অবতক খবর,২৬ নভেম্বর: বিগত কয়েকমাস ধরে বীজপুর অঞ্চলে যেভাবে চুরির ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে সকলেই অবগত। যার জেরে দেখা গেছে বদলি হয়ে গেছেন বীজপুরের আইসি সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরা।

এই চুরি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য আজ বীজপুর থানার নতুন ভারপ্রাপ্ত আইসি জয়প্রকাশ পান্ডে কাঁচরাপাড়ার সকল ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন।

সেখানে তিনি ব্যবসায়ীদের বলেন, “বিগত দিনে যে হারে চুরির ঘটনা ঘটেছিল, তাতে সকলেরই আরো বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের নিজেদের নিরাপত্তা আরও কঠোর করতে হবে। ভালো সিসিটিভি ক্যামেরা লাগান আপনারা। এছাড়াও আপনারা সরাসরি আমার ল্যান্ড লাইন এবং মোবাইল নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করবেন। আমি সবসময় আপনাদের পাশে আছি।”

এই সকল কথা তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন। এর পাশাপাশি তিনি এও বলেন,”যারা ঘুরে ঘুরে লোহালক্কর কেনেন এবং যে সকল লোহা-লক্করের দোকান অর্থাৎ কাবারির দোকান রয়েছে,তারা ১৫-২০ দিন দোকান বন্ধ রাখুন।”
আর এখানেই দেখা দিয়েছে সমস্যা।

যারা ঘুরে ঘুরে বাড়ি বাড়ি থেকে বিভিন্ন ভাঙাচোরা, লোহা লক্কর সংগ্রহ করেন এবং যে সকল কাবারির দোকান রয়েছে তারা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
তারা বলছেন,”চুরি ঠেকাতে বীজপুর থানা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত ভালো। তবে এক্ষেত্রে আমাদের পেটে কেন লাথি মারা হচ্ছে? আমাদেরও তো পরিবার রয়েছে। ‌ এই ব্যবসা থেকেই পরিবারের অন্ন জোগাই আমরা। ১৫-২০ দিন আমাদের দোকান,আমাদের রোজগার আমরা কেন বন্ধ রাখব? আমাদের ব্যবসার কারণেই যে চুরি বাড়ছে বা আমাদের ব্যবসা বন্ধ করলেই এই চুরি কমে যাবে এর পিছনে কি যুক্তি রয়েছে? এখন বীজপুরে নেশাখোরদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সেইসঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে অলিতে গলিতে নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রি। চারিদিকে রমরমা বেআইনি ব্যবসা। আর এইসব প্রকাশ্যেই চলছে।নেতা থেকে শুরু করে নগর প্রশাসন, থানা প্রশাসন সকলেই অবগত এই বিষয়ে। প্রশাসন সেগুলির দিকে নজর না দিয়ে কাবারিদের দিকেই নজর পড়ল কেন? কেন আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হল? নিয়ম তো সকলের জন্যই এক। দু’বছর যাবৎ করোনা পরিস্থিতির জেরে এমনিতেই ব্যবসায় মন্দা, তার উপর দোকান বন্ধ রাখলে আমাদের পরিবারের পেট চলবে কিভাবে?”

আমাদের অবতক-এর অফিসে এসে বেশ কয়েকজন এই প্রশ্নই তুলেছেন।

তবে তাঁরা চুরি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রশাসনের উদ্যোগে আশাবাদী। তারা বলছেন,”আমরাও চাই বীজপুরে চুরি বন্ধ হোক। আমরাও প্রশাসনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের পেট চলবে কিভাবে?” এই বলে তারা প্রশাসনের আগামী পদক্ষেপে অপেক্ষায় রয়েছেন।

এখন প্রশ্ন দোকান বন্ধ করে রেখে চোর ধরার যে অদ্ভুত প্রক্রিয়া প্রশাসন নিয়েছে তাতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই দিন এনে দিন খাওয়া ভাঙাচোরা জিনিসপত্তর যারা কেনেন সেই ব্যবসায়ীরা। তাদের উপার্জনের কেন্দ্র বন্ধ রেখে কি চোর ঠেকানো যায়? প্রশাসন কেন এমন তৎপরতা দেখাচ্ছেন না অর্থাৎ শহরে পুলিশি টহল পুলিশের নজরদারি এবং প্রশাসনের যে গোয়েন্দা দপ্তর রয়েছে তারাই তো যথেষ্ট তৎপর হলে চোর ধরতে পারেন। বায়ুমন্ডলে করোনা ভাইরাস রয়েছে। জানলা দরজা বন্ধ করে দিয়ে জনজীবন রুদ্ধ করে কি করোনা ভাইরাস ঠেকানো যাবে? সুতরাং করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য দপ্তর যদি তৎপর না হয়, পুলিশ প্রশাসন যদি তৎপর না হয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তা না হলে কিছুতেই করোনা ঠেকানো যায় না। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রশাসনকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডেরৎসঙ্গে তুলনা করা হয়। তারা কেন চোরের উপদ্রব ঠেকাতে পারছেন না, তারা কেন সমস্ত দায়িত্ব দোকানদার বা সাধারণ মানুষের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন? সিসিটিভি বসাতে হবে ,পাহারাদার রাখতে হবে দোকানদারকে তাহলে প পুলিশ কেন এমন কড়াকড়ি ভাবে তৎপর হচ্ছেন না যাতে চোরেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, ভয় পায়। পুলিশ কেন সাধারণ দোকানদারদের উপর ঘাবড়ে বন্দুক রেখে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইছেন? প্রশাসনিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত থানায় অলিখিতভাবে ডাকবাবু আছেন তিনি যে এই সমস্ত অন্যায় কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে যে টাকা তোলেন এটা তো ওপেন সিক্রেট। দোকান পনেরো কুড়ি পঁচিশ দিন বন্ধ রাখতে হবে তাদের জীবিকা নির্ভর এই ব্যবসা। সেটা বন্ধ ড়লে তাদের সংসার চালানোর দায়িত্ব কে নেবে, প্রশাসনের বক্তব্য কি, তা সাধারণ মানুষ জানতে চায়।