সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স স্বাস্থ্য সাথী মা মাটি মানুষ শব্দগুলি মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলে গেল….

ব্যাগ হাঁটছে
তমাল সাহা

ব্যাগ তো বটেই ব্যাগবাহকেরাও জানে না ব্যাগ ও ব্যাগকবাহক যৌথভাবে একটা কবিতা না হোক গদ্য হয়ে উঠতে পারে।
তবে ব্যাগটিকে অবশ্যই শক্তপোক্ত হতে হবে এবং ব্যাগবাহকেরও মানসিক দৃঢ়তা থাকা চাই।

শুধু জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না। জাতকের মৃতদেহ বহন করার সামর্থ্য থাকলেই তাকে পিতা বলা যায়।

অ্যাম্বুলেন্সের বাংলা পরিভাষা আমি জানিনা।
তার ভাড়া আট হাজার টাকা এটা আমি জানি।
পরিযায়ী পাখি দেখছি।
পর্যটক পরিব্রাজক শব্দ দুটিও শুনেছি টমাস রো, ইবন বতুতা এবং হিউয়েন সাং-এর ঐতিহাসিক কারণে।
কিন্তু মানুষ পরিযায়ী হয় তা অনেক পরে জেনেছি।
পরিযায়িতার সঙ্গে পেটের দানাপানির সম্পর্ক আছে।

অসীম দেবশর্মা, পরিযায়ী মজুর।
সে একজন পিতা। পিতার নামটি তো শুনতে ভালই। প্রথমে হতাশ হয়ে পড়েছিল। গালে হাত দিয়ে বসে পড়েছিল হাসপাতালের চত্বরে। কিছুক্ষণ ভাবলো।
আট হাজার টাকা! শ্বাসপতন হলো।
ইতিমধ্যে ষোল হাজার টাকা ওষুধপত্তরে খরচ হয়ে গিয়েছে। শিশুটি মারা গেছে। ফিরতে হবে মৃতদেহ নিয়ে।
তেড়েফুঁসে উঠল দেবশর্মা, দূর শালা! অ্যাম্বুলেন্সের নিকুচি করেছে।
এমন উচ্চারণ করেছে কিনা আমি অবশ্য নিজের কানে শুনিনি। সেখানকার বাতাস উড়ে এসে ফিসফিস করে আমার কাছে বলে গেছে একথা।

ব্যাগ তো আছে!
শিশুর মৃতদেহ দ্রুত ব্যাগে ভরে ফেলল দেবশর্মাবাবু।
কাপড়চোপড় সঙ্গে যা এনেছিল রাত কাটানোর জন্য তা দিয়ে ঢেকে দিল।
এবার চাপলো বাসে।

কেল্লাফতে!বাস কন্ডাকটারও কিছু বুঝল না‌। কারণ পচনের গন্ধ তো তখনও বেরুই নি!
সবার চোখে ধুলো দিয়ে মরা শিশু ও বাপ একসঙ্গে ফিরে এলো বাড়ি।

বাপ শুধু ভাবলো,
শিশুটি পাঁচ মাসের ছিল। কী করত সে শিশুটি যদি আরো বড় হতো এবং ভারী!

ঘটনা ১৩ মে ২০২৩ শনিবার। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ শিলিগুড়ি। দেবশর্মা বাবু থাকেন কালিয়াগঞ্জ মোস্তাফানগর ডাঙ্গিপাড়া