ধর্ম অধর্মের শত্রু– জানতাম আগে। অধর্মকে ছেড়ে দিয়ে রাস্তা,ধর্ম এখন নিজেই ভাগে। ধর্মই এখন অধর্মের মিত্র।ধর্মগুরু ও রাজনীতির নেতা মিশে যায়,দেশ এখন বড়ই পবিত্র। শুনুন পবিত্র কথা।

ধর্ম / তমাল সাহা

এরা কোন ধর্মগুরু?
কোন ধর্মের কথা বলে?
ধর্ম পুঁজি করে নেমে পড়ে মাঠে,
ব্যবসা করে খায়।
নেতাদের সঙ্গে ঘর করে
যে যার স্বার্থে ঘুঁটি চেলে যায়।

ধর্মের চেয়েও বেশি গুরুত্ব পায় ভোট।
এই হাভাতে দেশে নয়া ইমালশান
ধর্মগুরু আর নেতা–ভয়ঙ্কর মহাজোট।
একজন দেখায় তো রামচন্দ্র,
অন্যজন পাল্টা ফেলে তাস-গুরুচাঁদ।
বলে, তুমি মনে করো নিজেকে বড় বাস্তুঘুঘু!
দেখোনি তো আমার কৌশলী ফাঁদ।

আমগাছে আম ফলে, জামগাছে জাম।
একজন অক্ষরধাম তো
অন্যজনের দক্ষিণেশ্বরী ইনাম।
কপালে তিলক লাল,বসন গেরুয়া,
তোমাকে কি ডরাই?
আমি যদি শূর্পনখা বোন হই, তুমি আমার দশানন ভাই।

মন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজো বলে কথা!
পুলিশ কর্তা খাটে,মনে হয় প্রভুভক্ত হাঁটে,
প্রসাদ হাতে পাহারাদার।
এ রাষ্ট্রে মান মর্যাদা আইন—
গেছে সব চুকে বুকে।
চুপ থাকো,কথা বলো না আর, খবরদার।

একজন হিন্দু তোষে তো,
অন্যজন পোষে মুসলিম।
আমরা থাকি ভয়ে
এই বুঝি লাগে দাঙ্গা,রক্ত হয় হিম।
মুখে ভাত নেই,দেশ জুড়ে অজস্র ধর্মপীঠ।
অহিংসার দেশ!
নীরব থাকি, দেয়ালে ঠেকে গেছে পিঠ।

উন্নয়ন হবে তো মানুষের,
প্রশ্ন কেন ওঠে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু!
সবই দেখে সংবিধান,
গণতন্ত্র কোঁচকায় ভুরু।
উন্নয়ন হবে তো মানুষের,
কেন ওঠে ধর্মবর্ণ জাতপাতের কথা।
ভোট এসেছে কাছে,
মাথায় বেড়ে ওঠে ক্ষমতার রোগ–
এ এক মারাত্মক গণতান্ত্রিক ব্যথা।

ধর্ম যায় বহুদূর,
যতদূর তুমি নিয়ে যাবে তাকে।
যতদূর জানি, ভোটবাজরাই ধর্মের ছবি
সবচেয়ে বেশি ভালো আঁকে।
ধর্ম সহস্রাব্দ প্রাচীন মসজিদ ভাঙে,
মাটিতে লুটায় ধ্বংসাবশেষ।
ধর্ম আকাশেও যায়—
স্কাইওয়াকে দেখি তার আশ্চর্য সমাবেশ।
বুক ফুলে ওঠে গর্বে,
সহজেই তুমি হেঁটে চলে যাবে মন্দির গর্ভে।
মিশন আশ্রম মঠের সে কী আনন্দ!
‘আমি পারিনি। ধর্ম রাজনীতি একাকার
করে দিয়েছে আমার প্রজন্ম!
কী আশ্চর্য!’ বলে ওঠেন বিবেকানন্দ।

ধর্ম সব পারে দেখিয়েছিলেন তিনি।
আমিই ধর্ম! বলে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ নেমে পড়েছিলেন কুরুক্ষেত্রে।
সব লেখা আছে মহাকাব‍্য মহাভারতে
কেমন চক্ষুষ্মান তুমি!
এখনো দেখোনি সেসব মুক্তনেত্রে!

তিনিও তো ঠাকুর ছিলেন– রবীন্দ্রনাথ।
বলেছিলেন,
যবনিকা ওঠাও!
আরও দেখিবে কত নব নব…

হায় ধর্ম, একি সুকঠোর দণ্ড তব!