পতাকার মান-অপমান / তমাল সাহা

নেতারা জাতীয় পতাকা ওড়ায়, হতভাগ্য নিরক্ষর এক জাতীয় পতাকা কুড়ায়। আজ তাকে নিয়ে লিখি

পতাকার মান-অপমান
তমাল সাহা

সে কী উল্লাস গর্জন!। কী আওয়াজ!
মেরা ভারত মহান।
সারে জাঁহা সে আচ্ছা,ভেসে যায় কত গান।

জয়হিন্দ! বন্দেমাতরম!
দিকে দিকে ওঠে স্লোগান—
লালকেল্লার উপর উঠে যায় তিরঙ্গা নিশান।

রাস্তায় নেমে পড়ে নেতা।
গায়ে খদ্দরের সাদা পাঞ্জাবি পায়ে সাদা স্নিকার।
স্বাধীনতা আজ নিয়েছে উৎসবের বিরাট আকার।
নিচে নেমে যায়
পাঞ্জাবির হাফ কিংবা ফুল হাতা।
উপরে উঠে যায়
একের পর এক জাতীয় পতাকা।

জাতীয় পতাকা, তিরঙ্গা পতাকা—
বিলি হচ্ছে হাতে হাতে।
কার চক্রান্তে দেশ দুভাগ হল মধ্যরাতে?

জাতীয় পতাকার শেকল শোভা পায়
রাস্তার এপার থেকে ওপার।
দুলছে নড়ছে উড়ছে,
দেখো আমাদের জাতীয় পতাকার কী বাহার!

জাতীয় পতাকা ওড়ে।
তারপর ঝড় বৃষ্টির তোড়ে—
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝরে পড়ে।
মানুষ রাস্তায় হাঁটে, আসে যায়
জাতীয় পতাকা তখন পদদলিত
তার পায়ের পাতায়।

ওই দেখো নেমে পড়েছে ছেলেটি—
কাগজ কুড়ানো নয় তার পেশা,
এ এক অপূর্ব দেশপ্রেমের নেশা।
সে নেমে পড়েছে দেখো ভোর হতেই রাস্তায়।
কুড়িয়ে বেড়ায় ছিঁড়ে পড়া যত জাতীয় পতাকা
কেউ যদি মাড়িয়ে যায়!

গান্ধী মোড়,কবিগুরু রবীন্দ্র পথ যেখানে যত ছিল উড়ে আসা পতাকা পথের উপর,
যেন চেয়ে আছে তার দিকে শান্ত চোখ
অপমানে আহত নিথর।

সে কুড়োতে থাকে,
ভর্তি করতে থাকে একটির পর একটি থলে,
আজ যা জাতীয় পতাকা কাল তা ওর কাছে নয়, আমাদের কাছে এলেবেলে।

থলের ভেতর লুকিয়ে পড়ে
সমস্ত জাতীয় পতাকার মুখ।
ছেলেটি তো নিরক্ষর।
দেশের পতাকা কুড়োতে তার স্পন্দিত বুক!

কি করে বুঝল সে জাতীয় পতাকার দাম?
সে তো গরিবগুর্বো, কোনমতে শ্রম বেচে খায়,
তাকে কে দেবে এ কাজের ইনাম!

এই দেশে হায়! নেতারা পতাকা ওড়ায়
আর হতভাগা ঐ পতাকা কুড়ায়।

পতাকা উড়িয়ে তিনি আজ নেতা মহারাজ।
পতাকা কুড়িয়ে দেশপ্রেম বুকে নিয়ে
সে বেকার, পায়নি কো কাজ।

মেরা ভারত মহান!
রে পতাকা কুড়ানেওলা তুঝে সেলাম।