কার্টুনিস্ট, কমিকস মাস্টার আমি বুঝিনা, আমি জানি তিনি কিশোর-হৃদয় দ্রষ্টা,বড়দের নির্মল আনন্দদাতা, তিনি তুলি-কালিতে অতুলনীয় লিপিকার নারায়ণ দেবনাথ। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।

নারায়ণ দেবনাথ
তমাল সাহা

এক)
দি গ্রেট

ছাড়ো! ছাড়ো!দাও দাও আমাকে আগে
ছোটদের কাগজ বলেছিলে না,
এখন দেখি নিজেই পড়ে নিচ্ছ আগেভাগে!

এই বলে বূকুন আমার হাত থেকে
শুকতারাখানি দ্রুত নিল কেড়ে।
এরপর আমি আর কি করি!
রইলুম মুখখানা শুকনো করে।

আমি তো হাঁদা ভোঁদা পড়ছিলুম,
ভেবেছিলুম বাটুল দি গ্রেট-টা নেবো পড়ে
তোকে দেবো তারপরে।
না তা কেন হবে! মেজাজে বলল বুকুন
এ বয়সেই ওর কি মেজাজ আপনারাই দেখুন।

এরপর বলো, দে না বুকু সোনা আমার!
একটু সময় দে, পড়ে নিই নন্টে ফন্টে।
বাপি, আহা! কি করুণ সুর তোমার কন্ঠে।

বাহাদুর বেড়াল– সে কী বাহাদুরি!
আসল বাহাদুর আজ গিয়েছে উড়ি।

এই হচ্ছে নারায়ণ দেবনাথ!
ছেলে-বুড়ো সকলেই তার কাছে কুপোকাত।
তুমি যদি ফিরে পেতে চাও
সেই হাফপ্যান্ট-ইজের পরা দিন।
নারায়ণ! নারায়ণ! বলে
বইগুলো হাতে নিয়ে পৃথিবী করো প্রদক্ষিণ।

কেউ বলে কার্টুনিস্ট,
কেউ বলে মজার কমিকস স্রষ্টা।
আমি বলি,
তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সিরিয়াস মানুষ
তুলি হাতে কলমী শিশু হৃদয় দ্রষ্টা।
বিশ্বে কেউ নেই এতো সামাজিক।
তোমার সৃষ্টি শিশু থেকে বুড়ো চিরজীবী
ঘরে ঘরে– একেই তো বলে পারিবারিক।

একজন লেখকের
এর চেয়ে বড় হতে পারে কোনো পরিচয়?
এভাবেই নারায়ণ দেবনাথ মৃত্যুঞ্জয়
জিতে নেয় মানুষের হৃদয়।

কৈশোরে মনে মনে খুব রাগ হতো— তুমি এতো কিপটে কেন?

দুই)
কিপটেটা চলে গেল

তুমি চলে গিয়েছো আমার দুঃখ নেই তাতে।
বয়স হয়েছিল, বার্ধক্য ছুঁয়েছিল তোমাকে দুহাতে।
সহস্রলোচন এসেছিল, নিয়ে গেছে তোমায় ইন্দ্রসভাতে।

শেষযাত্রায় ওরা ছিল একাই একশো।
যদিও বাটুলের মত ছেলেও কেঁদে ফেলেছিল।
লম্বকর্ণ বলে, কাঁদতে নেই এই সময়ে।
হাঁদাভোঁদা, নন্টে ফন্টে শবদেহ ছুঁয়ে ছিল।
কেল্টুও ছিল পাশে দাঁড়িয়ে
সঙ্গে প্রিয় বাহাদুর বেড়ালটাও ছিল।

তবে আমার অভিযোগ আছে—
তুমি খুব কিপটে ছিলে সন্দেহ নেই তাতে।
অল্প অল্প করে দিতে আমাদের পাতে
হাঁদাভোঁদা, বাটুল দি গ্রেট পোষায় কি মাত্র দু পাতাতে?

তোমার ছিল বড় ঘ্যাম– মানে দাম।
একটু একটু করে দিতে আর আড়চোখে তাকাতে।
বলতে মনে মনে, তোরা বড় লোভী!
পাঠের আগ্রহ আছে কিনা পরীক্ষা করতাম!

আমি ভালোবাসতাম তোমাকে, তুমিও আমাকে।
ঘনঘন আমার দিকে তাকাতে।
আবার দীর্ঘ এক মাস অপেক্ষা
হাদাঁভোঁদা বাটুল কি কাণ্ড বাঁধাবে–
এতসব কি করে আসতো তোমার মাথাতে!

কেউ যদি আমার কথা অস্বীকার করে
তবে আমি বলব,
সে পাঠক নয়, আস্ত একটা ফড়ে।
তোমার তুলি-কলমে এত আকর্ষণ!
বড় বড় লিখেয়েরাও তোমার ধারে কাছে নেই
তিনি যতই হোন মহাপন্ডিত বা বিচক্ষণ!