অবতক খবর,১২ এপ্রিল,মলয় দে,নদীয়া:- নদীয়ার শান্তিপুর শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের গোপাল পুরের বাসিন্দা স্বপন দাস পেশায় পুরনো এবং বাতিল ভাঙাচোরা সামগ্রী কুড়িয়ে জীবিকা অর্জন করতেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে, এবং দীর্ঘ দীর্ঘ লকডাউনের ফলে আয়-উপার্জন তলানিতে ঠেকেছিলো। বড় ছেলে গোপালের বয়স 10 বছর ছোট মেয়ের সাত। সংসারের বেহাল পরিস্থিতির কারণে একপ্রকার বাধ্য হয়েই 2021 সালে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণি পাশ করলেও গোপালকে আর হাইস্কুলে ভর্তি করা হয়নি, তবে ছোট মেয়ের পড়াশোনা বহাল রয়েছে কোনরকমে। গোপাল নিজেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যুক্ত, সরকারি ভাতা বাবা কয়েকমাস পেলেও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে আর গোপালের আবেদনপত্র জমা রয়েছে সরকারি অফিসে। তবুও মাত্র 10 বছর বয়সেই আর্থিক অনটনের কারণে বাবার কাঁধের কুড়ানোর বস্তা নিজের কাঁধে তুলে নেয় সংসার চালানোর তাগিদে।

শান্তিপুরের সামাজিক সংস্থা নবজাগরণ মানসিক ভারসাম্যহীন ও আশ্রয়হীন ভবঘুরেদের প্রাত্যহিক খাবার পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় বিষয়টি খেয়াল করে । কথা বলে স্থানীয় তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রশান্ত বিশ্বাসের সাথে। গতকাল সানি রবীন্দ্র বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগাযোগের পর, আজ আবারো এক বছর বাদে পুনরায় স্কুলমুখী করতে সহযোগিতা করল সকলে। যদিও ওই বিদ্যালয় শিশুশ্রমিকদের পড়াশোনার জন্য একটি ইউনিট চালু থাকলেও তা বন্ধ রয়েছে জেলাশাসকের নির্দেশে। শুধু ওই ধরনের বিশেষ বিদ্যালয় শুধু শান্তিপুর চারটি নয় জেলায় প্রত্যেকটি বিদ্যালয় বন্ধ।

নবজাগরণ সংস্থার পক্ষ থেকে রনা প্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন শুধু স্কুলে ভর্তি নয়, সংসারের আর্থিক ঘাটতি পূরণের জন্য ওই পরিবারকে আহারাদি দিয়ে সহযোগিতা করা হবে নিয়মিত। কাউন্সিলর প্রশান্ত বিশ্বাস এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এই কারণেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রয়োজন, ওয়ার্ডের নানান দায়িত্ব সামলানোর মাঝে অনেককিছুই আমাদের জানা সম্ভব হয়না।

প্রধান শিক্ষক শান্তিময় হালদার বলেন, স্কুলছুট অনেকেই স্কুলে ফেরাতে সফল হয়েছি আমরা তবে গোপাল আমাদের বাড়তি পাওনা। যেহেতু এক বছর পড়াশোনা বন্ধ ছিল এবং প্রায় চার মাস দেরি তে ভর্তি হল তাই ওর জন্য বিশেষ নজর থাকবে আমাদের।

গোপালের বাবা স্বপন দাস জানান, তিনি অত্যন্ত খুশি হয়েছেন ছেলেকে আবারো পড়াশোনার ব্যবস্থা হওয়ার কারণে। স্কুলের অংকের শিক্ষক আবু হোসেন সহপাঠীদের সাথে পরিচয় পর্ব সেরে তাকে নতুন করে পড়াশোনা শেখাতে শুরু করেন আজ থেকেই।

গোপাল বই-খাতা জামা-জুতো স্কুল ব্যাগ পেয়ে বেজায় খুশি সে বলে, এখন থেকে নিয়মিত স্কুলে আসবো ভাঙাচোরা কুড়াতে যাব না কোনদিন।