দেশপ্রেমের জোয়ারে ভাসছে দেশ।

নিহত সৈনিকের প্রতি
তমাল সাহা

এখন তোমার জন্য কত
ছন্দোবদ্ধ শোকগাথা-এপিটাফ!
চিত্রকল্পে চলে যাবে তুমি,
দেখানো হবে তোমার মৃত্যুর সঙ্গে
আমাদের মৃত্যু কতটা তফাত।

পলাশের সঙ্গে অন্ত‍্যমিলে চলে যাবে লাশ।
তুষারপাত হবে,চিনারের ডাল নুয়ে পড়বে
তোমার শোকে।
কত হা হুতাশ দীর্ঘশ্বাস পড়বে ঝরে,
এই ভূলোকে।

দেশপ্রেমের জোয়ারে ফুঁসছে নদী
সমুদ্রে জেগেছে উত্তাল ঢেউ।
কে বলেছে তোমায়,
তুমি নও আমাদের কেউ?

ফুলবাজারে গিয়েছি ছুটে
দুধ উথলানো দেশপ্রেমে পাইনি খুঁজে
একটিও গোলাপ স্তবক
রজনীগন্ধা ফুল বা মালা।
সৈনিক! তুমি বুঝবেনা
কি শোক আমাদের, কি ভালোবাসা ছিল
তোমার জন্য তোলা!

ঠাসাঠাসি গাদাগাদি করে গিয়েছিলে
কোন রণাঙ্গনে?
হাত-পা ভেঙে গুলিবিদ্ধ জখম হয়েও ফিরলে না তুমি,
ফিরলে শবদেহ বন্দি কফিনে।

তোমার জন্য রুমালে শোক মুছে
রাষ্ট্রনেতা দিচ্ছে উত্তেজক ভাষণ—
বদলা চাই, দেশপ্রেমিক হত‍্যার
বদলা চাই।
জানি আমরা সামনে নির্বাচন।

মনে পড়ে,
সেই সৈনিক রুটির জন্য অনশন
সেনানীর সেই লড়াই সমপরিমাণ পেনশন!
সেসব এখন ভুলে গেছে রাষ্ট্র।
আমরাও এখন
রাষ্ট্রের সঙ্গে একাকার দিকভ্রষ্ট।

রাষ্ট্রচালক বেতন পায় দেড় লাখ টাকা, আয়করমুক্ত।
তুমি পাও মাসিক বিশ হাজার
তা তো আয়করযুক্ত!
পরিবার ছাড়ো তুমি, হাজার হাজার মাইল দূরে চলে যাও।
রোদ, ঝড়, জল,বৃষ্টি মাথায় সীমান্তে দাঁড়িয়ে
তুমি অতন্দ্র দেশপ্রহরী
পরিবারের সঙ্গে থেকে রাষ্ট্রনেতা অতিরিক্ত পঞ্চাশ হাজার টাকা পায়,
আহা, গণতন্ত্র কি বাহারী!

দেশের জন্য নাকি খেলে!
বল্লেবাজদের ইনাম এক কোটি!
বুকভর দিয়ে হাঁটো,বাঙ্কারে থাকো,
বিমানে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করো
দেশের জন্য জান বাজি রাখো।
ইনাম? শুধু দুবেলা দুটো রুটি।
তখন কোথায় শোকের এত লুটোপুটি?

বধ‍্যভূমে কী পড়ে থাকে?
ধ্বংস! জীবনের নেই কোনো চিহ্ন—
তালগোল পাকানো দেহ, মাংসপিন্ডের দলা,চাপচাপ
রক্ত, অঙ্গ-প্রত‍্যঙ্গ ছিন্নভিন্ন!

আমার ঘরের ছেলে তো যুদ্ধে যায়।
মন্ত্রীরাও তো কারও ছেলে
তারা কি কখনো নিহত হয়,গুলি খায় ?
বৈধব্য শোকে আকুল স্ত্রী তাহার
পুত্রহীন মাতার অসংলগ্ন প্রলাপ
দেখেছো, শুনেছো কোথায়?

তুমি তো সৈনিক,
তোমার জন্য আমি লিখিনাকো কোনো শোকগাথা।
যুদ্ধে দুপক্ষেরই সৈনিক মরে,
দুপক্ষেরই মাতা ও প্রিয়তমার একই ব্যথা।

আমি শুধু বলি, রাষ্ট্রের স্বার্থ—
নিজের তৈরি এই সমস্যা ও যুদ্ধ।
মৌনমিছিল নয়,
নিহত সৈনিকের অস্ত্র তুলে নাও হাতে
তার প্রতি শ্রদ্ধায় হও ক্রুদ্ধ।