অবতক খবর , নদীয়া :      এককালের যৌবনের স্রোতস্বিনী ভাগিরথী , প্রাকৃতিক বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে গতিপথ পরিবর্তন করেছে, এগিয়ে চলার দৌড়ে নেশায় মত্ত হয়ে ভুলেছে সেদিনের প্রবাহপথ অর্থাৎ মাতৃগর্ভ । সভ্যতার চূড়ায় পৌঁছানো মনুষ্য সমাজ তার নাম দিয়েছে গুপিয়া বিল।শুধু মানুষ নয়, প্রকৃতিও বদলাচ্ছে! অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে বিবর্তিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত !

কুসন্তান যদিওবা হয়! কু মাতা কখনোই নয়।তাইতো বৃদ্ধা মাতৃসম গুপিয়া বিল ,মায়ের কোলের মতো প্রকৃতির জলজসদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে আজও। বয়সের ভারে স্রোত গিয়েছে হারিয়ে! কিন্তু সন্তান বাৎসল্য ভুলিনি আজও। ওই বিলেই উৎপাদিত মাছ সারা বছর আহার যোগায় শান্তিপুরের অধিকাংশ মানুষের। আর তা দিয়ে বিল পার্শ্ববর্তী ভালকো, বাগআঁচড়া এবং দিগনগর এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক মৎস্যজীবীর পেশায় ভাটা পড়তে দেয়নি কখনো। কিন্তু আমরা সুশীল সমাজ নিতেই শিখেছি, প্রকৃতিকে দিনই কিছু।

কিন্তু কিছু মানুষ তো আছেন! যারা অন্য সকলের থেকে একটু অন্যভাবে ভাবতে পারেন। প্রান্তিক মানুষদের চালডাল দিয়ে ফটো আপলোড করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়তো হতে জানেন না, কিন্তু নীরবে নিভৃতে সামগ্রিক উন্নয়নের কথা ভাবেন বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে।
ওই এলাকারই মৎস্যচাষী গোরাচাঁদ মিস্ত্রি বর্ষার মরশুমে ৪০ কেজি রুই মৃগেল বাটা সরপুটি গ্লাস কার্প, সিলভার কার্প মাছের আনুমানিক প্রায় আশি হাজার চারা গুপিয়ার জলে ছেড়ে দিলো আজ। যা আগামী দিনে অন্তত একটা বছর সমাজের ধনী-দরিদ্র্যের অর্থনৈতিক বৈষম্যের সমতা বজায় রাখবে খানিকটা। আর আমাদের মত সুশীল সমাজের খাদ্য যোগান দেওয়ার দায়িত্ব সামলাবে। সাময়িক সহযোগিতা করে অনেকেই! কিন্তু সূদুরপ্রসারী এ ধরনের অভিনব চিন্তা কিন্তু কোন শহুরে বুদ্ধিজীবীর মাথা থেকে নয়, গ্রামে বাস করা অল্প শিক্ষিতদের মাথা থেকেই বেরো টাই স্বাভাবিক। কারণ তাদের সমাজে বৃদ্ধাশ্রম নেই! বিদেশ গিয়ে পুঁথিগত নয়, পারিবারিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হন ছোটবেলা থেকে।

এ প্রসঙ্গে গোরাচাঁদ বাবু জানান “৪০ বছর আগে লোকের পুকুরে মাছ ধরার কাজ করতাম। বর্তমানে আমার আজ আট দশটা পুকুর। বর্তমান লকডাউনে অন্য পেশা থেকে সরে এসে মাছ ধরার পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। তাই আমার এই সামান্য সহযোগিতা যদি এত মানুষের উপকার হয়! তাহলে ভাববো প্রকৃতির ঋণ খানিকটা হলেও শোধ দিতে পেরেছি।”