অবতক খবর,১৩ মার্চঃ নেতাদের থেকে তুলে নেওয়া হলো ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের দেওয়া সমস্ত সিকিউরিটি। নেতা, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যানদের সুরক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছিল ১-২ জন করে সিকিউরিটি। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার একটি অর্ডার জারি করে সেই সমস্ত সিকিউরিটি তুলে নিয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের মোট ৪২জনের সিকিউরিটি তুলে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কাঁচরাপাড়া,হালিশহর,নৈহাটি,ভাটপাড়া,জগদ্দল, টিটাগড়, নিমতা এই সমস্ত অঞ্চলের নেতা নেত্রীদের ১-২ জন করে সিকিউরিটি দেওয়া হয়েছিল। আজ তারা শেষ সিকিউরিটি পাচ্ছেন। আগামীকাল থেকে এই সিকিউরিটি তাদের কাছে থাকবে না। যাদেরকে সিকিউরিটি দেওয়া হয়েছিল যেমন নৈহাটি পৌরসভার চেয়ারম্যান অশোক চ্যাটার্জী, তাঁর দুটি সিকিউরিটি ছিল। দুজনকেই তুলে নেওয়া হয়েছে। ঠিক একইভাবে সনৎ দে,নৈহাটির টাউন সভাপতি ও সিআইসি তাঁর দুটি সিকিউরিটি ছিল। সেই দুটিও তুলে নেওয়া হয়েছে। তুলে নেওয়া হয়েছে নৈহাটি সিআইসি রাজেন্দ্র গুপ্তার সিকিউরিটি। এর পাশাপাশি নৈহাটির পার্থ প্রতিম দাশগুপ্তকে একটি সিকিউরিটি দেওয়া হয়েছিল। সেটিও তুলে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ নৈহাটির ৪ জন যে নেতা ছিলেন,তাদের মোট ৬টি সিকিউরিটি ছিল,তা তুলে নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি হালিশহর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান শুভঙ্কর ঘোষকে যে দুজন সিকিউরিটি দেওয়া হয়েছিল,সেটিও তুলে নেওয়া হয়েছে। তুলে নেওয়া হয়েছে ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় দাসের সিকিউরিটি। এছাড়াও সিকিউরিটি পাচ্ছিলেন আরো ২ জন। যার মধ্যে প্রাক্তন চেয়ারম্যান অংশুমান রায়,তিনিও সিকিউরিটি পাচ্ছিলেন। তাঁর সিকিউরিটিও তুলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও হালিশহর ১৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অশোক যাদব খুব কম সময় ধরে সিকিউরিটি পাচ্ছিলেন,১ জন সিকিউরিটি নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছিলেন,সেই সিকিউরিটিও তুলে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ হালিশহর পৌর এলাকার ৪ জনকে যে সিকিউরিটি দেওয়া হয়েছিল,শুভঙ্কর ঘোষ,অশোক যাদব, অংশুমান রায় ও মৃত্যুঞ্জয় দাস।এই ৪ জনের সিকিউরিটি তুলে নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি কাঁচরাপাড়ার ২ জন সিকিউরিটি পাচ্ছিলেন। আলোরানি সরকার তৃণমূল নেত্রী হিসেবে সিকিউরিটি পাচ্ছিলেন। তাঁর সিকিউরিটিও কিন্তু তুলে নেওয়া হয়েছে। তুলে নেওয়া হয়েছে সোনালী সিংহ রায়ের সিকিউরিটি। তিনি জেলা মহিলা নেত্রী এবং ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে সিকিউরিটি পাচ্ছিলেন।

ঠিক একইভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে ভাটপাড়ার বেশ কয়েকজন নেতা নেত্রীর সিকিউরিটি। ভাটপাড়ার সিআইসি অমিত গুপ্তার সিকিউরিটি তুলে নেওয়া হয়েছে। তুলে নেওয়া হয়েছে প্রিয়াঙ্গু পান্ডের একটি সিকিউরিটি। তুলে নেওয়া হয়েছে জীতেন্দ্র সাউ অর্থাৎ টাউন সভাপতি জিতু বলে বিখ্যাত অঞ্চলে, তাঁর দুটো সিকিউরিটিও। এর পাশাপাশি ভাটপাড়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা অর্জুন সিং-এর ভাইপো সৌরভ সিং এর দুটি সিকিউরিটি তুলে নেওয়া হয়েছে। তুলে নেওয়া হয়েছে ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সত্যেন রায়ের সিকিউরিটি।

ঠিক একইভাবে জগদ্দলের প্রাক্তন বিধায়ক পরেশ বাবুর সিকিউরিটিও তুলে নেওয়া হয়েছে।

তুলে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন এলাকার মোট ৪২ জন নেতার সিকিউরিটি। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্গত যে থানাগুলি রয়েছে তাদের পক্ষ থেকে নেতা নেত্রীদের যে সিকিউরিটি দেওয়া হয়েছিল তা সমস্ত তুলে নেওয়া হলো। আগামীকাল অর্থাৎ ১৪ই মার্চ থেকে এই সিকিউরিটিদের নিজ নিজ থানায় ডিউটির জন্য রিপোর্টিং-এর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, ব্যারাকপুর ১- এর ব্লক সভাপতি রানা দাশগুপ্ত দীর্ঘদিন ধরে তিনি সিকিউরিটি বিহীন ছিলেন। তিনি বারবার পুলিশ কমিশনার এবং অন্যত্র সিকিউরিটির জন্য আবেদন জানিয়েছেন। সিকিউরিটি কমিশন তাঁকে ডেকে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় রানা দাশগুপ্ত জানান, আতিপাতি কাউন্সিলর যাদের কোন ভূমিকাই নেই,তারাও সিকিউরিটি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ তাঁর উপর বোমা গুলি চলল তারপরেও তাকে সিকিউরিটি দেয়া হয়নি। সিকিউরিটির অভাবে তিনি অসুরক্ষিত বোধ করছেন। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে তাঁকে সিকিউরিটি দেওয়া হচ্ছে না। তিনি পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করে বলেন,পেছন থেকে দলের ই কিছু লোক তাঁর সিকিউরিটিতে বাঁধা দিচ্ছে। রানা দাশগুপ্তকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন যে, ইতিমধ্যে কদিন আগেই তাঁকে সিকিউরিটির জন্য পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে ডাকা হয়েছিল। তিনি সিকিউরিটি কমিশনারের সঙ্গেও কথা বলেন। কিন্তু এখনো তিনি সিকিউরিটি পাননি। কোথায় কি কারণে আটকে গেছে, তিনি তা বুঝতে পারছেন না।

তবে সিকিউরিটি তুলে নেওয়া নিয়ে এক কাউন্সিলরকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদেরই যদি সিকিউরিটি নিয়ে ঘুরতে হয় তাহলে জনগণের নেতা নেত্রী হিসেবে নিজের কোন দায়িত্ব থাকে কি? তিনি বলেন, জনগণের কাছে যেতে হবে,কথা বলতে হবে। সিকিউরিটি নিয়ে চলাফেরা করা নেতা কাউন্সিলরদের একটা স্টাইল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিহার ইউপি’র নেতাদের মত বাংলার নেতারাও সিকিউরিটি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে চাইছে।এখন নেতারা তাদের স্ট্যাটাসের সিম্বল হিসেবে তা গ্ৰহণ করছেন। এই কালচার ইউ পি বিহার থেকে আমদানি করেছে এই নেতারা। কিন্তু বাংলার আতিপাতি কাউন্সিলররাও কিন্তু সিকিউরিটি নিয়ে মানুষকে চমকে বেরাচ্ছেন। সেটা ভালো লক্ষণ নয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ যখন রয়েছে, দুয়ারে দুয়ারে যখন যেতে হচ্ছে, নিজের এলাকায় যেতে হলে যদি সিকিউরিটি নিতে হয় তাতেই বোঝা যায় যে, নেতাদের গ্ৰহণ যোগ্যতা মানুষের মধ্যে কোন জায়গায় গেছে‌।