বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর, কোলকাতা, ৭ই অক্টোবর :: পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় উত্তরপ্রদেশের মনীষা বাল্মীকির গণধর্ষণ ও নৃশংসতার হত্যার প্রতিবাদে মেতে উঠেছেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা রাজ্যে বিজেপি ব্যাপক চাপে রয়েছে এই চাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য হাঁসফাঁস করছে, তখন রাজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মাঠে নেমেছেন রাজ্যের রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকড।

রাজ্যপাল তৃণমূলের বিজেপির ওপর আক্রমণ ঠেকাতে তিনি স্বয়ং বাংলার মহিলাদের উপরে অত্যাচার ও ধর্ষণের একটি তালিকা প্রকাশ করে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিন্তা ব্যক্ত করেছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গে আগস্ট মাসের রাজ্যের জেলায় জেলায় ধর্ষণ ও অপহরণের একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন তাছাড়া তিনি টুইট করে তিনি লিখেছেন “সরকারি তথ্য অনুযায়ী 223 টি ধর্ষণ ও 639 টি অপহরণের মামলা ঘটেছে এটা রাজ্যের নারী শিক্ষার ছবি শৃঙ্খলা ফেরার সময় এসেছে এবার।”

যদিও রাজ্যপালের এই টুইটকে নস্যাৎ করে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র সচিব একটি পাল্টা টুইট করেছেন ও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাজ্যপাল যে তথ্য প্রকাশ করেছেন তা কোন সরকারি সূত্র বা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি। অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।

এখন তৃণমূল নেতা ও বাংলার জনগণের প্রশ্ন, বাংলার রাজ্যপাল উত্তরপ্রদেশকে বাঁচাতে এতটা চিন্তিত হয়েছেন কেন? এই প্রশ্ন উঠেছে এখন। সারাদেশ যেখানে মণীষা বাল্মীকির গণধর্ষণ ও হত্যা নিয়ে নিন্দা করছে, তখন বাংলার রাজ্যপাল এই ঘটনার নিন্দা না করে উল্টো রাজ্যকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে এই বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন কেন? তৃণমূল নেতাদের প্রশ্ন, তিনি আদৌ রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান ভূমিকা পালন করছেন নাকি অন্য কোন স্বার্থ সিদ্ধি করতে এই পদকে ব্যবহার করছেন?

তবে তথ্য নিয়ে এখন রাজ্যপাল ও সরকারের মধ্যে লড়াই চলবে ও দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত, এটা তাদের টুইট থেকেই পরিষ্কার। তবে রাজ্যপালের এই তথ্য ও পরিসংখ্যান হয়তো রাজ্যের বিজেপি নেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। কিন্তু দেশে উত্তরপ্রদেশ মহিলাদের থাকার জন্য একেবারে উপযুক্ত নয় সে তথ্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সংস্থার এনসিআরবি ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বলছে।

আসুন একবার দেখে নিই যে এনসিআরবি সারাদেশের অপহরণ ও ধর্ষণের যে তালিকা ২০২০-তে প্রকাশিত করেছে তাতে কি বলা হয়েছে।

সবার প্রথমেই আসি অপহরণ তথ্য নিয়ে।

মহামান্য রাজ্যপাল বাংলা ধর্ষণের ও অপহরণের তালিকা প্রকাশ করে বিজেপি রাজ্য নেতাদের শাস্তি দেওয়ার কিছুটা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এনসিআরবি রিপোর্ট বলছে যে, উত্তরপ্রদেশ ধর্ষণ ও অপহরণের জন্য স্বর্গরাজ্য অর্থাৎ একেবারে সর্বোচ্চ শিখরে রয়েছে। শুধু তাই নয়, মহিলাদের উপরে অত্যাচার মামলাতেও উত্তরপ্রদেশের ধারেকাছেও কোন রাজ্য নেই। তারমানে সারা দেশ জুড়ে যে উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অপহরণের নিয়ে মানুষের চিন্তা অহেতুক নয়।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর নতুন প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী অপহরণের ক্ষেত্রে ইউপি দেশের রাজধানী বলা যেতে পারে। ২০১৯-এ দেশে মোট অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৯৮ হাজার ৮৭৯টি। তাতে শুধু উত্তরপ্রদেশে ১৬৫৯০টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় মহারাষ্ট্র ১১৭৫৫টি,তৃতীয় বিহার ১০৭০৭টি, চতুর্থ মধ্যপ্রদেশ ৯৮১২টি ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাজস্থান ৮০৫৮টি অপহরণের ঘটনার জন্য। সর্বোচ্চ ৫-এ বাংলার নয়, কিন্তু তার মানে এই নয় বাংলায় অপহরণের ঘটনা ঘটেনি।‌ এখানেও ২০১৯-এ ৫১৯১টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।

এবার ধর্ষণ নিয়ে জেনে নেই এনসিআরবি তথ্য কি বলছে…

রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর বাংলার ধর্ষণ নিয়ে চিন্তিত। তাঁর চিন্তা উচিত। তবে ইউপি থেকে নজর বাংলার দিকে ঘোরাতে যে তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে সেটার সততা নিয়ে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলে কাউন্টারে নেমে পড়েছে। তবে এখানে যে তথ্য আমরা তুলে ধরছি তার সততা নিয়ে স্বয়ং কেন্দ্র বা বিজেপি সরকার হোক বা যে কোন সরকার তা অস্বীকার করতে পারবে না। কারণ এই তথ্য কেন্দ্রের অধীন সংস্থা এনসিআরবি-র তথ্য।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী,ধর্ষণের জন্য সবচেয়ে শিখরে যে রাজ্য রয়েছে তার নাম রাজস্থান। দেশে ২০১৯-এ মোট ৩০ হাজার ৮৬৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তাতে রাজস্থানে ঘটেছে ৬০৫১টি। ধর্ষণের মামলায় যোগী রাজ্যের ইউপি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এখানে ধর্ষণের ঘটনা হয়েছে ৩১৩১টি। তৃতীয় স্থানে মধ্যপ্রদেশ ২৪৮৯টি।চতুর্থ স্থানে মহারাষ্ট্র ২৩০৫টি এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে কেরালা ২০৪৪টি ধর্ষণের মামলার জন্য।

তবে এমন নয় যে পশ্চিমবঙ্গের ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে পশ্চিমবঙ্গের নামের আগে ঝাড়খন্ড, হরিয়াণা, উড়িষ্যা সহ অনেক রাজ্য আছে। পশ্চিমবঙ্গে ২০১৯-এ ধর্ষণের মোট ১০৬৯টি মামলা ঘটেছে, যা অবশ্যই আনন্দকর নয় ,অবশ্যই চিন্তার বিষয়।

এবার আসি আমরা গণধর্ষণের সঙ্গে হত্যার মামলায়

এনসিআরবি রিপোর্ট অনুযায়ী গণধর্ষণ করে হত্যার মামলায় ইউপি খুব একটা পিছিয়ে নয়। দেশে ২৮১জন মহিলাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তাতে মহারাষ্ট্র ৪৭, মধ্যপ্রদেশ ৩৭, ইউপি ৩৫, কর্ণাটক ২৩, তেলেঙ্গানায় ২০ জনকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও ৬টি গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটেছে যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও চিন্তার বিষয়।

তাছাড়া ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড তথ্য অনুযায়ী দাউরি ডেথ অর্থাৎ পণ্যের জন্য হত্যা মামলায় ইউপি সবচেয়ে শিখরে রয়েছে। দেশে ৭০৩৪টি মামলার মধ্যে ইউপিতে ২৪২৪টি ঘটনা ঘটেছে,বিহারে ১২৭,মধ্যপ্রদেশ ৫৫০,রাজস্থান ৪৫৩ ও পশ্চিমবঙ্গে ৪৪৪টি ঘটনা ঘটেছে।

ওপরের তথ্য হয়তো কিছু নেতা, মানুষের পছন্দ নাও হতে পারে। তবে এই তথ্য ইচ্ছাকৃত তৈরি করা বা কোনো উদেশ্য নিয়ে নয়। সত্য উদ্ঘাটিত করতেই এটি সরকারি তথ্য, যা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য।