১৬ ই ডিসেম্বর ২০১১। আমি লিখেছিলাম এই কবিতাটি যখন বিনায়ক সেন মাওবাদী অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে গিয়েছেন। সে সময় আমি দেখা করেছিলাম বিনায়ক সেনের মায়ের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করে আমার তাঁর মায়ের সম্পর্কে যে ছবিটি ফুটে উঠেছিল এটি হল সেই কবিতা।

আজ বর্ষশেষের প্রান্তিক বেলায় ৩০ ডিসেম্বর, বিনায়ক সেনের মা অনসূয়া দেবী প্রয়াত হলেন। তিনি প্রয়াত হলেন সেটি বড় কথা নয়, একজন সমাজ এবং সাংস্কৃতিক কর্মী চলে গেলেন। চলে গেলেন শিশুদের বুনিয়াদ পত্তন করতে যিনি হাত লাগিয়েছিলেন তিনি। চলে গেলেন সেই নারীটি যিনি ব্রহ্মান্ডবাদে নিজের আস্থা রেখে ব্রহ্মসঙ্গীত গাইতেন, তা অবশ্যই রবীন্দ্রসঙ্গীত। যিনি ‘ঝালাই’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন, প্রবীণাদের একটি সংগঠন, গানের সংগঠন। তিনি মাইকবিহীন স্বাভাবিক কন্ঠেই স্বরক্ষেপণে স্বচ্ছন্দ অনুভব করতেন। যিনি স্প্রিংডেল নামক যে ইস্কুল এখন নামজাদা তার ভিত্তিপ্রস্তরে হাত লাগিয়েছিলেন। ইস্কুলের পক্ষ থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছিলেন তিনি।
তিনি আজ চলে গেলেন। তাঁকে আমি চিনি বিনায়কের মা রূপে।

বিনায়কের মা
তমাল সাহা

কনকনে এই শৈত্যপ্রবাহকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে
ভারতবর্ষের তামাম বন্দর থেকে দুর্ধর্ষ নাবিকেরা ছেড়ে দিয়েছে অপূর্ব নৌবহর। তাদের মাস্তুলের পতাকায় উড়ছে বিনায়কের মায়ের তেজোময় মুখ।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে রণভূমে যাত্রার আগে অত্যন্ত গোপনে তারা বিনায়কের মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেছে এবং বুকে করে নিয়ে গেছে যাবতীয় গোলা বারুদ– বিস্ময়কর সব বিস্ফোরক উপাদান।

এক সাংবাদিক কবির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই এই মা জানিয়েছিলেন, কে বলেছে আমি অনসূয়া দেবী?
আমার প্রথম এবং শেষ পরিচয় আমি বিনায়কের মা— বিনায়ক আমার সন্তান নয় ও দেশপুত্র।
স্তনদাত্রী বলে জাতককে সংকীর্ণ করে রাখবার কোনো অসূয়া নেই আমার।

ওই যে জঙ্গল ঘেরা সেলবহরা গ্রাম, ওখানে শত শত বিনায়কের মা প্রতীক্ষা করে আছে।
ওই যে পাহাড় ঘেরা কেকরাখালি গ্রাম, ওখানে হাজার হাজার বিনায়কের মা উৎকন্ঠায় আছে।
ওই যে দল্লি- রাজহরা খাদান ওখানে লক্ষ লক্ষ বিনায়কের মা ঝড় উঠবার আগে স্তব্ধ হয়ে আছে।

সমবেত মাতৃমন্ডলী
দেশভূমির অযুত জননীরা শোনো!
কুরুক্ষেত্রের এই মহাপ্রাঙ্গণে তোমরা চক্রব্যূহ রচনা করলে কার সাধ্য নিধন করে এই বীর অভিমন্যুকে!
অগ্নিহোত্রী যাজ্ঞসেনী ডরায় কি কভু উলঙ্গ শাসকে?

হে ধর্মাবতার!
আপনি চোখ বন্ধ, তুলাদন্ড হাতে দেখেশুনে অত্যন্ত ন্যায় বিচার করেছেন।
কত কত বার দেখেছেন বিনায়কের মুখ!

হে ফরমানদার!
আপনার ফতোয়া পাঠ শেষ।
এবার মুখ তুলে দেখুন হাজার হাজার মাতৃগর্ভে কিভাবে জন্মায় একই পুত্র!
আপনার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে লক্ষ লক্ষ বিনায়কের মা!

অধীর ভূধর বজ্র,— ভীমার গর্জনে— পুনঃ যেন জন্মি চন্ডী নিনাদিলা রোষে…..