দিলীপ মোদক।

এই স্বার্থহীন সমাজে যখন মানুষ মানুষের অধিকার টাকা পয়সা নিয়ে লড়ে যাচ্ছে তখন এরকম এক বিচিত্র দৃশ্যকে দেখে এলাকার সাধারণ জনগণ ও পথচারীরা সাধুবাদ জানিয়েছেন দিলীপ বাবুর এহেন প্রয়াসকে । এহেন প্রয়াসে দিলিপ বাবু নিজের ছেলেকে পাবেননা জানি, তবে এটা বলা যেতেই পারে জীবনের বেঁচে থাকার রসদ পাবেন । দিলীপ বাবুর এহেন প্রয়াসকে আমরা কুর্নিশ জানায় ।