অবতক খবর,১২ আগস্টঃ ভারতের ইতিহাসে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ছিলেন একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম আচার্য। শিক্ষার প্রসার ও কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তারিখ হিসাবে ১৮৪১ সালে ২ রা আগস্ট জন্ম বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখিত থাকলেও তিথি অনুযায়ী ঝুলন পূর্ণিমায় আবির্ভাব তিথি পালন করার রীতি পরিবার এবং পৃথিবীব্যাপী তার বিভিন্ন শিষ্য এবং ভক্তবৃন্দদের মধ্যে।

নদীয়ার শিকারপুর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ এবং শৈশব কাটলেও কৈশর বড় ওঠা সমস্ত কর্মকাণ্ড নদীয়ার শান্তিপুরে এল কে মৈত্র রোডে অবস্থিত তাঁর পৈত্রিক ভিটেতেই । তিনি অদ্বৈত প্রভুর দশম পুরুষ ছিলেন।

বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর বিদ্যাশিক্ষা শুরু হয় ১৮৫০ সালে শিকারপুরের ভগবান সরকারের সংস্কৃত স্কুলে। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন, ফলে সময়ের মধ্যেই তিনি বিদ্যার্জন সম্পন্ন করেন । বিজয়কৃষ্ণ শান্তিপুরে গোবিন্দ গোস্বামীর বিদ্যালয়েও শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। বিদ্যালয় শিক্ষা সমাপ্ত হলে ১৮৫৯ সালে কলকাতার সংস্কৃত কলেজে বিজয় কৃষ্ণ ভর্তি হন। এই সময়ে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী কলকাতা মেডিকেল কলেজে মেডিসিন নিয়েও পড়াশোনা করেন।

এখানে পড়াকালীন সময়ে এক ব্রিটিশ অধ্যাপকের বর্ণ বৈষম্যমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনিই সর্বপ্রথম ব্রিটিশ ভারতে ধর্মঘটের ডাক দেন। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ায়, শেষে বিদ্যাসাগরের মধ্যস্থতায় এর নিষ্পত্তি ঘটে। কলেজে পড়াকালীন বেদান্ত পড়তে গিয়ে এই দিকে তাঁর প্রবল উৎসাহ গড়ে ওঠে এবং অচিরেই তিনি তাঁর চিকিৎসক হওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। মেডিকেল কলেজ ছেড়ে তিনি হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করেবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর বিদ্যাশিক্ষা শুরু হয় ১৮৫০ সালে শিকারপুরের ভগবান সরকারের সংস্কৃত স্কুলে।

তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন, ফলে অন্যান্য ছাত্রের তুলনায় পাঠ্যক্রম তাঁর তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে যেত। বিজয়কৃষ্ণ শান্তিপুরে গোবিন্দ গোস্বামীর বিদ্যালয়েও শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। বিদ্যালয় শিক্ষা সমাপ্ত হলে ১৮৫৯ সালে কলকাতার সংস্কৃত কলেজে বিজয় কৃষ্ণ ভর্তি হন। এই সময়ে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী কলকাতা মেডিকেল কলেজে মেডিসিন নিয়েও পড়াশোনা করেন।

এখানে পড়াকালীন সময়ে এক ব্রিটিশ অধ্যাপকের বর্ণ বৈষম্যমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনিই সর্বপ্রথম ব্রিটিশ ভারতে ধর্মঘটের ডাক দেন। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ায়, শেষে বিদ্যাসাগরের মধ্যস্থতায় এর নিষ্পত্তি ঘটে। কলেজে পড়াকালীন বেদান্ত পড়তে গিয়ে এই দিকে তাঁর প্রবল উৎসাহ গড়ে ওঠে এবং অচিরেই তিনি তাঁর চিকিৎসক হওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

মেডিকেল কলেজ ছেড়ে তিনি হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হিসেবে অনুমোদন বা স্বীকৃতি লাভ করেন। যা পরবর্তীতে শান্তিপুরের বাড়ি থেকে বিনামূল্যে রোগী পরিষেবায় যেতেন নিয়মিত।

কলকাতায় থাকার সময় থেকেই ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে বিজয়কৃষ্ণের যোগাযোগ তৈরি হয়। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গেও তাঁর একান্ত নৈকট্য ছিল। ১৮৬৪ সালে বিজয়কৃষ্ণ ব্রাহ্মসমাজের আচার্য পদ গ্রহণ করে নানান স্থান ভ্রমণ করে ব্রাহ্ম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। এই সময়ে তিনি কখনো বা আশ্রয়হীন কখনো বা খাদ্য বিহীন হয়ে বাঘ, সাপ ও ম্যালেরিয়া সঙ্গে লড়াই করে অজ্ঞ মানুষের মধ্যে পরম সত্যের বার্তা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। হিন্দু ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে চলে যাওয়ার কারণে তাঁকে পৈত্রিক ভিটে ছাড়তে হয়।

কলকাতায় থাকাকালীন বিজয়কৃষ্ণ নব্য ব্রাহ্মসমাজের (কেশবচন্দ্র সেন প্রবর্তিত) আচার্য হন এবং বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে সমাজ সংস্কারমূলক প্রবন্ধ লিখতে থাকেন। উমেশ চন্দ্র দত্ত সম্পাদিত ব্রহ্মবোধিনী পত্রিকায় তিনি ‘আশাবাতি’ ছদ্মনামে লিখতে থাকেন পরে যেগুলি ‘আশাবাতির উপাখ্যান’ নামে একটি বই হয়ে প্রকাশিত হয়। তাছাড়াও তত্ত্ববোধিনী ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি পত্রিকাতেও তাঁর বিভিন্ন লেখা বেরোয় । বিজয়কৃষ্ণের প্রচেষ্টায় ১৮৭৪ সালে ব্রাহ্মসমাজের মধ্যে সংকীর্তন আন্দোলন ঘটে। তিনি এই সময়ে বেশকিছু ব্রহ্মসংগীত রচনা করেন। তিনি বিহার, উত্তর প্রদেশ,আসাম ও পাঞ্জাবের নানা স্থানে ব্রাহ্ম ধর্ম প্রচারে গেছিলেন। পরবর্তীকালে ব্রাহ্মসমাজ বিভাজিত হয়ে যায়- সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ এবং নববিধান ব্রাহ্ম সমাজ এই দুই গোষ্ঠীতে। নববিধান ব্রাহ্ম সমাজের নেতা হন কেশব চন্দ্র সেন। এই বিভাজন তাঁকে প্রবল দ্বিধার মধ্যে ফেলে দেয়। তাঁর মনে হয় ব্রাহ্মধর্মে ঈশ্বরের উপলব্ধি সম্পূর্ণ হয় না। তখনই তিনি গুরুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাঁর অস্থির আত্মা এই রকম নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অন্যান্য ধর্মের পথের খোঁজ করেও তৃপ্ত হয় না। ব্রহ্মানন্দ পরমহংস তখন তাঁকে পথ দেখান। তিনি বলেন যে একজন সদ্গুরুর সংস্পর্শে না এলে কখনোই ধর্মীয় আত্মোপলব্ধি সম্ভব নয়। বিজয়কৃষ্ণ তাঁকে নিজের গুরু হতে বলায় ব্রহ্মানন্দ তাঁকে বলেন ঈশ্বরের নির্দেশ না এলে গুরু হওয়া যায়না। এই কথা শুনে অস্থির বিজয়কৃষ্ণ কিছুদিনের ছুটি নিয়ে সদ্গুরুর খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। সর্বত্র সকল সাধুরাই তাঁকে বলেন যে বিজয়কৃষ্ণের সদ্গুরু তাঁরই অপেক্ষায় আছেন। তিনি হিমালয়ের পাদদেশে জঙ্গলে জঙ্গলে,গঙ্গার ধারে, নর্মদার তীরে ঘুরে বেড়ান। সেখানে বাউল, কবীর, লামা, রামাইৎ, যোগী, তান্ত্রিক, অঘোরী সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে আসেন কিন্তু তাঁর গুরু অধরাই থেকে যায়। কাশীতে গিয়ে ত্রৈলঙ্গ স্বামীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাঁর কাছে শিবমন্ত্র গ্রহণ করলেও ত্রৈলঙ্গ স্বামীর আচার আচরণে তাঁকে তিনি মনে প্রানে গুরু স্বীকার করতে দ্বিধা বোধ করেন। এরপরে তিনি গয়া গিয়ে রামাইৎ সাধু রঘুবর দাস বাবাজীর আশ্রমে থাকেন। একদিন তিনি পাহাড়ের উপরে তাঁর পরম আরাধ্য ব্রহ্মানন্দ পরমহংসকে যোগসমাধিস্থ অবস্থায় দেখতে পান ও তাঁর কাছে যান। সদ্গুরু তাঁকে আলিঙ্গন করেন এবং শক্তিশালী মন্ত্রোচ্চারণ করেন। মন্ত্র শুনে বিজয়কৃষ্ণ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন এবং টানা এগারো দিন সমাধিস্থ থাকেন। চরম ঈশ্বরোপলব্ধি ঘটে তাঁর। গুরুর আদেশে মানুষকে এই চেতনার সন্ধান দেওয়া শুরু করেন তিনি।

বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী গয়াতে সাধুদের সংস্পর্শে এসে বৈষ্ণবধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। ফলে তার সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের মতবিরোধ হয় এবং তিনি ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মধর্ম ত্যাগ করে বৈষ্ণব সাধনায় মগ্ন হন। তিনি যে বৈষ্ণবধর্ম প্রচার করেন তা নব্যবৈষ্ণবধর্ম নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন নব্যবৈষ্ণব আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তিত্ব। নারীর উন্নতি ও স্ত্রীশিক্ষার পক্ষপাতী আধুনিক মানুষ ছিলেন তিনি। অশ্বিনীকুমার দত্ত, বিপিনচন্দ্র পাল, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ‍্যায় প্রমুখ ব‍্যক্তি এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।সন্ন‍্যাস গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় অচ‍্যুতানন্দ সরস্বতী।

প্রবল ভাববাদ একদিকে, অন্যদিকে নিরাকার উপাসনা এই টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে বিজয়কৃষ্ণ ঈশ্বরোপলব্ধিতে দ্বিধাদীর্ণ হয়ে ব্রাহ্ম ধর্মের প্রচার থেকে সরে আসেন,এবং পরবর্তীকালে সাধন ভজনেই তিনি আত্মসমাহিত হন। ঢাকার গেণ্ডারিয়াতে

বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর শিষ‍্যরা তাঁর সাধন আশ্রম তৈরি করে দেন যেখানে তিনি সপরিবারে এবং সশিষ‍্য বাস করেন। এখানেও তিনি তাঁর ধর্মতত্ত্ব প্রচার করতে থাকেন। তিনি এইসময় থেকে ‘আকাশ বৃত্তি’ গ্রহণ করেন ও কোন ভাবে কোন কিছুর আশা করা বন্ধ করে দেন। তিনি এইসময় ‘অজপা সাধনা’য় মনোনিবেশ করেন।

শেষ জীবনে বিজয়কৃষ্ণ পুরীতে যান সেখানে তাঁকে জাটিয়া বাবা বলে অভিহিত করা হয়। ১৮৯৯ সালে পুরীতে তাঁর মৃত্যু হয় এবং এখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।

 

সারা জীবনের বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য সারা পৃথিবীব্যাপী তাঁর গুণমুগ্ধ শীষ্য এবং ভক্তবৃন্দ রয়েছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যেই শান্তিপুরে আসেন তারা। তাঁর মৃত্যুর পর পঞ্চম পুরুষ অর্থাৎ অদ্বৈত আচার্যের ১৪ তম পুরুষ শ্রী প্রশান্ত গোস্বামী শিকারপুরের মাতুলালয়ের রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করেন। জন্ম ভিটে একটি নাট মন্দিরে রূপান্তরিত করে নিত্য পুজোর ব্যবস্থা করান। আজ তাঁর ১৮১ তম তমজন্মতিথি উপলক্ষে তিনি শিকারপুরে না যেতে পারলেও, শান্তিপুর রেল স্টেশনে বেশ কিছু নীরসাহী মানুষদের খাবার প্রদান করেন। শান্তিপুর বাবলা অদ্বৈত পাটে আশা ভক্তবৃন্দদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করেন।

১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রশান্তবাবুর পুত্র ব্রজকিশোর গোস্বামী বর্তমান শান্তিপুরের বিধায়ক। তিনি আজ শিকারপুরে গিয়ে বিপুল সংখ্যক ভক্তদের মাঝে নানান ধর্মীয় তথ্য কথা এবং বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামীর কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। সেখানেও বস্ত্র বিতরণ এবং প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করেন।

বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী বাড়ির সূত্রে জানা যায়, রানাঘাট পান্থ পাড়া,কলকাতার মনোহর পুকুর রোড, শ্রীধাম কাশিতে, পুরীতে তার সমাধিস্থল এরকম সর্বত্র তাঁর জন্ম তিথি উৎসব পালন করা হয়।