অবতক খবর , নরেশ ভকত , বাঁকুড়া :      বছর বছর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এবং শ্রম মন্ত্রকের নির্দেশমতো শ্রমিক কর্মচারীদের মাইনে বাড়ার কথা কিন্তু বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলের বাগুলি খোলামুখ কয়লা খনিতে চলছে উলোট পুরান। এখানে শ্রমিকদের বছর বছর যে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয় এবং ভিডিএ যোগ করে মাইনে দেওয়া উচিত তা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে শ্রমিকদের মাইনে বাড়ার বদলে মাস মাইনে কমে গেছে। বড়জোড়া নর্থ খোলামুখ কয়লা খনিতে উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি যারা যুক্ত সেইসব শ্রমিকরা বুধবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। শুক্রবার কর্মবিরতির তিন দিনের মাথায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ ফেটে পড়েন। তাদের দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো বেতন কাঠামো এরা মানছে না।

উল্লেখ্য এই কয়লাখনিতে ২০১১ সালে প্রথম উৎপাদন শুরু করে ডিভিসিএমটা গ্রুপ। পরে তাদের বরাত বাতিল হয়ে গেলে নতুন করে বরাত পায় রাজ্য সরকারের সংস্থা পিডিসিএল। এই সংস্থা কয়লা উত্তোলনের দায়িত্ব দেয় মন্টি কার্লোস নামে একটি বেসরকারি সংস্থাকে। শ্রমিকদের অভিযোগ এই কোম্পানি আমাদের বুকের উপর দিয়ে বুলডোজার চালাচ্ছে।

রাজেশ সিংহ নামে এক কর্মী বলেন, আমরা ডিভিসি এমটা গ্রুপে গত আট বছর আগে যে মাইনেতে কাজ শেষ করে ছিলাম এতদিন পর এখনো সেই মাইনেতেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি। ইপিএফ যাতে কম দিতে হয় সে কারণে বেসিক কমিয়ে তা পরিবহন ভাতার নামে ওই পরিমাণ অর্থ পে-স্লিপে যুক্ত করেছেন। আরেক কর্মী বাউল ঘোষ বলেন, আমাদেরকে ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ১২ ঘণ্টা কাজ করাচ্ছেন মালিকপক্ষের কর্তারা। তার অভিযোগ কয়লা খাদানের কাজ করিয়ে পাথর খাদানের শ্রমিকদের মত মাইনে দিচ্ছেন।

বাউল বাবু বলেন, কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কয়েকজন মস্তানকে মাসোহারা দিয়ে পুষে রেখেছেন। আমরা কিছু দাবি করতে গেলেই সেইসব মাস্তানরা আমাদের ভয় দেখায়। অন্য রাজ্যের শ্রমিকদের তাড়িয়ে দেবার হুমকি দেয়। আরেক কর্মী প্রশান্ত ঘোষ বলেন, দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে আমরা জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। অথচ আমাদের এখানে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলার কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানের ১০ জন কর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রশান্ত বাবু বলেন, কোম্পানির কাছে আমাদের দাবিগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে তারা বলছেন, না পোষালে কাজ ছেড়ে দাও। আমরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কাছে না গিয়ে দাবি আদায়ে অরাজনৈতিক ভাবে উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত ৬০০ শ্রমিক অবস্থানে বসেছি। দাবি না মানা হলে পরিবার নিয়ে আমরা অবস্থান বিক্ষোভে বসবো। মালিক পুলিশ পাঠিয়ে আমাদের ধর্ণা অবস্থান ভাঙ্গার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা তা মানবো না।

এ প্রসঙ্গে মন্টি কার্লোসের চিফ প্রজেক্ট ম্যানেজারকে বার বার ফোন করলেও তিনি ফোন না ধরে কেটে দিয়েছেন। ফলে কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।