অবতক খবর,১৩ জুলাইঃ কাঁচাপাড়ার একজন সুপরিচিত তৃণমূল নেতা কল্যাণ কর।দীর্ঘ বছর তিনি কংগ্রেস রাজনীতি করেছেন। ‌ পরিশেষে কংগ্রেস ত্যাগ করে তিনি তৃণমূলে যোগদান করেছিলেন। বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী এবং কাঁচরাপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান কমল অধিকারীর প্রচেষ্টায় তিনি পৌর নির্বাচনে কাঁচরাপাড়া ৫ নং ওয়ার্ড থেকে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন।জয়ী হয়ে তিনি ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের পদে আসীন হলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম তিনি কাউন্সিলর হলেন। ‌ কাউন্সিলেরর পদ পেয়েছেন তার বছর ঘোরেনি। তার আগেই তিনি জড়িয়ে গেলেন বেশ কিছু বিতর্কে। বেশ কিছু ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়ে গেছে। আর এই কারণেই কাঁচরাপাড়া ৫ নং ওয়ার্ডের মানুষের মধ্যে কল্যাণ করকে নিয়ে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।

প্রথমত তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগেই অভিযোগ উঠেছিল তিনি নাকি ব্যবসায়ীদেরকে ক্লাবে ডাকতেন। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের থেকে জানতে পারা যায় যে, কেউ নতুন দোকান খুললে তাকে তিনি ডাকছেন, আবার কেউ দোকান মেরামত করলেও তাকে ডেকে পাঠাচ্ছেন তিনি। ‌

তবে তিনি সরাসরি কাউকেই ডাকছেন না। ‌ ব্যবসায়ীরা বলেন, কল্যাণবাবু সরাসরি আমাদেরকে ডাকছেন না। ‌ তাঁর সাথে যারা থাকে তারাই ব্যবসায়ীদেরকে এসে বলে যেত যে,কাউন্সিলর তাদেরকে ডেকেছেন। ‌ কিন্তু কি কারণে ডেকেছেন সেটা তারা কেউ বলতো না। যেহেতু তিনি আমাদের ডেকেছেন তাই আমরা বেশ কয়েকবার তাঁর কাছে যাই। ‌আমাদের সেখানে বসিয়ে রাখা হতো দীর্ঘক্ষণ। এত বছর ধরে আমরা এখানে ব্যবসা করছি, কিন্তু কেউ আমাদেরকে এইভাবে ক্লাবে ডেকে বসিয়ে রাখেনি।

অন্যদিকে এই বিষয়টি নিয়ে কাঁচরাপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান কমল অধিকারীর কাছে সমস্ত ব্যবসায়ীরা গিয়ে অভিযোগ জানান।

কমল অধিকারী ব্যবসায়ীদের পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে, আগামীতে যদি কল্যাণ কর আপনাদেরকে ডেকে পাঠান তবে আপনারা কেউই যাবেন না এবং বিষয়টি আমাকে জানাবেন। আর কোন কারণে যদি কোন বৈঠকের প্রয়োজন হয় আপনাদের সাথে,তবে আমি চিঠি দিয়ে তা সকল ব্যবসায়ীকে জানাবো তবেই আপনারা আসবেন। কিন্তু অন্য কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদেরকে ডাকে তবে আপনারা কেউ যাবেন না।

চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগে ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত খুশি।

অন্যদিকে এই বিষয়টি নিয়ে কল্যাণ বাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন,আমি এই সকল বিষয়ে থাকি না, আমি কাউকে ডেকে পাঠাই না।আমার বিরুদ্ধে কোন চক্রান্ত চলছে।আমি অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করি এবং তা সরাসরি চেয়ারম্যানকে জানাই।

এদিকে গতকালই আবার ঘটল এক ঘটনা। কাঁচরাপাড়া ৫-এর পল্লী থেকে নামতে গিয়ে দাস বাড়ির সামনেই ঘটেছে এই ঘটনা। সেখানে ডেঙ্গু অভিযানে এসেছিলেন উপরিমহলের আধিকারিক থেকে শুরু করে পৌরসভার আধিকারিকরা। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে ডেঙ্গু সচেতনতার বিষয়টি দেখছিলেন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও দেখছিলেন। সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থেকে শুরু করে সিআইসি এবং পৌরকর্মীরা। কিন্তু ৫-এর পল্লীর দাস বাড়ির সামনে যেতেই দেখা যায় সেখানে একটি ঘটের মধ্যে জল জমে ছিল। এ বিষয়ে দাস বাড়ির সদস্যরা সাফাই দেন যে, দাস বাড়ির ছেলের সম্প্রতি বিবাহ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাত্রীপক্ষের কিছু সমস্যার কারণে আর বিবাহ সম্পন্ন হয়নি। যেহেতু ওই ঘটের জলটি ঠাকুরের জল,সেই কারণে তারা ফেলতে পারবেন না। কিন্তু কাউন্সিলরের লোকজন এসে এই কারণে তাদের উপর চেঁচামেচি শুরু করে আর এতেই বেঁধে যায় হাতাহাতি।

এদিকে কাউন্সিলরের অভিযোগ, তাঁকে নাকি দাস বাড়ির সদস্যরা ধাক্কা দিয়েছেন, তাই তিনি পুলিশ ডেকে ওই বাড়ির অভি দাস নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করিয়েছেন।

অপরপক্ষে অভি দাসের মায়ের অভিযোগ যে, অন্য একটি কারণে গন্ডগোল বাঁধে কিন্তু দাস বাড়ির সদস্যদের কথা না শুনে পুলিশ কাউন্সিলরের একতরফা অভিযোগের ভিত্তিতে অভি দাসকে গ্রেপ্তার করেছে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, কাউন্সিলরের লোকজন এই গন্ডগোলের জেরে তার বাড়ির জানালার কাজ এবং তাদের কলিংবেল পর্যন্ত ভেঙে ফেলেছে। এমনকি তার ছেলে অভি দাসকে ব্যাপক মারধর করেছে। আর কাউন্সিলর কল্যাণকর নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই সমস্ত ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে কল্যাণ বাবুর সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, এই নিয়ে কোন খবর করার প্রয়োজন নেই। এটা কোন বিষয় নয়। কিছুই হয়নি। সাময়িক গন্ডগোলের সৃষ্টি হয়েছিল। তবে আমরা তা মিটমাট করে নিয়েছি এবং অভি দাসকে পুলিশ যে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছে, বড়বাবুর সাথে আমার কথা হয়েছে, আমি নিজে গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনবো।

তবে এই ঘটনা লোকের মুখে মুখে গোটা শহরেই রটে যায়। কাউন্সিলর থেকে শুরু করে শহরের ছোট বড় সমস্ত নেতাকর্মীদের কাছেই খবর যায়।

এরপরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ফোন আসতে শুরু করে আমাদের কাছে।তারা সকলেই জানতে চান যে, আসলে ঘটনাটি কি ঘটেছিল?

সামান্য একটি ঘটের জল যা তিন দিন রাখতে হয়,এমনই বলছেন দাস বাড়ির সকল সদস্য এবং পাড়া-প্রতিবেশীরা।আর এই নিয়ে যে এত বড় একটি কান্ড ঘটে যাবে, এমনকি হাতাহাতিতে পৌঁছে যাবে তা হয়তো কেউই কল্পনা করতে পারেনি।

তবে প্রথমে কোন পক্ষ বচসা শুরু করে বা কোন পক্ষ হাতাহাতি শুরু করেছিল তা সঠিক জানা যায়নি। আর এই নিয়ে কেউই মুখ খুলতে চাননি। তবে দেখা গেল দাস বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে,ওই বাড়ির সদস্যকে মারধর করা হয়েছে। যার জেরে আতঙ্কে রয়েছে দাস পরিবার।

অভি দাসের মা আমাদের প্রতিনিধির সাথে কথা বলার সময় বলেন যে, সমস্ত ঘটনাই সকলের সামনে ঘটেছে। তবে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ আমরা নেতার সাথে লড়তে পারব না। এই বলে তিনি হতাশ হয়ে চলে গেলেন নিজের ঘরে।

তবে এইরকম ঘটনা যদি ঘটতে থাকে তবে জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে কি ধারণা জন্মাবে মানুষের?