অবতক খবর,৭ জুলাই: হালিশহর এখন সেরার সেরা। না না, উন্নয়নের দিক থেকে নয়।পুকুর ভরাটে ধীরে ধীরে হালিশহর সেরার সেরা শিরোপাটি পেতে চলেছে।

কারণ প্রতিদিনই হালিশহরের একটি করে পুকুর ভরাটের উদ্যোগ নিচ্ছে এই পুকুর মাফিয়ারা। দিনের পর দিন এই পুকুর মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে, অভিযোগ হচ্ছে থানা প্রশাসনে, তবুও তাদের এতটুকুও ভয় নেই। ভরাট তারা করেই চলেছে। কেউ করছে পুকুর ভরাট, আবার কেউ করছে ডোবা ভরাট। ভরাট চলছেই। মাঝে বীজপুরের বিধায়ক এই বিষয়টি নিয়ে খুব তৎপরতা দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন,যে সমস্ত বড় বড় পুকুর রয়েছে তার সামনে পৌরসভার পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড লাগানো হবে,যাতে ওই পুকুরগুলো ভরাটের দুঃসাহস কেউ না দেখাতে পারে। তা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে ঐ সকল পুকুরগুলো জোরকদমে ভরাট চলছে।

এর আগেও আমরা হালিশহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের পুকুর ভরাট নিয়ে বিভিন্ন রকম সংবাদ পরিবেশন করেছিলাম। যেমন- হালিশহর ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিমানীশ ভট্টাচার্য্যের ওয়ার্ডে চলছে পুকুর ভরাট। ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর সরকারের ওয়ার্ডে পুকুর ভরাট চলছে।৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৃষ্ণা চ্যাটার্জী,তাঁর ওয়ার্ডে পুকুর ভরাট চলছে। ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পারমিতা দাস, তাঁর ওয়ার্ডে পুকুর ভরাট হচ্ছে।৯ নং ওয়ার্ড প্রণব লোহর অঞ্চলে চলছে পুকুর ভরাট। ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মমতা সাউয়ের ওয়ার্ডে চলছে পুকুর ভরাট। ১২ নং ওয়ার্ড, কাউন্সিলর শৈবাল রায়ের ওয়ার্ডে বেআইনি পাইলিং করা হচ্ছে।তবে তিনি নিজেই পুরসভায় অভিযোগ জানিয়েছেন।১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস,তাঁর ওয়ার্ডে ২টো পুকুর ভরাট চলছে। ১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পার্থ সাহার অঞ্চলে পুকুর ভরাট চলছে।তবে তিনি নিজেই অভিযোগ করেছিলেন পৌরসভায়। ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লীলা সাহার ওয়ার্ডে পুকুর ভরাট চলছে।

এই ভাবেই গোটা হালিশহর জুড়ে একের পর এক ওয়ার্ডে পুকুর ভরাট হয়েই চলেছে। পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়। তবে এখন যারা ওয়ার্ড কাউন্সিলর রয়েছেন তাদের ভূমিকা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

শাসক দল তৃণমূল বলেছিল, দুয়ারে সরকার কর্মসূচি পালন করব। এখন প্রশ্ন, তাহলে নতুন বোর্ড গঠিত হবার পর এই এতগুলো ওয়ার্ডের পুকুর ভরাট কিভাবে হচ্ছে? কার মদতে হচ্ছে? প্রশ্ন তুলেছেন হালিশহরবাসী।

তবে এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছেন হালিশহর পৌরসভার উপ পৌর প্রধান শুভঙ্কর ঘোষ। তিনি খুবই সক্রিয়, যখনই তার কাছে অভিযোগ যায় তিনি সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেন এবং থানায় অভিযোগ জানান এই পুকুর ভরাটকারী মাফিয়াদের বিরুদ্ধে।

এখানেও প্রশ্ন উঠছে, উপ পৌরপ্রধান নিজের কাজ করছেন, থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তা সত্ত্বেও এই মাফিয়ারা এত সাহস কি করে পাচ্ছে? এই যে একের পর এক পুকুর ভরাট হয়ে চলেছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কি কিছুই জানেন না?

হালিশহর ৯ নং ওয়ার্ডের বারেন্দ্র গলিতে, হালিশহর পৌরসভার কাউন্সিলর এবং সিআইসি প্রণব লোহর বাড়ি থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে একটি পুকুর ভরাটের অভিযোগও উঠেছে।

আমরা এই বিষয়টি নিয়ে হালিশহর পৌরসভার উপ পৌর প্রধান শুভঙ্কর ঘোষের সঙ্গে কথা তিনি জানান, বিষয়টি দেখছি।

হালিশহর পৌরসভায় শুভঙ্কর বাবু দায়িত্ব পাওয়ার পর এ বিষয়ে অত্যন্ত তৎপর হয়েছেন। অভিযোগ পেলেই তিনি থানায় যাচ্ছেন, পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

এইসব দেখে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেস তো হচ্ছে, কিন্তু যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি প্রশাসনের পক্ষ থেকে?

কিন্তু সরকারি পুকুরগুলিও যদি ভরাট হয়ে যায়,তবে তো মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যে বারবার বলছেন, কোন পুকুর ভরাট করা চলবে না, তাহলে তাঁর কথার মূল্য তো কেউই দিচ্ছে না। তবে কি এই পুকুর মাফিয়ারা নিজেদের সর্বেসর্বা ভাবে? তারা ভাবে তারা কারোর কথায় তোয়াক্কা করবে না। আর বাস্তবে তারা সত্যিই কাউকে তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন পুকুর ভরাট করে চলেছে। অর্থাৎ তাদের সাহস বেড়েই চলেছে।

তবে কি তাদের মাথার উপর রয়েছে আরও বড় কোন হাত? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।