অবতক খবর,মালদা;০৯এপ্রিল: পুলিশের হাতে আক্রান্ত সাংবাদিক। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং শারীরিক নিগ্রহ। প্রাণনাশের হুমকি। থানার ভিতরে বেআইনি সালিশি সভার ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত সাংবাদিক। থানা চত্বরেই সাংবাদিককে মেরে ফেলার হুমকি কর্তব্যরত পুলিশের। ভাইরাল হল ভিডিও।

এবার এমনই এক ঘটনার ছবি ধরা পরলো রবিবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা চত্বরে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে স্থানীয় এক সাংবাদিক তনুজ জৈন কে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন ওই হরিশ্চন্দ্রপুর থানারই এক কর্তব্যরত অফিসার বিকাশ হালদার। ঘটনায় প্রকাশ থানার ভেতরে স্থানীয় একটি বিবাদের মীমাংসা চলছিল। এই সময় টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক থানার ভেতরে ঢুকে সালিশি সভার ছবি তুলতে থাকে। সে সময় ওখানে থাকা ওই থানার অফিসার বিকাশ হালদার তাকে বাধা দেয়। তারপরেই জোরপূর্বক ওই ছবি সাংবাদিকের ক্যামেরা থেকে মুছে দেওয়া হয়।

এরপরই ওই সালিশি সভার উপস্থিত থাকা কয়েকজন সদস্য এবং ওই অফিসার মিলে তনুজ জৈনকে আক্রমণ করেন। থানার সামনেই তাকে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়। এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। ঘটনার চেচামেচিতে স্থানীয় লোকেরা ছুটে এসে গন্ডগোল থামান। আর এই ঘটনার সমস্ত ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই থানার ভিতরে কেনই বা সালিশি সভা করা হচ্ছে এই নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন এলাকার বিরোধী দলের নেতৃত্বরা। তাদের আরো অভিযোগ এই ব্যাপারে সাংবাদিক খবর তুলতে গেলে কেনই বা থানার অফিসার দলবল নিয়ে সাংবাদিককে আক্রমণ করছেন। এই ঘটনায় শাসকদলের নেতৃত্বরাও কড়া সমালোচনা করেছেন।বিরোধীরাও ক্ষুব্ধ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। আগে তৃণমূল হুমকি দেওয়ার কাজ করত এখন পুলিশকে দিয়ে করাচ্ছে খোঁচা সিপিআইএমের। থানার ভেতর সালিশি সবার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। সংবাদ মাধ্যমের ওপর আক্রমণের ঘটনায় নিন্দায় সরব হয়েছেন স্থানীয়রাও। সমগ্র ঘটনায় ছড়িয়ে পড়েছে চাঞ্চল্য।

সিপিআইএমের জেলা কমিটির সদস্য শেখ খলিল বলেন, সংবাদ মাধ্যমের কাজ খবর করা। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ছবি তুলবে না তো কারা তুলবে। এক সময় এই হুমকি দেওয়ার কাজ তৃণমূল করত। এখন তৃণমূল পুলিশকে দাড়া সেই কাজ করাচ্ছে।

বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য কিষান কেডিয়া বলেন, সংবাদ মাধ্যম হলো গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।আর থানার ভেতরে সালিশি সভা হবে কেন। এই ঘটনা সম্পূর্ণ অনৈতিক।

হরিশ্চন্দ্রপুর অঞ্চল তৃনমূল কংগ্রেসের সভাপতি সঞ্জীব গুপ্তা বলেন, সেই সময় আমি পাশেই একটি কাজে ছিলাম। চিৎকার শুনতে পেয়ে ছুটে গেছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের একটা সু সম্পর্ক থাকতে হবে। সেখানে এই ঘটনা কাম্য নয়।

আক্রান্ত সাংবাদিক তনুজ জৈন বলেন, আমি খবর পাই থানার ভেতরে একটি সালিশি সভা হচ্ছে।সেখানে ছবি তুলতে যায়। সেই সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী বিকাশ হালদার আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।এক সিভিক ভলেন্টিয়ার ধাক্কাধাক্কি করে থানা থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে।প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে সাংবাদিকরা খবরের প্রয়োজনে যে কোন স্থানে যেতে পারে।সেখানে থানার ভেতরে হচ্ছিল সালিশি সভা। সেই খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের বিরাগভজন হতে হলো সাংবাদিকদের।প্রশ্নটা হচ্ছে আইনের রক্ষকের যদি এমন ভূমিকা হয় তবে সমাজের কী অবস্থা হবে। প্রত্যেকেই সমগ্র ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই পুলিশ কর্মীকে।