হায়! আমার স্বদেশ ভারতবর্ষ।
তাচ্ছিল্যের জীবন এই বিপ্লবীর।
অবহেলা এবং অসহায়তার জীবন এই বিপ্লবীর।
জন্ম আঠারো নভেম্বর–
তাহলে লিখে যাই তার কথা।

বিপ্লবী যখন পাউরুটি বেচে
তমাল সাহা

পৃথিবীর ঘনতম রাত্রিরে
কার্তিকের হিমঝরা সন্ধ্যায়
নক্ষত্রেরা যখন গান গাইতে ওঠে
আকাশের গায়
এইসব ঘটনা অলীক বলে প্রতিভাত হয়।

বর্ধমান- ওয়াড়ি গাঁয়ের ছেলে বাট্টু–
কিভাবে শিক্ষায় কৃতী জীবন ছেড়ে
বটুকেশ্বর হয়ে যায়
সেইসব পাণ্ডুলিপি এখন
স্বাধীনতা সংগ্রামের বিস্মৃ্ত না বিস্মিত অধ্যায়?

জন্মভূমি যদি গভীর রাতে এসে
অশ্রুভেজা চোখে মাথার পাশে দাঁড়ায়
বাঁ হাতের পিঠে সেই অশ্রুবাষ্প মুছে নিয়ে বলে,
বাট্টুরে ওঠ!
বাট্টুরা উঠে পড়ে, সামনে দেখে
শেকলবাঁধা মায়ের হাত, ক্রন্দনরত মুখ–
বাট্টুদের ভাবায় ।

বাট্টু! বাট্টু! শব্দে তোলপাড় বাতাস
পরাধীনতার অন্ধকারে
বাট্টুর দম বন্ধ হয়ে আসে
গলায় রুদ্ধ শ্বাস-প্রশ্বাস
শুধু ঝরতে থাকে দীর্ঘশ্বাস।

বাট্টু–বটুকেশ্বর বিপ্লবী মেজাজি।
পাবলিক সেফটি বিল, ট্রেড ডিসপুট–
জনবিরোধী বিল পাস হবে নাকি!
রাষ্ট্র বধির হলে হাতে থাকে বোমা
অত্যাচারীকে কে কবে করেছে ক্ষমা?
পার্লামেন্ট শুয়োরের খোঁয়াড়–
নিক্ষিপ্ত বোমার বিস্ফোরণ…
শোনো ভারতীয় জনগণ
দুটি সিংহের প্রবল বিক্রম গর্জন–
বটুকেশ্বর অন্যতম একজন।

বারবার মনে পড়ে
সেই বিস্ময়কর আত্মগোপনের ঘটনা।
ওয়াড়ি গ্রামে হাতেকাটা সেই সুড়ঙ্গের ভেতর
বাট্টু আর ভগৎ সিং দুইজনা।
একসঙ্গে আঠারো দিন–
তারপর নারীর ছদ্মবেশে পলায়ন
সেই রোমহর্ষক ঘটনা আজও জাগায় শিহরণ।

জীবন নিয়ে খেলা
একটানা আঠারো বছরের জেল
রাষ্টীয় অবিচারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অনশন
সেইসব অনেক গল্প দুর্বার দুরন্ত দুর্জয়
দেশের জন্য সহ্য করতে হয়।

অর্থকষ্টে পাউরুটি বেচেছিল সে কোনোদিন
কোনোদিন হয়েছিল কুলি
পরিবহন ব্যবসায় হাত পাকাতে চেয়েছিল।
অসুখে ভুগে নির্জনে লোকচক্ষুর আড়ালে
পরলোকে চলে গেল।

হারামির হাতবাক্স এই দেশ
বটুকেশ্বরের দুঃসাহসী জীবন ভুলে গেছে অবশেষ।

অসহায় অবহেলিত আত্মপরিচয়ের গ্লানি
উদাহরণ রেখে যায় এই বীর সেনানী।
ইতিহাস লিখে রাখে ভারতে প্রথম উচ্চারিত সেই বাণী—
ইনকিলাব জিন্দাবাদ
সেই বৈপ্লবিক কাহিনী।