অবতক খবর,২৭ জুলাইঃ হালিশহরের দুই বন্ধু সোমনাথ মালো এবং সুরাজ সিং,তাদের বহুদিনের ইচ্ছে যে তারা দৌড়ে দিল্লি পাড়ি দেবেন। না না কোন শখ পূরণের জন্য নয়,বরং আমাদের দেশ ভারতবর্ষ সম্বন্ধিত কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কি সেই দাবি? কি চিন্তাভাবনা তাদের? কিভাবে এতটা পথ পাড়ি দেবেন তারা? পড়ুন এই প্রতিবেদনে।

সোমনাথ মালো জানান,”২০১৯ থেকে একটা ছোটো স্বপ্ন দেখে আসছি,ধর্ষণমুক্ত ভারতবর্ষ।কারণ এর মতো জঘন্য অপরাধ ঈশ্বরও ক্ষমা করবেন না।কবে কমবে এইসব?

সেই উদ্দেশ্যেই আমি (সোমনাথ মালো)আর আমার বন্ধু ভাই(সুরাজ সিং) এবার নেমে পড়বো রাস্তায়। কলকাতা থেকে দিল্লি ট্রেনে বাসে গেলে কি আমাদের এই দাবি গুলো সরকারের চোখে পড়বে? তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ১,৩৭১ কিমি রাস্তা দৌড়ে যাওয়ার।

আমাদের প্রথম দাবিঃ

রেপের মতো জঘন্য অপরাধ নিয়ে।

গোটা ভারতে মেয়েরা আজও পরাধীন। তারা পারেনা রাতের রাস্তায় একা হেঁটে বাড়ি পৌঁছাতে, তারা পারেনা লোকসমাজে নিজের ইচ্ছা মতো কোনো কাজ করতে। মেয়েদের সব সময় বোঝা মনে করে এই সমাজ।NCRB রিপোর্ট চেক করলে দেখতে পারবেন প্রতি ৪ ঘণ্টায় ১জন করে মেয়ের ধর্ষণ হয়।করোনা মহামারীতেও এই জঘন্য অপরাধ কমেনি, উল্টে বেড়েই চলেছে।

গত ৪ বছরে NCRB রিপোর্ট চেক করে দেখুন তাহলে বুঝতে পারবেন আমরা কোন সমাজে বাস করছি।

একজন মেয়ের সাথে এই জঘন্য অপরাধ হলে কেনো সেই অপরাধ করা মানুষ গুলোর সাজা পেতে বছরের পর বছর লেগে যায়?কেনো তাদের ফাঁসি না দিয়ে কিছু দিনের জেল হয়?

নেতার ছেলেরা এই অপরাধ করলে কেন সেটাকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয় না?

এই নাকি আইনের চোখে সবাই সমান!

আমরা চেষ্টা করছি আর করে যাবো। আমি এই জঘন্য অপরাধ কমানোর জন্য যতটুকু করতে পারবো করবো।

আমাদের দ্বিতীয় দাবিঃ

ধর্ম নিয়ে কেন এত লড়াই? কেন আজ সবাই আলাদা? কেন আমরা নিজেকে ভারতীয় বলতে লজ্জা পাই? কেন আমি হিন্দু,আমি মসুলমান,শিখ হয়ে গর্ব করি?

যারা এই দেশটার জন্য নিজের জীবন দিয়ে গেছেন তারা ধর্মের মানসিকতা নিয়ে থাকলে আজও আমরা স্বাধীনতা পেতাম না। কেন আজ ভারত শুধু ধর্মের মানুষদের মধ্যে ভাগ হয়ে যাচ্ছে? আমরা সবাই ভারতীয়। ভারতের জন্য জীবন দেওয়া আমাদের কর্তব্য। আর এর জন্য গর্ব করাই আমাদের মূল ধর্ম। ভারতকে ভালোবাসো, নেতাদের কথা শুনে নিজের সুন্দর দেশ টাকে নষ্ট করো না।

তৃতীয় দাবিঃ

ক্ষুধার্ত ভারতবর্ষ।শুনতে খারাপ লাগছে কিন্তু এটাই যে সত্যি।কখনো কলকাতার রাস্তায়,মুম্বাইয়ের রাস্তায় হেঁটে দেখেছেন একদিন? সারাদিন এই শহরে সুন্দর জায়গা গুলো ছেড়ে রাস্তার দু পাশে থাকা মানুষ গুলোর দিকে চেয়ে দেখবেন, তারা এক মুঠো খাবারের জন্য বসে থাকে। তারাও কাজ করে, পরিশ্রম করে,তাদেরও অনেক স্বপ্ন আছে। কিন্তু কি করবে তারা যে অসহায়। তারা ঠিক মতো খাবার যেটুকু পায় না আর তাদের স্বপ্ন গুলো যে এক মুঠো খাবারের থেকে অনেকটা বড়ো, তাদের কথা কি কোনোদিন কেউ ভেবেছে? তাদের জন্য কি রাস্তা অবরোধ হয়েছে? কেউ আওয়াজ উঠিয়েছে? ওঠায় নি। আজ কত শিশু খাবারের জন্য অপুষ্ঠিতে মারা যায়। এখনো যখন এই লেখাটা পড়ছেন তখনও ওই পথের ধারে থাকা মানুষ গুলো খালি পেটে রয়েছে, সরকার কি পারে না তাদের এই প্রয়োজন মেটাতে?”

এই ছিল তাদের মূল দাবি। আর এই দাবিগুলিকে সামনে রেখে তারা পাড়ি দিচ্ছেন এতটা পথ এবং চেষ্টা করছেন বিষয়গুলিকে নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার।

আর তাদের এই পথ চলায় সহযোগিতা করেছেন বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারী, কাঁচরাপাড়া পৌরসভার পৌরপ্রধান কমল অধিকারী এবং হালিশহর পৌরসভার পৌরপ্রধান রাজু সাহানি সহ অন্যান্যরা।