অবতক খবর,১৮ এপ্রিল: রাজ্য সরকারের বুঝতে অনেক দেরি হল। তারা বারবার ২১টি চ্যানেলে ২ মিনিট অন্তর অন্তর বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন,আতঙ্ক ছড়াবেন না, গুজবে কান দেবেন না। একই মুখে কি দুই কথা শোভা পায়? দ্বিচারিতা কেউ করলে তিনি কি নিজেকে খুবই পণ্ডিত মনে করেন? জনগণ কি নির্বোধ? তাদের বোধবুদ্ধি কিছু নেই? একটা সরকারকে বুঝতে হয় এই নির্বোধ জনগণের দ্বারাই তিনি নির্বাচিত হন। জনগণ যদি নির্বোধই হয়ে থাকেন তবে তাকে নির্বাচন করবেন কেন? যাইহোক এসব কথা অপ্রাসঙ্গিক।

এখন জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন। পশ্চিমবঙ্গ ক্রমাগত জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে।
উত্তরবঙ্গের অবস্থা ভালো নয়। ‌ ডাক্তারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এক বেসরকারি ডাক্তার যিনি প্র্যাকটিস করতেন, খবর পাওয়া গেছে তিনি করোনা আক্রান্ত। ফলে অন্যান্য ডাক্তাররা প্র্যাকটিস করা বন্ধ করে দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের হাসপাতালগুলোতেও ডাক্তারদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। শিশুদের চিকিৎসায়ও ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ ডাক্তাররা। কিন্তু তাদের জীবনের প্রতি দায়বদ্ধ কে? সরকার, রাষ্ট্র তাদের প্রতি কি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছেন? ডাক্তারদের বলা হয় দ্বিতীয় ঈশ্বর এবং এই মর্ত্যভূমির দৃশ্যমান প্রথম ঈশ্বর। ‌সেই ডাক্তাররা নীরবে রাষ্ট্রীয় অত্যাচার সহ্য করছেন মুখ বুঝে। ভয়,আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাদের। ‌ যেখানে রাষ্ট্রনায়ক যাদের ওপর রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্ভরশীল তিনি যদি তাদের উপেক্ষা করেন, তাদের নাম ধরে ডাকেন, সরকারি মর্যাদা না দেন তাহলে সেই রাষ্ট্র কোন দিকে যাবে? এখানে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির অবস্থার কথা সামান্যভাবে বলা হল। ওই অঞ্চলে গেলে আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন কি অবস্থা চলছে। সেই আতঙ্ক জনমনে ছড়িয়েছে।

আতঙ্ক ছড়াবেন না, গুজবে কান দেবেন না, এই বিজ্ঞাপন কোন কার্যকরী হচ্ছে না। ১০ লক্ষ করে দিলাম কি ২০০ কোটি করে দিলাম,এসব কথা মুখে বলা যায় কিন্তু আপনার জীবনের পাশে আমি আছি,এটা করে দেখাচ্ছি এটা বোঝা খুব মুশকিল। এটা বোঝানো সহজ নয়। খড়ি দিয়ে কয়েকটা গণ্ডি কাটলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে, আমি জনগণের সঙ্গে আছি, এই কৌশল পুরনো হয়ে গেছে। ‌

এদিকে হাওড়ায়ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ‌ হাওড়া অঞ্চলে অনেক সাধারণ মানুষই যেতে চাইছেন না। ‌ একটা ভীতি তৈরি হয়েছে। সেখানে ডাক্তার-নার্সরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ‌

অন্যদিকে দালাল মিডিয়াগুলো যারা অনুদানপ্রাপ্ত তারা এই সমস্ত তথ্য চেপে যাচ্ছেন কার স্বার্থে? তারা এত টাকা-পয়সা নিয়ে কি করবেন? রাজ্যে যদি মানুষ মরে যায় ওই টাকা কি তারা চিবিয়ে খাবেন? তাদের চ্যানেল দেখবে কে?

মুর্শিদাবাদ, মালদহের অবস্থা কি কেউ বিস্তারিত জানেন বা আমাদের পাশের নদিয়া জেলার পরিস্থিতি?
জে এন এম হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসা শিকেয় উঠেছে। ইমারজেন্সি বিভাগেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই। একদম জুনিয়র ডাক্তাররা ও আয়ারা হাসপাতাল চালাচ্ছে, এমনই হাল।

এদিকে ব্যারাকপুর অঞ্চলে কি ঘটনা ঘটছে, মানুষ কি অবস্থায় আছে, আমরাএই অঞ্চলের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও স্বচ্ছ পরিষ্কার ছবি দেখাতে পারছি না। অন্যদিকে ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া অঞ্চলে এখন কি অবস্থা প্রতি মুহূর্তে আমরা জানতে পারছি না, মানুষকে বোঝাতেও পারছি না।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও সেইভাবে সক্রিয় হয়ে মানুষের কাছে সংবাদ পৌঁছাতে সচেষ্ট হচ্ছেন না। এক ত্রাণের সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে তারা পড়ে গেছেন। আমরা জনগণের পাশে আছি, ত্রাণ দিচ্ছি এটাই এখন বড় বিষয় হয়ে গেছে। ‌ এটা একটা প্রতিযোগিতামূলক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কে কত ত্রাণ দিতে পারে। কিন্তু মানুষের পরিত্রাণ কি করে হবে? কি করে এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে মানুষ বাঁচবে? সেদিকে তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই।

লকডাউনও সব জায়গায় যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে না। পুলিশ এবং পৌর প্রশাসন নিষ্ক্রিয় এবং উদাসীন। তারা এর গুরুত্ব বুঝছেন না।

রাজ্যপালও রেশন ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন কিন্তু ডাক্তারদের পরিস্থিতি এবং চিকিৎসার প্রগতি নিয়ে কিছু বলছেন না।এ বিষয়ে তাঁর ভূমিকা কী হওয়া উচিত সে বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য শোনা‌ যাচ্ছে না।

কি হবে পশ্চিমবঙ্গের? পশ্চিমবঙ্গ কোনদিকে চলেছে? প্রভু, তুমি কোথায় নিয়ে চলেছ পশ্চিমবঙ্গকে? ক্যুয়ো ভ্যাডিস! পশ্চিমবঙ্গ যাবে কোথায়?