অবতক খবর ::অনুপ কুমার মন্ডল-নদীয়া::নদীয়ার চাকদহ এর প্রিয়নগর এর কালীগঞ্জ বাজারে মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে বহু পুরোনো রাজ রাজের শ্বরী পূজা ও তদুপলক্ষ্যে মেলা ! এখন এই মেলা সাতদিন হলেও আগে কিন্তু এক মাস ধরে হতো, প্রিয় নগরের যাঁরা পুরোনো বাসিন্দা যেমন শ্রী নৃপেন্দ্র নাথ ঘোষ মহাশয় যাঁর পূর্ব পুরুষ রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র এর রাজ নায়েব ছিলেন বা জগবন্ধু সাধুখাঁ প্রিয় নগর সংলগ্ন শিকারপুরের বাসিন্দা ছিলেন বর্তমানে প্রিয় নগর এর বাসিন্দা কিংবা গৌর চন্দ্র প্রধান এর কথা অনুযায়ী -“ব্রিটিশ নির্মিত সুখসাগর জনপদ গঙ্গা বক্ষে বিলীন হবার পর সেখান কার বাসিন্দারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে ।রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের পিতা কালী বাবু মাত্র এক শত কুড়ি টাকায় গঙ্গার তীরে একটি মাঠ কিনে সোম -শুক্র বার করে হাট শুরু করেন। পরে তা গঞ্জে পরিণত হয় ।নাম দেওয়া হয় কালীগঞ্জ বাজার ! তখন ভাগীরথী গঙ্গা এই অঞ্চলে প্রবল, বিরহীর মদনগোপাল এই গঞ্জ দিয়েই কৃষ্ণ নগর যাতায়াত করে, ক্রমে দারুন এক জনপদ এ পরিণত হয় এই স্থান !রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র নিয়মিত যাওয়া আসা করতেন, তিনি একবার সপরিবারে কাশী বেড়াতে যান, সেখানে অন্নপূর্ণা মন্দির আর তাঁর পূজা তাঁকে মুগ্ধ করে,তার বেশ কিছু কাল পরে তাঁর মাতা কাশী যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করেন,রাজা সেই মতো আয়োজন ও করেছেন বাদ সাধলো মায়ের শরীর কি করবেন ভাবছেন, রাতে ঘুম হলো না, সকালে মাতা বললেন মা অন্নপূর্ণা তাঁকে স্বপ্নে বলেছেন যে কাশী যাওয়া র প্রয়োজন নেই কালীগঞ্জ সংলগ্ন গঙ্গা নদীর তীরে তিনি এই রূপে অবস্থান করছেন সেখানে কাশী অন্নপূর্ণা মন্দিরের পূজা রীতি মেনে মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে তিনি পূজা চান সেই মতো আয়োজন হয় !পূজা হয় সেই উপলক্ষে একমাস যাবৎ ধরে মেলা চলে, চলে নানা সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক অভিনয়, যাত্রা অভিনয়, রামযাত্রা, কবিগান, রামায়ণ গান, প্রভৃতি!সেই থেকে আজও চলছে তবে এখন পূজা আর তা উপলক্ষে একসপ্তাহ ধরে মেলা ছাড়াকিছুই হয় না, বিংশ শতাব্দী র সাতের দশকে তো যাত্রা অভিনয় প্রতিযোগিতা হতো, সে সময় চাকদহ এর এক বিখ্যাত অভিনেতা অমল কর খল নায়কের অভিনয় করতে গিয়ে তাঁর নিষ্ঠুরতা কে এত টাই ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন যে দর্শক রেগে ঢিল মেরে ছিল যা তিনি অভিনয়ের পুরস্কার হিসাবে নিয়ে গেছিলেন!
বিভূতি ভূষণ এর ইছামতি উপন্যাস অনুযায়ী -মাঘী পূর্ণিমা র মেলায় দূর দূরান্ত থেকেগরুর গাড়িতে আগত পুণ্যার্থী রা মন্দির এর পাশে বিরাট আমবাগানে তাঁবু গাঁৱত, সেখানে হত রান্না বান্না র আয়োজন !
মদন পুরের কিরণ ঘোষ মহাশয় এর কথায় ছোট বেলায় গরুর গাড়িতে যেতাম মেলায় সেখানে গঙ্গা থেকে জেলে দের কাছ থেকে সদ্য ধরা ইলিশ মাছ কিনে বনভোজন করতাম বিকেলে মেলা দেখে কোন আত্মীয় বাড়ি থেকে যেতাম পরের দিন বাড়িতে ফিরতাম !
সেসব দিন আর নেই, গঙ্গা সরে গেলো, সরকার দের আমবাগান বিক্রি হয়ে সেখানে বসতি গড়ে উঠল মেলার জায়গা কমে গেলো, উদ্যোক্তা রা উৎসাহ হারালো এই ভাবে ক্রমে মেলার জৌলুস হারালো !তা সত্ত্বেও আজও মাঘী পূর্ণিমা র ভোরে অগণিত পুণ্যার্থী রা গঙ্গা পুকুরে স্নান সেরে ভিখারি বিদায় দিয়ে পূজা করেন !মেলায় ভিড় জমে ব্যাপক !

মাতৃ রূপ টি এমন যে আধো নিদ্রায় শায়িত মহাদেব এর নাভিপদ্ম থেকে মহাশক্তি রাজরাজেশ্বরী উত্থিত হয়েছেন যাঁর বামে গঙ্গা দক্ষিণে যমুনা, একচালা ঠাকুর নিচের অংশে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব ও ইন্দ্রের মূর্তি, আলাদা করে ব্রহ্মা পুজো ও করা হয়!
লোক মুখে শোনা, কোনো এক বছর ভয়ঙ্কর আগুন বহু মানুষ সম্পদ পুড়িয়ে ছাই করে খুব ক্ষতিকরে সেই থেকে ব্রহ্মা ও পূজিত হন একই সাথে, এবছর সভাপতি কার্তিক বিশ্বাস, সম্পাদক সঞ্জয় দাস ও কোষাধক্য সুকুমার ঘোষ বাদ দিলে বাজার কমিটি ও মেলা কমিটি র সদস্য প্রায় একই,বাজারের দোকানদাড়, স্থানীয় মানুষ জন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যে অনুদান দেন তাঁর উদবৃত্ত অংশ দিয়ে মন্দির উন্নয়ন হয়, এ বছর যেমন নতুন শৌচাগার নির্মিত ও চালু হলো, এত পুরোনো ঐতিহ্য পূর্ণ একটা মন্দির সরকার উদ্যাগ নিলে আরো ভালো হয় !