অবতক খবর।, সংবাদদাতা, বর্ধমান :-   নরেন্দ্রনাথ মিত্রের বিখ্যাত গল্প রস। খেজুর গাছ থেকে যারা রস বের করে নলেন গুড় তৈরী করেন সেই সমস্ত পাশিদের জীবন ও ভিয়েন নিয়ে চিত্রিত এই গল্পকে কেন্দ্র করে অনেক নাটক ও সিনেমাও তৈরী হয়েছে।

হিন্দিতে এই গল্প নিয়েই নূতন ও অমিতাভের বিখ্যাত সিনেমা ‘সওদাগর’ তৈরি হয়েছিল যাতে পাশির ভূমিকায় অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন অমিতাভ।

মানুষের শীতকাল টা খেজুর রসের মিষ্টি নলেন গুড়ে ভরিয়ে তুললেও যারা এই গুড় তৈরীর কারিগর সেই পাশি বা শিউলিদের জীবন কিন্তু এতটা রসময় নয়। খেজুর গাছ শখ করে লাগায় না কেউ। প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন খেজুর গাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে দিনের পর দিন। খেজুর গাছ ও জায়গার অভাব থাকলেও কিছু কিছু জায়গায় এখনও তৈরি হয় নলেন গুড়। তাই শীতকালের বাজারে এখনও পাওয়া যায় লবাত, পাটালি বা ঝোলা গুড়।

মানকর সংলগ্ন অভিরামপুরের সভাহরণ পুলের কাছে গেলেই দেখা যাবে এই ধরনের কিছু পাশি অস্থায়ী সংসার পেতে বসেছে। এরা কেউই পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা নন। কিন্তু প্রায় কুড়ি বছর ধরে শীতকালীন সময়ে এরা নিজেদের সাজ সরঞ্জাম নিয়ে এখানে চলে আসেন। তারা এখানে গাছ পালি নিয়ে রস বের করে জাল দিয়ে গুড় তৈরী করেন। নওয়াজউদ্দিন সেখ নামে এক প্রবীন শিউলি জানান, এবছর ৭০ টি গাছ তিনি লিজ নিয়েছেন।

একমাস সময় লাগে গাছ থেকে রস নামাতে। তারপর চলে গুড় তৈরীর পালা। ওই দলেরই তরুন মিন্টু সেখ জানান, ভোর থেকেই কাজে লাগতে হয় তাদের। প্রায় চার – পাঁচ ঘন্টা জাল দিয়ে তবেই ঝোলা গুড় তৈরী হয়। সেই ঝোলাগুড়কে আরও বিশ – ত্রিশ মিনিট জাল দিয়ে ঘন করে কাপড়ে মেলে ছাঁচ দিয়ে তৈরী হয় পাটালি।

খাঁটি গুড়ের সন্ধানে অনেক ক্রেতাই ভীড় করেন সভাহরণ পুলের কাছে। এখানে প্রায়ই গুড় কিনতে আসেন রাধারমণ ভট্টাচার্য্য। তার কথায়, এখানে যেমন খাঁটি ভালো ও সুস্বাদু গুড় পাওয়া যায় তেমনি দামও কিছুটা কম পরে। শীতকালে পিঠেপুলি, কিম্বা রসগোল্লা নলেন গুড় ছাড়া চলে না। তাই এখানকার সুস্বাদু নলেন গুড় কিনতে বহু ক্রেতাই দুর দুরান্ত থেকে এসে ভীড় করেন। শিউলি রা জানায়, ডিসেম্বর পরলেও শীত সেভাবে পরে নি।

তাই গাছ থেকে পর্যাপ্ত রস পাওয়া যাচ্ছে না। ঠান্ডা বাড়লে রসের পরিমান বেশী পাওয়া যায়, কোয়ালিটিও ভালো থাকে। এখন আশি নব্বুই টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি হচ্ছে। তবে কষ্টসাধ্য এই মরশুমি পেশায় খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়াতে গুড় তৈরীর পরিমান অনেক কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমে গেছে রোজগারও। ফলস্বরুপ পরবর্তী প্রজন্ম অনিহা প্রকাশ করছে এই পেশায় আসতে।

তাই এই পেশার সাথে যুক্ত শিউলিদের সরকার থেকে কোন সাহায্য ও সহযোগিতা করলে কিম্বা নলেন গুড় তৈরীর জন্য কোনো সরকারি প্রকল্প শুরু হলে ভবিষ্যতে হয়ত টিকে থাকতে পারে নলেন গূড় তৈরীর এই শিল্প। তাই বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সরকারের দিকে তাকিয়ে উজ্জেল ভবিষ্যতের আশায় রয়েছে আজকের শিউলিরা।