অবতক খবর,২৩ ফেব্রুয়ারি: বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী প্রকাশ্য জনসভায় যতই বলুন না কেন যে বিরোধীদের প্রচারে বাধা দেওয়া হবে না, বিরোধীরা যদি প্রচারে বাধা পায় তাহলে তাঁর সঙ্গে যেন যোগাযোগ করেন। এই কারণে প্রকাশ্য জনসভায় তিনি ফোন নাম্বার পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু এই সমস্ত নির্দেশ কি কেবলমাত্র মৌখিক? নাকি এটা রাজনৈতিক চাল? এই নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ধন্দ দেখা দিয়েছে। বিরোধী পক্ষ অর্থাৎ কংগ্রেস সিপিএম এবং বিজেপি সকলেই মনে করছেন যে এমন একটি রাজনৈতিক চাল দিয়ে তৃণমূল যে গণতন্ত্র প্রিয় দল, ভোটাধিকারের ব্যাপারে যে অনেক সচেতন, মানুষের অধিকারের ব্যাপারে যে সচেতন এমন একটি মুখোশপরা ভাষণ দিচ্ছে কিন্তু তলে তলে তারা বিরোধীদের নিকেশ করার কৌশল নিয়েছে।

ইতিমধ্যে ‘বহিরাগত’ প্রশ্ন তুলে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীরা সিপিএম প্রার্থী আনু দাসকে প্রচার করতে দিচ্ছে না, দেওয়াল লিখতে দিচ্ছে না, ফ্ল্যাগ ফেস্টুন টাঙাতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। এক কথায় প্রচন্ডভাবে সিপিএম প্রার্থী বাধা পাচ্ছেন,এটা তারা জানাতে চাইছেন।

এখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, তিন নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বহিরাগত। এদিকে সিপিএম নেতৃত্বরা প্রশ্ন তুলেছেন বহিরাগত কাকে বলে? ৩ নং ওয়ার্ডের যে প্রার্থী তিনি অন্য ওয়ার্ডে বসবাস করলেও, নির্বাচন বিধি অনুযায়ী এমন কোনো বাধা নেই যে,এক অঞ্চলের ভোটার অন্য কোনো ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারবেন না। তাহলে তৃণমূলের বিভিন্ন প্রার্থীরা এক ওয়ার্ডের বাসিন্দা হয়ে অন্য ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন তারা কি তাহলে বহিরাগত? তারা প্রশ্ন তুলেছেন যে, পার্থ ভৌমিক তো নৈহাটিতে থাকেন,তিনি কাঁচরাপাড়ায় বক্তৃতা দিতে আসছেন তবে কি তিনি বহিরাগত? শ্রমিক নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় মে খক্তৃতা দিয়ে গেলেন কাঁচরাপাড়ায় তিনি কি বহিরাগত? তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থী দাঁড় করাতে পারবেন,তখন বহিরাগত প্রশ্ন তোলা হচ্ছে না, তবে এক্ষেত্রে তোলা হচ্ছে কেন? অর্থাৎ তারা শাসকদলের অন্তর্ভুক্ত দল,তারা ক্ষমতার জোরে তাদের প্রতিহত করতে চাইছেন।

এক বিরোধী নেতা বলেন, এদের শিক্ষা-দীক্ষা এত কম যে, বহিরাগত বলতে কী বোঝায় তা তারা বোঝেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। ভারতবর্ষে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে গেলে তিনি কি বহিরাগত হয়ে যান? একটা মৌলিক প্রশ্ন উঠছে এই বহিরাগতর ব্যাপারে।

এদিকে টাউন কংগ্রেস সভাপতি তাপস সিনহা জানান যে,৮ নং ওয়ার্ডে যে প্রার্থী রয়েছেন তাকে প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাদের দশটি ওয়াল তৃণমূল দখল করে নিয়েছে। তাদের ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন সমস্ত কিছু ছিঁড়ে দিচ্ছে শাসকশ্রেণীর প্রতিনিধি এই তৃণমূল দল।

১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সজল কর্মকার অভিযোগ জানাচ্ছেন, তার পোস্টার ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে। ফলত, জনগণের সামনে সুবোধ অধিকারী অর্থাৎ বীজপুরের বিধায়ক– তিনি তৃণমূলের বিধায়ক নন, তিনি জন বিধায়ক। বিধায়ক কথাটির অর্থ কি তিনি হয়তো উপলব্ধি করতে পারছেন না। একথা বলছেন বিরোধী পক্ষরা। যিনি সঠিক পথের বিধান দেন তিনিই বিধায়ক। তিনি বলছেন একরকম অথচ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আরেক রকম। কি করে এটা সম্ভব! যদি দলের নেতৃত্বদের প্রচ্ছন্ন বা পরোক্ষ সায় না থাকে, নেতৃত্বের নির্দেশ না থাকে, তাহলে অঞ্চলে এই ঘটনা ঘটতে পারে না বলে বিরোধীরা বলছেন।

বিরোধীরা আরো বলছেন, এই ঘটনার ধারাবাহিকতা যদি চলতে থাকে তাহলে নির্বাচনের দিনও তারা আশঙ্কা করছেন যে রিগিং বুথ দখল ছাপ্পা ভোট– এই প্রক্রিয়া চলবেই।

শেষ সংবাদে জানা গেছে আজ 23 ফেব্রুয়ারি সিপিএমের পক্ষ থেকে তিন নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থী আনু দাস এবং তার সহকর্মীরা। এই ওয়ার্ডের প্রচারে বাধা বিষয়ে বিধায়ককে জানানো হলে তিনি বিরোধী দলনেতা দেবাশীষকে জানিয়ে দেন যে বিরোধীদের প্রচারে কোনো বাধা প্রদান করা চলবে না। তিনি আরো বলেন, যদি তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোনো বাধা প্রদান করা হয় সঙ্গে সঙ্গে আপনারা আমাকে আমার দেওয়া এই ফোন নম্বরে জানাবেন। অভিযুক্ত কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ সিপিএম 3 নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার চালাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত বাধাদানের কোনো সংবাদ নেই।