অবতক খবর,২৪ নভেম্বর: পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম পার্টিতে এরিয়া কমিটি গঠনের সম্মেলন চলছে। বামপন্থী রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে এখন ভাটার মুখে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। দক্ষিণপন্থী রাজনীতির প্রাবল্য এবং তাদের যে অভিমুখ জনগণকে কিছু পাইয়ে দাও, তাতে জনতার মান সম্মান যায় যাক, সেই পদ্ধতি তারা অবলম্বন করেছে। ৩৪ বছর পশ্চিমবঙ্গ শাসন করলও বাম চেতনা বাম আমলে তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে মানুষকে গড়ে তোলা যায়নি। ফলত, তৃণমূলের এক ধাক্কায় বামফ্রন্ট নামে যে বামপন্থী দল এতদিন পরিচিত ছিল জনগণের কাছে, তা প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বামফ্রন্টের অন্যতম যে সিপিএম সেও রাজনৈতিকভাবে মানুষের কাছে গ্ৰহণযোগ্যতা কিভাবে গড়ে তোলা যাবে সে ব্যাপারে যথার্থ দিশা দেখাতে পারছে না। এক কথায় হাতড়াচ্ছে।‌ পার্টি চাইছে এখন বিশেষভাবে মহিলাদের এরিয়া কমিটিতে প্রাধান্য দিতে। কারণ ভারতবর্ষে বর্তমানে একজনই মহিলা মুখ্যমন্ত্রী,সেটা পশ্চিমবঙ্গে এবং ভোটের হিসাবে মহিলাদের ঝোঁক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। ফলত নতুন মহিলা মুখ তারা দলে চাইছেন, চাইছেন তারুণ্যের জোয়ার।

অন্যদিকে সিপিএম যে সংহতি স্থাপন করে জনগণের মধ্যে একটা বার্তা দেবেন তাও বিশেষ করে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ অনেক এরিয়া কমিটিতেই দেখা যাচ্ছে দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। এক গোষ্ঠী একাধিপত্য কায়েম করে অন্য পক্ষকে দাবিয়ে রাখতে চাইছে। সামনে যে পৌরনির্বাচন, সেই সময়ে তারা জনগণকে কি বার্তা দেবেন তা বুঝতে পারছেন না।
ফলে বহু সদস্য তো বটেই, সাধারণ বামমনস্ক মানুষের মধ্যেও ব্যাপক বিরূপতা তৈরি হয়েছে।
তাদের এরিয়া কমিটিতে তারা চাইছেন ৩১ বছরের কম বয়সের সদস্য নিতে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই বয়স ভিত্তিক, সেই সদস্য সংখ্যায় টান পড়েছে। কমিটিতে অন্ততপক্ষে দুজন মহিলা মুখ চাই এবং ৩১ বছরের নিচে তিন বছর ধরে যথাসময়ে লেভি প্রদান করেছে,এমন তরুণ মুখ চাই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই নির্দেশিকা অনুযায়ী কমিটি গঠিত হয়নি অর্থাৎ এই ৩১ বছরের নিচে কোন সদস্যই পাওয়া যাচ্ছে না।

অন্যদিকে পার্টিও দিশেহারা হয়ে পড়েছে বয়সের সময়সীমা নির্ধারণের বিষয়ে। একটা এলোমেলো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বয়স সীমা ৫৫ বছর এবং এরিয়া কমিটিতে বয়সসীমা ৫০ বছর। দুই কমিটিতে দুই রকম বয়সের পার্থক্য। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে যে তারুণ্যের জোয়ার সেভাবে নেই। তরুণদের সেইভাবে রাজনৈতিকভাবে গড়ে তোলা যায়নি এবং এমনও বলা হয়েছে যে, কমিটিতে ৩১ বছরের নিচে যদি কোন তরুণ সদস্য না পাওয়া যায় তবে সেই সদস্যপদ ফাঁকা থাকবে। উপযুক্ত সময়ে পাওয়া গেলে তবেই সেই জায়গা পূরণ করা হবে নচেৎ ফাঁকাই থাকবে।

সিপিএম সংসদীয় বামপন্থী দল হিসেবে যে সামনের দিনে বামপন্থী আন্দোলনেতেমন দিশা দেখাতে পারবে কিনা,তাতে সন্দেহ রয়েছে। প্রতিদিনই এক একটি জনবিরোধী ঘটনা ঘটে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে সিপিএম কেন অন্য কোনও বামপন্থী দলও
লাগাতার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। সত্তরের তুফান তোলা বাতাস মিইয়ে গিয়েছে।আর অস্বীকারের উপায় নেই, আন্দোলন গড়ে তোলার সেই স্ট্যাণ্ডার্ডের নেতা নেই–সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই!!!