অবতক খবর,৩০ মার্চ,মলয় দে,নদীয়া:- বহু প্রাচীনকাল থেকে বাঙালি ব্যবসার ইতিহাসে শান্তিপুরের ভূমিকা অন্যতম। শান্তিপুরের উৎপাদিত তাঁত শাড়ি বহুকাল আগে থেকেই তাঁত শাড়ি উৎপাদনে নজর কেড়েছিলো বিশ্ব মাঝারে।

বর্তমান সময়ে পাওয়ারলুম, রেপিয়ারলুম সহ প্রযুক্তির কল্যানে অন্যান্য যন্ত্রের দাপটে হস্ত চালিত তাঁত শিল্প প্রায় বন্ধের মুখে ৷ কিছু মানুষ প্রচন্ড সংগ্রাম করে শান্তিপুরের ঐতিহ্য হস্ত চালিত তাঁত বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন ৷ কিম্তু যন্ত্র চালিত তাঁতের কাছে অনেকটা অসহায় শান্তিপুরের তাঁত শিল্পীরা ৷ ২৯শে মার্চ শান্তিপুরের বঙ্গ তাঁত কাপড়ের হাটের প্রতিষ্ঠাতা পরেশচন্দ্র বঙ্গের জন্মদিন ৷

সেই উপলক্ষে বঙ্গ পরিবার এবং বেশ কয়েকজন ব্যক্তির প্রচেষ্টায় ২৯শে মার্চ পরেশ চন্দ্র বঙ্গের স্মৃতিতে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয় সূত্রাগড়ে বঙ্গ হাটে ৷ ২৯শে মার্চ পরেশ চন্দ্রের স্মরণে “ব্যাঙালীর ব্যবসা” শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিল্পদ্যোগী সমর নাগ, লেখক সমাজ ও ভাষাকর্মী ইমানুল হক, বঙ্গ ঘোষ তাঁত কাপড়ের হাটের যুগ্ম সম্পাদক অরুন ঘোষ, তাঁত বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির তারক দাস প্রমুখ ৷ ঐ সভায় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কৌশিক কাষ্ঠ শান্তিপুরে হস্ত চালিত তাঁত শিল্পীদের উৎপাদিত সুতির সূতোয় হস্ত তাঁতে বোনা তাঁত শিল্পীদের কাপড় বিক্রীর জন্য আলাদা জোন করার প্রস্তাব রাখেন ৷

কারন যন্ত্র চালিত তাঁতের কাপড় এবং হস্ত চালিত তাঁতে উৎপাদিত কাপড়ের মধ্যে নাকি বিস্তর ফারাক আছে ৷ অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসার স্বার্থে অনেক ব্যবসায়ী পাওয়ারলুমে উৎপাদিত কাপড়কে নাকির হতে বোনা তাঁতের কাপড় বলে চালিয়ে দেন ৷ ফলে সেই কাপড় দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আদতে শান্তিপুরী শাড়ির বাজার নাকি নষ্ট হচ্ছে ৷ তাই আলাদা জোন হলে যারা পিওর হাতে বোনা তাঁতের কাপড় চান তারা ঐ জোন থেকে কাপড় কিনতে পারবেন ৷

যদিও ঐ সভায় এক বক্তা বলেন যে, হস্ত চালিত তাঁত প্রায় শেষ হয়ে গেছে ৷ যুগের সাথে তাল মেলাতে অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্য নিয়েই শাড়ি তৈরী করতে হবে ৷বঙ্গ হাটের প্রতিষ্ঠাতা পরেশ চন্দ্র বঙ্গ শান্তিপুরের তাঁত শিল্পীদের কাপড় বিক্রির জন্যই বঙ্গ হাটের প্রচলন করেছিলেন ৷ বস্ত্র ব্যবসায়ীদের লাভ এবং লোভের মধ্যে সমতা রাখার কথাও বলেন তিনি ৷ বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোগী সমর নাগ বলেন যে, বিশ্ব বানিজ্যে টিকে থাকতে গেলে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে ৷

তবে হস্ত চালিত তাঁত এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির তাঁতের মেল বন্ধন ঘটাতে হবে ৷ এই প্রতিবেদকের অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে সমরবাবু জানান যে, পরিবেশকে সাথে নিয়েই শিল্প গড়তে হবে ৷ পরিবেশ ধ্বংস করে শিল্প এগোবেনা ৷ শিল্পের জন্য যদি জমির প্রয়োজন হয় তাহলে বিকল্প হিসাবে দুই’তিনগুন বাগান তৈরী করতে হবে ৷ শান্তিপুরে আমবাগান কেটে কারখানা তৈরী প্রসঙ্গে সমরবাবু জানান যে, অসাধু উপায়ে শিল্প করার নামে যদি পরিবেশ ধ্বংস হয় তাহলে তিনি আশা করবেন যে, প্রশাসন সেক্ষেত্রে যথাযত ব্যবস্থা নেবে ৷ ভাষাকর্মী ইমানুল হক বলেন যে, হাতের তাঁতের কাপড়ের জন্য আলাদা জায়গা থাকা উচিত ৷

কারন গোটা পৃথিবীতেই হাতে উৎপাদিত জিনিসের কদর বাড়ছে ৷ শান্তিপুরের মানুষের উচিত উপহার দেওয়ার সময় যেন শান্তিপুরের হাতের তাঁতের কাপড় দেওয়া ৷ পরেশ চন্দ্র বঙ্গের পুত্র অমল বঙ্গ জানান যে, তাঁর পিতার জন্মদিন স্মরনে “বাঙালীর ব্যবসা” শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে ছিলেন তাঁরা তাতে বিশিষ্টজনের আলোচনা আগামীতে তাঁত শিল্পীদের দুঃখ দুর্দশার কথা নিশ্চয়ই সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন মহলে দৃষ্টিগোচর হবে বলে তিনি মনে করেন ৷